জুলাই' আগস্ট' ১৪ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এর সাক্ষ্য দেয়ার পর একজন মুসলমানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। ওই নামাজ মুমিন বান্দা ও কুফুর শিরিকের মাঝে পার্থক্যকারী। ইসলাম ও কুফুরের মাঝে পার্র্থক্যকারী। যার ব্যাপারে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসা করা হবে। নামাজের জন্য নবীজি সা. জীবনের অন্তিম সময়ে অসিয়ত করে গেছেন। কোরআন শরিফে নামাজের পাবন্দি ও যতœবান ব্যক্তিদের জন্য অনেক ফজিলত, সুসংবাদ উল্লেখ করা হয়েছে। যা একজন মুসলমানের জন্য আমল করার প্রেরণা স্বরূপ। সুতরাং কোরআন ও হাদিসের ভাষায় নামাজের কিছু ফজিলত সম্পর্কিত সুসংবাদ তুলে ধরছি। আশা করি এর মাধ্যমে সবার মাঝে নামাজের প্রতি পাবন্দি ও আগ্রহ তৈরি হবে। ১. সকল আমলের মধ্যে সর্বোত্তম আমল নামাজ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, আমি একবার রাসুল সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তখন তিনি বললেন, সময়মত নামাজ আদায় করা। (বুখারি ও মুসলিম) ২. নামাজ বান্দা ও প্রভুর মাঝে বন্ধন ও সম্পর্ক স্বরূপ। রাসুল সা. ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায়; সে তখন তার প্রভুর সঙ্গে চুপিসারে কথা বলতে থাকে। (বুখারি) ৩. নামাজ দ্বীনের খুঁটি। রাসুল সা. ইরশাদ করেন, সকল বিষয়ের মূল হলো ইসলাম। ইসলামের খুঁটি হলো নামাজ। আর তার সফলতার চূড়া হলো জিহাদ। (তিরমিজি) ৪. নামাজ নূর স্বরূপ। রাসুল সা. ইরশাদ করেন নামাজ হলো নূর। (মুসলিম) ৫. নামাজ মুনাফেকি থেকে মুক্তির উপায়। রাসুল সা. বলেন, মুনাফিকদের উপর ফজর ও ইশার নামাজ অনেক কষ্টকর হয়ে থাকে। অথচ যদি তারা জানতো যে এর (ফজর ও ইশা) মাঝে কী পরিমাণ (সওয়াব ও প্রতিদান) রয়েছে তাহলে তারা হাটুতে ভর করে হলেও আসতো। (বুখারি ও মুসলিম) ৬. নামাজ জাহান্নাম থেক নিরাপত্তা ও মুক্তির মাধ্যম। রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি কখনোই জাহান্নামে যাবে না যে সূর্যোদয় এর পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামাজ আদায় করে। অর্থাৎ ফরজ ও আসর আদায় করে। (মুসলিম) ৭. নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। রাসুল সা. কে ইরশাদ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনার নিকট যে কিতাব প্রেরণ করা হয়েছে আপনি তা পাঠ করুন ও নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। ৮. নামাজ গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহে সাহায্যকারী। তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। ৯. জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা একাকি নামাজ আদায় করা থেকে উত্তম। রাসুল সা. ইরশাদ করেন, জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা একাকি নামাজ আদায় করা থেকে উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম) ১০. নামাজি ব্যক্তির জন্য ফেরেশতারা রহমত ও মাগফিরাত কামনা করে। রাসুল সা. বলেন, যতক্ষণ তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি তার নামাজের স্থানে বসে থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে (যতক্ষণ না তার ওজু ভাঙে)। তারা বলতে থাকে হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! তার উপর রহম করুন। (বুখারি ও মুসলিম) ১১. গুনাহ মাফের সুসংবাদ। রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি নমাজের জন্য অজু করে এবং অজু উত্তমরূপে পূর্ণ করে, অতঃপর ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং নামাজ আদায় করে জামাতের সাথে, আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন। (মুসলিম) ১২. শরীর গুনাহ থেকে পাক-সাফ হয়ে যায়। রাসুল সা. বলেন তোমরা কি মনে করো যে, তোমাদের কারও দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো প্রকার ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবিরা বললেন, না। তার শরীরে আর কোনো ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না। রাসুল সা. বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণও এরকমই। এগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তার অপরাধসমূহ মুছে দেন। (বুখারি ও মুসলিম) ১৩. জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্তুতের সুসংবাদ। রাসুল সা. বলেন যেই ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্তুত করে রাখেন। তার প্রত্যেকবারের জন্য যখনই সে সকালে বা সন্ধ্যায় (মসজিদে ) গমন করে। (বুখারি ও মুসলিম) ১৪. মসজিদে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি কদমে একটি গুনাহ মাফ করা হয় ও অপর কদমে তার মর্যাদা সমুন্নত করা হয়। রাসুল সা. ইরশাদ করনে, যে নিজে ঘরে পবিত্রতা অর্জন করলো আল্লাহর ঘরসমূহ থেকে কোনো এক ঘরের দিকে অগ্রসর হলো (মসজিদ) যাতে করে আল্লাহর নির্ধারিত ফরজসমূহ থেকে কোনো এক ফরজ আদায় করতে পারে (নামাজ) তার একটি কদমে একটি করে গুনাহ মাফ হবে। এবং আরেক কদমে জান্নাতে পদমর্যাদা উন্নীত করা হবে। (মুসলিম) ১৫. নামাজে আগে উপস্থিত হলে মহা প্রতিদানের সুসংবাদ। রাসুল সা. বলেন, যদি লোকেরা জানতো যে আজানের মাঝে ও (জামাতের) প্রথম কাতারের মাঝে কী (সওয়াব) আছে, আর লটারি ছাড়া এটা (ভাগ) না পেত তবে তারা এর জন্য লটারি দিত। আর যদি তারা জানতো, (জামাতে) আগে উপস্থিত হওয়ার মাঝে কী ফজিলত আছে তাহলে তারা প্রতিযোগিতা করতো। (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামে নারী পুরুষের
আর্থিক দায়িত্ব ও অধিকার
মুহাম্মদ মুহসিনুল হাসান এপ্রিল'১৪
বিগত ৮মার্চ পলিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিবসে ইসলাম বিরোধী তথাকথিত প্রগতিশীলরা যে কয়টি বিষয়ে অপপ্রচার চালায় তার একটি হলো ইসলামরে উত্তরাধিকার আইনে নারীকে কম সম্পদ দেয়া হয়েছে। বাস্তবতা কি তাই? নাকি ইসলাম নারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চত করার পাশাাশি আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিও পূর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চত করেছে। তা তুলে ধরার প্রয়োজনেই এ আলোচনা। আল্লাহ পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি হিসাব মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আবার মানুষকে নারী ও পুরুষ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। এরা একজন অপরজনের পরিপূরক। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন- তারা তোমাদের আচ্ছাদন আর তোমরা তাদের আচ্ছাদন। একজন অপর জনের ভালোবাসা ও দয়া মায়া লাভের মাধ্যম। প্রশান্তি লাভের উপায়। এ সম্পর্ক ও ভালোবাসা মানুষের প্রশান্তির জন্য এবং আল্লাহ কর্তৃক পৃথিবীতে মানুষের বংশ পরম্পরা অব্যাহত রাখার এক চিরন্তন ধারা। তাছাড়া আল্লাহ মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে পরিবার ও একাধিক পরিবারের সম্মিলনে গড়ে ওঠে সমাজ। মানুষ হিসেবে নারী পুরুষ সমান। নেক কাজ ও আমলের দিক দিয়েও সমান। প্রতিফল জান্নাত জাহান্নাম লাভের দিক দিয়েও সমান। একজন পুরুষ সুবহানাল্লাহ বললে যে সওয়াব পাবে, একজন নারীও সুবহানাল্লাহ বললে সে সওয়াবই পাবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- যে নেক কাজ করে চাই সে পুরুষ হোক কিংবা নারী, যদি সে মুমিন হয় অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো। মানুষ হিসেবে, প্রতিফল হিসেবে নারী পুরুষ সমান হলেও দায়িত্ব পালনে উভয়ে সমান নয়। তাছাড়া দৈহিক গঠনও তাদের একরকম নয়। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। একজন পুরুষ ইচ্ছা করলেই সন্তান ধারণ করতে পারে না। নারীকেই সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেননা তাকে এ কাজের উপযুক্ততা ও সক্ষমতা স্রষ্টার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। ফলে গর্ভধারণের ১০মাস ও পরবর্তী স্তনদানে সময় বাইরে যাওয়াসহ অনেক কাজই তার জন্য কষ্টসাধ্য ও সক্ষমতার বাইরে। ফলে এ সময় তার ও তার সন্তানের ভরণ পোষণসহ অন্যান্য ব্যয়ভার যদি তারই উপর ন্যস্ত করা হয় তাহলে তা তার উপর নিঃসন্দেহে জুলুম হবে। সুতরাং নারী পুরুষের মাঝে মানবাধিকারের সমতা ও ভালোমন্দ কাজের প্রতিফলের সমতা থাকলেও দায়িত্ব পালনে সমতা নেই বরং ভিন্নতা রয়েছে। আর দায়িত্বের ভিন্নতার কারণে অর্থনৈতিক অধিকার ভিন্ন হতে পারে। আরও একটি জানার বিষয় হলো, উত্তরাধিকার ব্যক্তির উত্তরঘটা বা দুনিয়া ত্যাগের পর তার উত্তরসূরিদের জন্য। তার জীবদ্দশায় তার সম্পদ তারই। সে তার সম্পদ থেকে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যে কোনো ধরনের খরচ করতে পারে। তেমনি ভাবে তার সম্পদ থেকে কাউকে যেকোনো পরিমাণ প্রদানও করতে পারে। তবে সন্তানদের কোনো কিছু দেয়ার ক্ষেত্রে রাসুল সা. সমতার শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন বুখারি শরিফের একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে, হযরত নুমান বিন বশীর রাযি. বলেন, একবার তার পিতা তাকে নিয়ে রাসুল সা. এর দরবারে গেলেন এবং বললেন, আমি আমার এ ছেলেটিকে একটি গোলাম দান করেছি। রাসুল সা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি কি তোমার সকল সন্তানকেই এমন দান করেছ? বশীর উত্তর দিলেন- না। তিনি তখন বললেন তাহলে এ গোলাম ফেরত নিয়ে নাও। এটাই স্বাভাবিক রীতি। তবে কোনো সন্তান যদি প্রতিবন্ধী হয় অথবা উপার্জন করতে সক্ষম না হয় তার জন্য পিতা আলাদাভাবে সম্পদ দিয়ে যেতে পারেন। তেমনিভাবে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তার পুত্র কন্যা মারা গেলে তাদের সন্তানদের জন্য তিনি আলাদাভাবে সম্পদ দিয়ে যেতে পারেন বা অসিয়ত করে যেতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ আলাদা করে দেয়া বা অসিয়ত করার শিক্ষাই ইসলাম দিয়েছে। সুতরাং এজন্য আইয়ুব খানের ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’ নামক কোরআন বিরোধী কোনো আইন প্রণয়নের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এবং মুসলমানদের নিন্দা ও ধিক্কারের পাত্র হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কোরআনের একটি আয়াত অবতরণের প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে জানা যায় যে রাসুল সা. নারীদের পিতার উত্তরাধিকার বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি জানার সাথে সাথেই এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিলেন। বুখারি ও মুসলিমের একটি হাদিস থেকে জানা যায় যে হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা সাদ ইবনুর রবী রাযি. এর স্ত্রী রাসুল সা. এর নিকট আরজ করলেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সাদ ইবনুর রবী উহুদের যুদ্ধে আপনার সাথে শরিক হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। এই দুটি তার মেয়ে। এদের চাচা সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। এদের জন্য কিছুই রাখেনি। অথচ সম্পদ ছাড়া এদের বিয়ে সম্ভব নয়। রাসুল সা. বললেন এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা ফায়সালা করবেন। এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরআনে আয়াত নাজিল হল- পুরুষদের জন্য তাদের পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের ত্যাজ্য সম্পদে অধিকার রয়েছে। আর নারীদের জন্যও তাদের পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের ত্যাজ্য সম্পদে অধিকার রয়েছে। তা কম হোক বা বেশি। নির্ধাতির একটি অংশ। (সুরা নিসা: আয়াত-৭) এ আয়াতের মাধ্যমে এ মূলনীতি পাওয়া গেল যে জন্মগত সম্পর্ক ও নিকটাত্মীয়তাই হলো মিরাস লাভের মূল ভিত্তি। এ দুটি সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের যেমনিভাবে সম্পদের অধিকার সাব্যস্ত হয় তেমনি ভাবে নারীদেরও সম্পদের অধিকার সাব্যস্ত হয়। এ অধিকার থেকে নারীদের বঞ্চিত করা যাবে না। অর্থনৈতিক দায়িত্ব আমরা এখন ইসলামি সমাজে অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনে নারী পুরুষের ক্ষেত্রগুলো দেখব। সাথে সাথে দায়িত্বের ভিন্নতা হিসেবে বাস্তব পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবো। ইসলামের বিধান অনুযায়ী একজন পুরুষকে যে সব অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয় ও যে সব ব্যয় নির্বাহ করতে হয় তা নিুরূপ। ১. নিজের ভরণ পোষণ। ২. সন্তান হিসেবে পিতা মাতার ভরণ পোষণ। ৩. স্বামী হিসেবে স্ত্রীর ভরণ পোষণ। ৪. পিতা হিসেবে সন্তানের ভরণ পোষণ। ৫. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দাদা-দাদী, ভাই বোনসহ নিকটাত্মীয়ের ভরণ পোষণ। এর মধ্যে ৫ম টি অপরিহার্য না হলেও প্রথম ৪টি অপরিহার্য ও অবশ্য পালনীয়। অপরদিকে একজন নারীর উপর তার স্বামী সন্তান পিতা মাতা ভাই বোনসহ কারো কোনো ব্যয়ভার নির্বাহের দায়-দায়িত্ব নেই। এমনকি তার নিজের ব্যয়ভার নির্বাহের দায়িত্বও তার উপর ন্যস্ত নয়। তার নিজের প্রয়োজনীয় ব্যয় ভারের দায়িত্ব শৈশবে (বিবাহের পূর্বে) পিতার উপর বিবাহের পর স্বামীর উপর ও পরবর্তীতে সন্তানদের উপর ন্যস্ত। সম্পদ প্রাপ্তির খাত এবার আমরা দেখব, পুরুষের উপর ৫ ধরনের মানুষের ব্যয়ভার ন্যস্ত করা হয়েছে। এখন সে কতভাবে বা কতগুলো খাত থেকে সম্পদ পায়। পুরুষ যে সব খাত থেকে সম্পদ পায় ১. পিতা হিসেবে পুত্র কন্যা থেকে। ২. দাদা হিসেবে পৌত্র পৌত্রী থেকে। ৩. পুত্র হিসেবে পিতা মাতা থেকে। ৪. পৌত্র বা প্রপৌত্র হিসেবে দাদা বা পরদাদা থেকে। ৫. ভাই হিসেবে ভাই বা বোন থেকে। ৬. স্বামী হিসেবে স্ত্রী থেকে। এছাড়া তার নিজস্ব অর্জিত সম্পদ থেকে যা আয় হয় তাও তার সম্পদ। এবার দেখার বিষয়, যে নারীর অর্থনৈতিক কোনো দায় দায়িত্ব নেই সে কোন কোন খাত থেকে সম্পদ পায়। নারীর সম্পদপ্রাপ্তির খাতগুলো নিুরূপ- ১. মা হিসেবে পুত্র কন্যা থেকে। ২. দাদী হিসেবে পৌত্র পৌত্রী থেকে। ৩. নানী হিসেবে দৌহিত্র দৌহিত্রী থেকে। ৪. কন্যা হিসেবে পিতা মাতা থেকে। ৫. পৌত্রী বা প্রপৌত্রী হিসেবে দাদা পরদাদা থেকে। ৬. বোন হিসেবে ভাই থেকে। ৭. স্ত্রী হিসেবে স্বামী থেকে। এছাড়া পুরুষের মতো তারও রয়েছে নিজস্ব অর্জিত সম্পদ। এতদভিন্ন তার জন্য বিয়ের সময় মোহর হিসেবে সম্পদ প্রাপ্তির অতিরিক্ত একটি খাত রয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে পুরুষ ৫টি আর্থিক দায়িত্ব পালন করে যে সব খাত থেকে সম্পদ পায় একজন নারী কোনোরূপ আর্থিক দায় দায়িত্ব পালন ব্যতিরেকেই পুরুষের চেয়ে বেশি খাত থেকে সম্পদ পায়। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম উত্তরাধিকারে নারীদের সম্পদ প্রাপ্তির বিষয়টি পুরুষের তুলনায় কোনো অংশেই কম গুরুত্ব দেয়নি বরং অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সুতরাং ভেবে দেখার বিষয় যে, পাঁচ ধরনের লোকের ভরণ পোষণসহ আর্থিক ব্যয়ভার যার উপর ন্যস্ত তাকে নারীর তুলনায় বেশি বা দিগুণ দেয়া নারীদের প্রতি অবিচার? নাকি নারীদেরকে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকেও অধিক দেয়া হলো? উল্লেখ্য যে নারীরা পিতা মাতা সন্তান বা নিজের জন্য ব্যয় করবে না বা করতে পারবে না তা কিন্তু নয়। বরং বিষয়টি হলো নারী এ সব কাজে ব্যয় না করলে দুনিয়া বা আখেরাতে তাকে শাস্তি বা তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হবে না। অপরদিকে পুরুষ যদি এসব আর্থিক দায়িত্ব পালন না করে, যেমন যদি স্ত্রীর ভরণ পোষণ না দেয় তাহলে দুনিয়ার আদালতে, মানুষের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ফলে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে যার উপর পাঁচ ধরনের লোকের ব্যয়ভার অর্পিত তাকে তার তুলনায় দিগুণ দেয়া কোনো ক্রমেই অন্যায় বা অধিকার খর্ব করা নয়, যার উপর কোনো দায় দায়িত্ব নেই- এমনকি নিজের ব্যয়ভারও যার নিজের উপর নয়। এখন যদি কোনো নারী অধিকারের ধ্বজাধারী আল্লাহর দেয়া এ বিধান পরিবর্তন করে সমতা স্থাপনের নতুন নিয়ম প্রবর্তন করতে চায়, তাহলে কোনো ক্রমেই সে নারীর এবং সমাজের কল্যাণকামী নয়। একজনের উপর অর্থনৈতিক ব্যয়ভার ন্যস্ত করবেন আর যার উপর কোনো দায়িত্ব নেই তাকেও সমান সম্পদ দেবেন, এটা কোনো ইনসাফপূর্ণ বণ্টন নয়। এবং তা সমাজের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বরং এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। সাথে সাথে ইসলামের সুন্দর পারিবারিক কাঠামো ভাঙতে সহায়তা করবে। পাশ্চাত্যে কোনো পারিবারিক কাঠামো নেই। মুসলমানদের পারিবারিক সম্প্রীতি দেখে তারা হিংসা করে জ্বলে মরে। তারা মুসলমানদের পারিবারিক কাঠোমো ধ্বংস করতে চায়। আর মুসলিম নামধারী তাদের কতক দোসর তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দেয়া কোনো মুসলমানের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নারী পুরুষের সম্পদে সমতার আইন হলে পুরুষেরা নারীদের মোহর, ভরণ পোষণ ও তালাকের ইদ্দতকালীন সময়ের খরচের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এবং দিতে অস্বীকার করবে। সুতরাং এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। অন্যান্য ধর্মের উত্তারাধিকার আইনের সাথে তুলনা অন্যান্য ধর্র্মের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় অন্য যে কোনো ধর্মের তুলনায় ইসলাম নারীদের সম্পদ ও অধিকার বেশি দিয়েছে। হিন্দু আইন ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে ৬ ধরনের ব্যক্তি কখনো বঞ্চিত হয় না। তারা হলো ১. পুত্র ২. কন্যা ৩. পিতা ৪. মাতা ৫. স্বামী ৬. স্ত্রী। এ ৬ জনের মধ্যে ৩জন হলো নারী। অথচ হিন্দু ধর্মে নিন্মোক্ত ৬ ব্যক্তি না থাকলে কন্যারা মীরাস পায়, এরা হলো ১. পুত্র ২. পৌত্র ৩. প্রপৌত্র ৪. বিধবা স্ত্রী ৫. পুত্রের বিধবা স্ত্রী ৬. পৌত্রের বিধবা স্ত্রী। এ ৬জন জীবিত থাকলে কন্যা সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়। আবার কন্যারা বন্ধা, নিঃসন্তান, বিধবা ও শুধু কন্যা সন্তান জন্মদান কারিনী হলেও সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়। এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো, কন্যা সন্তান যখন সন্তানহীন বা বিধবা হয় তখন অসহায় হয়। সেই অসহায় অবস্থায় যখন সম্পদের প্রয়োজন বেশি তখন সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়। আরও একটি পার্থক্য হলো, হিন্দু আইনে পুরুষেরা সম্পদের নিরষ্কুশ মালিক হলেও নারীরা নিরংকুশ মালিক হয় না। বরং তার জীবনিস্বত্ব বা কেবল ভোগ দখলের অধিকারী হয়। খৃষ্ট আইন অপরদিকে বর্তমান খৃষ্ট আইনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তি অসিয়ত বা উইল। ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত বা উইল করে যাবে এবং সে অনুযায়ী ওয়ারিসগণ সম্পদ পাবে। এ বিধানের সবচে মন্দ দিক হলো, ব্যক্তি ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে সম্পদ দিয়ে যেতে পারে আবার বঞ্চিতও করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি তার সকল সন্তান ও আত্মীয় স্বজনকে বঞ্চিত করে সম্পূর্ণ অনাত্মীয়ের নামে উইল করে যায়। যেখানে বিশ্বে প্রতি বছর হাজার হাজার লোক না খেয়ে মারা যায়- সে ক্ষেত্রে কুকুর বিড়ালকে উইল করে সম্পদ দিয়ে যাওয়া মানবতার অপমান ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামে অসিয়ত এর মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের সম্পদ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা ইসলামে অসিয়ত কেবল মাত্র এক চতুর্থাংশের উপর কার্যকর হয়। ইসলামের আইন ও বর্তমান সমাজ নারী আন্দোলনের কর্মীদের উচিত ইসলামের আইনের সংস্কারের দাবি না তুলে সমাজে ইসলামি আইন না থাকার ফলে যে সংকট ও অসুবিধা আছে তা দূরিভূত করা। প্রয়োজন ইসলামের বিধানসমূহ বাস্তবায়ন। আবশ্যক নারীদের ইসলাম স্বীকৃত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা। না হয় সমস্যা দূরিভূত হওয়ার পরিবর্তে আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। সমাজে নারীদের সমস্যা ও অনিয়মসমূহ ১. মোহর আদায় না করা, আদায় করা প্রয়োজন একথাও মনে না করা। এবং পাত্রের সামর্থ্যরে অতিরিক্ত মহর ধার্য করে একথা বলা এটাতো ধরার জন্য, দেয়ার জন্য নয়। ২. যৌতুক প্রদান ও গ্রহণ। উপহারের নামে যৌতুক ধনীদের কৌলিন্য হলেও দরিদ্রের জন্য অভিশাপ। ৩. মহিলাদের পিতার সম্পদ থেকে অংশ নেয়া খারাপ মনে করা। অনেক সময় দেখা যায় পিতার সম্পদ থেকে কন্যা সম্পদ নিতে চাইলে তার ভাইদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। নানা রকম কটূক্তি ও আপত্তিকর কথাও তাদের শুনতে হয়। সচেতন মুসলমানদের করণীয় সমাজ থেকে উপরোক্ত কুসংস্কারগুলো দূর করতে সচেতন মুসলমানদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যৌতুক যে ভিক্ষার চেয়ে খারাপ ইসলামে তা যে অন্যায় ও অবৈধ, এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে মোহর নারীর শরিয়তস্বীকৃত একটি অধিকার। নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটি উপায়। এটা শুধু ধরার জন্য নয়। পরিশোধের নিয়তের উপর নির্ভর করে বিবাহ শুদ্ধ হওয়া ও সম্পর্ক বৈধ হওয়া না হওয়া। এটা পরিশোধ করতে হয় না এ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে বার্ষিক নাইয়র করানো ও শাড়ি প্রদান বোনের সম্পদের বিনিময় হিসেবে নয়; ভাই বোনের সম্পর্ক ও বন্ধনের জন্যই প্রদান করা উচিত। নারীর সকল স্বীকৃত ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা সমাজকে শান্তি সুখের ও ভালোবাসার সমাজে পরিণত করতে পারি। সুতরাং আজকের শ্লোগান হোক নারীর সমান অধিকার নয়, চাই ন্যায্য অধিকারের নিশ্চয়তা।
০ ০০০০০০০০০০ ০
নারী আন্দোলন ও বাস্তবতা মারজানা আহমাদ
মার্চ'১৪ পুুরুষের বিপরীত শব্দ নারী। এ বৈপরীত্ব শুধু শব্দে নয়, দেহ-মনে, চাল-চলনে, কাজে-কর্মে, কণ্ঠে ও আচার-আচরণে। পুরুষ কঠোর ও কঠিন, নারী কোমল ও লাজুক। শাব্দিক, শারীরিক ও মানসিক ভিন্নতার পাশাপাশি তাদের উভয়ের কর্মক্ষেত্রও ভিন্ন। পুরুষ রাত-দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জীবিকার তাগিদে ছুটে বেড়ায় দিক-দিগন্তে। স্ত্রী মনের মাধুরী দিয়ে ঘর সাজায়, রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়। পুরুষের কর্মক্ষেত্র বাইরে, নারীর মূল কর্মক্ষেত্র ভেতরে। সে ঘরের ফুলদানী। সংসার নারীর রাজ্য। প্রধান কর্মক্ষেত্র। কিন্তু আজ তা অস্বীকার করে আমাদের শান্তির নীড় ঘরকে শূন্য করে নারীদেরকে ঘরের বাইরে নেয়ার আন্দোলন বেশ জোরেশোরেই চলছে। চলছে বিভিন্ন লেখালেখি। ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য সংগঠন গজিয়ে উঠছে। বোঝানো হচ্ছে, ঘরের কাজ অপমানজনক, আর বাইরের কাজ সম্মানজনক; ইসলামই হচ্ছে নারীর অগ্রগতিতে একমাত্র বাধা। এখন ভাবনার বিষয় হলো, আসলেই কী তারা অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, নাকি পশ্চাদপদতার দিকে? আসলেই কী তারা নারীর অধিকার চায় নাকি অন্যকিছু? তারা যা চায় তা দিয়ে কী কখনো নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে? প্রথমে জানতে হবে, তারা নারী অধিকার বলতে কী বুঝাতে চায়। অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা ইজ্জতের নিরাপত্তার অধিকার, নাকি নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিশ্চিত করা, বিয়ের আগেই সন্তানের মা হওয়া, ইয়াবাসহ মাদক সেবন, লিভটুগেদারের অধিকার? বাংলাদেশের ইতিহাসে গণবিস্ফোরণ সৃষ্টিকারী হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিলের গণসমাবেশে একুশে টিভির সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন যখন আহত হয়েছিলো তখন নারী অধিকারের মায়াকান্নাকারীরা রাজপথ গরম করা শ্লোগান দিয়েছিলো। হেফাজতের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করতে উঠেপড়ে লেগে ছিলো। যদিও সে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চার-পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাবেশকে দুই-তিনহাজার মানুষের জমায়েত বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ ছিলো। আলেম-ওলামার সমাবেশে সাংবাদিকতার নিয়ম লঙ্ঘন করে এমন ড্রেস পরে গিয়েছিলো যা সভ্যসমাজ মেনে নিতে পারে না। কিন্তু এরই কিছুদিন পর, একটি ছাত্রী সংগঠনের বিশজন কর্মীকে যখন অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো এবং মিডিয়াতে এ খবরও প্রচার হয়, তাদের একজন গর্ভবতী; তখন তাদের নারীর প্রতি দরদ উধাও হয়ে গিয়েছিলো! সাংবাদিক সাহেবার শরীর দেখে পুলকিত হওয়া যায় বলে পদলেহী কলামিস্টরা তখন ছিলেন সরব, কিন্তু পর্দা করা নারীদের বেলায় তারা ছিলেন নীরব। দেড় শতাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণকারী পান্না মাস্টার কী নারী জাতিকে লাঞ্চিত করেনি? কোনো নারী আন্দোলনকারীকে তো দেখিনি পান্না মাস্টারের বিচার চেয়ে জোরালো মানববন্ধন করতে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বোরকা পড়ার অপরাধে বহিষ্কার করা হলো, তখন কী অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়নি? ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের সামনে যখন সিমকি ইমাম নামের এক মহিলা আইনজীবীকে চুল ধরে টেনে হিঁচরে কিল-ঘুষি, লাথি মারছিলো, তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোও রেহাই পাচ্ছিলো না তাদের নগ্ন থাবা থেকে। তখন নারী অধিকার আন্দোলনকারীরা ছিলো নীরব। কারণ, প্রথম স্থানে দাড়ি-টুপিওলাদেরকে আক্রমণকারী হিসেবে চালিয়ে দেয়ার একটা সুযোগ ছিলো। কিন্তু, মিডিয়ায় যেভাবে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, এতে দাড়ি-টুপিওলাদের ঘাড়ে দোষ চাপাবার সুযোগ নেই। তাই, আক্রমণকারী কে বা কারা তা দেখার সময় তাদের নেই। ভাগ্যিস সিমকি ইমামের ওপর আক্রমণকারীরা যুবলীগ গডফাদার মিল্কী হত্যাকারীদের মতো বুদ্ধি করে পাঞ্জাবি পড়ে আসেনি। তাহলে তো হেফাজতি বলে চালিয়ে দেয়া যেতো। এখানে আক্রমণকারীরা তাদের দলের, চিন্তার লোক। তাই সাত খুন মাফ। আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট, তাদের আন্দোলন মূলত অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা কিংবা শিক্ষার অধিকারের জন্য নয়; বরং কুমারী মেয়েদের মা হওয়ার স¦াধীনতা দেয়ার অধিকার। ঐশীর মতো বহু বয়ফ্রেন্ড রাখার অধিকার। দুটাকার পণ্যের বিজ্ঞাপনে আবেদনময়ী পোশাকে নিজেদের উপস্থাপনা ও বিলবোর্ড দখলের অধিকার? পত্রিকার পাতায় নগ্ন ছবি ছাপানোর অধিকার? পৃথিবীর মুসলিম নারীদের জন্য আন্দোলন করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কিছুই নেই। ইসলাম তাদেরকে সব অধিকার চৌদ্দশোতো বছর আগেই দিয়ে দিয়েছে। অন্ন-বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসা, বাসস্থানের অধিকার ইসলাম সেকালেই নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নিরাপত্তার অধিকার। সর্বক্ষেত্রে নারীর অবাধ বিচরণ চাইছেন নিরাপত্তা কী দিতে পেরেছেন? ভারতের মতো উন্নত (তাদের দৃষ্টিতে) দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা তো রেহাই দিতে পারেনি গণধর্ষণ থেকে। হিন্দু নারীদের অধিকারের জন্য রাজা রামমোহন রায় আন্দোলন করেন। তার প্রেক্ষিতে ১৮২৯ সালে সতিদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়। মুসলিম নারীদেরকে তাদের স্বামীর কবরে জ্যান্ত কবর দেয়ার কোনো বিধান ছিলো না; তাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রয়োজন হয়নি। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ চালু করার আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু এরও প্রায় সারে বারোশো বছর আগে নারী অধিকারের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা আমাদের প্রিয়নবি সা. নিজে বিধবাকে বিবাহ করে বিধবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মুসলিম নারীদের জন্য বিধবাবিবাহ আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন হয়নি। তাই, কথিত নারী আন্দোলন যদি খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা কিংবা চিকিৎসার অধিকারের পক্ষে হতো, তবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য তা সুখবর হলেও সেই আন্দোলনে আমরা মুসলিম নারীদের জন্য কোনো সুখবর ছিলো না। কারণ, তারা যে-অধিকারের আন্দোলন করছেন তা আমরা চৌদ্দশো বছর আগে থেকেই ভোগ করে আসছি। আন্দোলনকারীদেরকে বলতেই হয়, আপনারা তো আন্দোলন করছেন আধুনিকতার আড়ালে আমাদেরকে লালসার শিকারে পরিণত করতে। আপনাদের আন্দোলন কী কখনো আমাদেরকে গর্ভধারণের কষ্ট থেকে রেহাই দিতে পারবে? আপনাদের এ আন্দোলন পৃথিবীকে কিছুই দিতে পারে না। এর প্রমাণ, যে-ইউরোপ থেকে আপনারা এ অধিকার আন্দোলনের চেতনা আমদানি করেছেন সে দেশগুলোর নারীদের কী অবস্থা! আমেরিকায় প্রতিবছর দশ লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণীর অবৈধভাবে গর্ভবতি হচ্ছে। এ আন্দোলন অধিকারের নামে লিভটুগেদার ভোগের পণ্য বানিয়ে দেয়ার। এতে পাওয়ার কিছুই নেই বরং হারাতে হবে সব কিছুই। এজন্যে, আজ ইউরোপীয় নারীরাই শান্তির সন্ধানে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করছে। ফরাসি সঙ্গীতশিল্পী দিয়ামস, আমেরিকার চিকিৎসক ডা. ইউ এস অরিভিয়ার মতো হাজারো নারী ইসলামের দিকেই ছুটছে। বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা টেলিগ্রাফ বলছে, অষ্ট্রেলিয়ার জনবহুল শহর সিডনিতে সপ্তাহে অন্তত দুজন ইসলাম গ্রহণ করছে। এদের অধিকাংশই নারী। নিউইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক সংস্করণের ১০ ফেব্র“য়ারি সংখ্যায় বলা হয়েছে, ফ্রান্সে নব্যমুসলমানের সংখ্যা দুই লাখে পৌঁছেছে। যার বেশিরভাগ নারী। শুধু একালেই নয় বরং প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা আরো একশো বছর আগের ইউরোপীয় নারীর জীবন চিত্রায়িত করতে গিয়ে লিখেছিলেনÑ‘হায়, আমাদের নারীরা যদি মুসলিম দেশগুলোর মতো হতো! সেসব দেশের নারীদের সতীত্ব আছে, আছে সুনাম, পবিত্রতা। তাদের কন্যারাও পরম তৃপ্তির জীবনযাপন করে।’ ইস্টার্ন মেইল, ১০ মে ১৯০১। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন জ্ঞানী ও সম্ভ্রান্ত নারী। যাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার আগেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে ইসলা মগ্রহণ করেছিলেন। পৃথিবীর শুরু থেকেই অসহায় নারীরাই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে। অধিকার বঞ্চিতরাই ছুটেছে ইসলামের পানে। আবার ইসলামেই ফিরে আসতে হবে আমাদেরকে। কথিত ধ্বজাধারী নারী অধিকার চাই না। আল্লাহর দেয়া চিরন্তন অধিকার চাই। আদর্শ মা হওয়াই নারীর প্রধান কর্তব্য। শিক্ষার অধিকার পেতে চাই, চাই নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষাঙ্গন। পুরুষের সঙ্গে ঠেলাঠেলি নয়; চাই দীনের সীমায় থেকে যেসব নারী চাকরি করবেন তাদের জন্য কাজ, কর্মক্ষেত্র ও নারীবান্ধব যানবাহন। এক কথায় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান আর শিক্ষার অধিকার অবশ্যই চাই। তবে, সবকিছুর আগে চাই জীবন ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা।
সন্তানকে দ্বীন শেখানোর উদ্দেশ্য অনেক সময় আমরা আমাদের আদরের সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করে দিই অথচ জানা থাকে না কেন আমরা আমাদের কলিজার টুকরাকে মাদরাসায় পাঠালাম? আমরা কি শুধু অন্যদের দেখাদেখি পাঠিয়েছি, না কি কোনো আলেমের সম্মান ও নাম-যশে প্রভাবিত হয়ে এমন বাহবা কুড়ানোর বাসনায় তাকে মাদরাসায় ভর্তি করেছি। অথবা সে খুব অকর্মণ্য, পরীক্ষার ফলাফল ভালো না। সে প্রাথমিক শ্রেণির পরীক্ষাগুলোতেই ভালো করতে পারেনি, কাজেই চিন্তা-ভাবনা করে তাকে মাদরাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো। না কি এ কারণে যে, সে ঘরে খুব জ্বালাতন করত, বা বাইরের নষ্ট পরিবেশের প্রভাবে তার স্বভাব বিগড়ে গিয়েছিল। সুতরাং চিন্তা-ভাবনা করে দেখা গেল যে, এই দুশ্চিন্তাকে ঘরে রাখার পরিবর্তে মাদরাসায় পাঠিয়ে দেয়াই ভালো। শুরুতেই জানা প্রয়োজন, মাদরাসায় সন্তান ভর্তি করার ক্ষেত্রে অভিভাবকের উদ্দেশ্য কী হওয়া দরকার? একজন তালিবুল ইলমের কোন নিয়তে মাদরাসায় ভর্তি হওয়া উচিত এবং পড়ার সময় তার কী নিয়ত থাকা প্রয়োজন? সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করার উদ্দেশ্য হতে হবে, সে যেন আম্বিয়া আ.-গণের উত্তরাধিকারী হতে পারে। আলেমে রব্বানি হতে পারে। ফকিহ হয়ে আল্লাহর বাতলানো পথে চলতে পারে। তাহলে শুধু যে বাচ্চার দুনিয়া-আখেরাত উজ্জ্বল হবে, তার কারণে শুধু আমাদের ও খান্দানের (কিছুসংখ্যক লোকের) দুনিয়া-আখেরাত আলোকোজ্জ্বল হবে তাই নয়, বরং এই সন্তান শত কোটি মানুষের জীবনে আখেরাতের পথে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের এক বিশাল মাধ্যম হবে। আম্বিয়া আ.-গণের মিরাস আমাদের কি জানা আছে যে, আম্বিয়া আ.-গণ কেন দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছিলেন? তাদের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার-ই বা কী? ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, রাজত্ব-ক্ষমতা ও সাহসিকতা-বীরত্ব? না! তাদের মিরাস হলো ইলম। ইরশাদে নববী স.Ñ ‘ওলামায়ে কেরাম হলেন, আম্বিয়া আ.-গণের উত্তরাধিকারী। আর আম্বিয়া আ.-গণ দিনার বা দিরহাম (টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ) রেখে যাননি। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। সুতরাং যে ইলম অর্জন করল সে তার সমৃদ্ধ (পূর্ণাঙ্গ) একটি অংশ পেয়ে গেল।’ আর একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইলম হলো আমলের জন্য। সুতরাং একথা বললে ভুল হবে না যে, আম্বিয়া আ.-গণের মিরাস হলো ইলম ও আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘আমি (বিশ্ব মানবতার জন্য) শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। ‘আমি সচ্চরিত্রকে পূর্ণাঙ্গতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ সুতরাং এখন আমাদের যে বিষয়টি অন্তরে গেঁথে নেয়া উচিত, তা হলোÑ আমরা আমাদের সন্তানদের এই উদ্দেশ্যে মাদরাসায় পাঠাব যে, সে আম্বিয়া আ.-গণের মিরাসের বিশাল অংশের অর্জনকারী হবে। এই প্রচেষ্টায় সে যদি সফল হয়, তবে সে এক অনন্য মানুষে পরিণত হবে। সে আল্লাহভীরু হয়ে যাবে। সে আরেফ (আল্লাহ তাআলার পরিচয় লাভকারী) হবে। সে আল্লাহর আশেক হবে। দ্বীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ দা’ঈ হবে। কারণ, নবী সা.-এর উত্তরাধিকারী সমস্ত প্রশংসনীয় গুণের আধার এবং উন্নত চরিত্রের আদর্শ মানব হয়। মা-বাবার দোয়া হলো সাফল্যের বুনিয়াদ। যত মনীষী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সাফল্যের মাধ্যম হিসেবে ভালো মাদরাসা দান করেছিলেন। স্নেহশীল শিক্ষকবৃন্দ জুটিয়েছিলেন। দরদি মাশায়েখ নসিব করেছিলেন। কিন্তু এসব কিছুর নেপথ্যে যা রূহ হিসেবে কাজ করেছিল তা হলো মা-বাবার দোয়া। মা-বাবার দোয়া হলো সকল সাফল্যের বুনিয়াদ। সন্তানের জন্য নিজের কলিজা প্রসারিত করে দেয়া উচিত। বিনীতভাবে খুব রোনাজারি করে দোয়া করা উচিত। যদি আপনার দোয়া কবুল হয়েই যায়, (ইনশাআল্লাহ দোয়া কবুল হবেই) তাহলে আপনার খবরই থাকবে না যে, আপনার আদরের সন্তানের ফয়েজ (কল্যাণের ধারা) দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কত মানুষের উপকার করবেন। তার উসিলায় কত মানুষ জাহান্নামের ভয়াবহ অগ্নি থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় পাবে। কিয়ামত দিবসে আপনার মর্যাদার আসন কত উন্নত হবে! রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যখন আলেম ও আবেদ পুলসিরাতের ওপর একত্রে জমা হবে তখন আবেদকে বলা হবে, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার কৃত ইবাদতের স্বাদ গ্রহণ কর। পক্ষান্তরে আলেমকে বলা হবে, এখানে থেমে যাও! যাদের জন্য ইচ্ছা সুপারিশ কর। কারণ, তুমি যার জন্যই সুপারিশ করবে তার জন্যই আজ তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। সুতরাং তখন সে নবীদের স্থানে হয়ে যাবে। (মুসনাদুল ফেরদৌস) ভাবুন! এই সময়টা মাতা-পিতার জন্য কী পরিমাণ গর্বের হবে! চিন্তা করে দেখুন! শায়খুল হাদিস মাওলানা যাকারিয়া রহ.-এর দ্বীনি কিতাবাদি দ্বারা কত লোক উপকৃত হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে! হযরত থানভী রহ.-এর ইলমের দ্বারা কত লোক ফায়দা পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে ফায়দা পাবে! ইমাম বুখারি রহ.-এর ইলম আজ পর্যন্ত কী পরিমাণ কল্যাণসাধন করেছে! এই সকল হযরতের উসীলায় যখন মানুষের বিরাট দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদের মাতা-পিতার মাথা কতখানি উঁচু হবে! উৎসাহ প্রদান সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার সতর্ক পরিচর্যা দোয়া উৎসাহ থাকতে হবে। পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে তাকে মানবিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী মিয়া নদভি রহ.-এর ছাত্রজীবনের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার মা তাকে পত্র লিখেন, যার সারাংশ নিম্নরূপ : আলী, যদি আমার ১০০ টি সন্তান থাকত, তাহলে তাদের সকলকেই আমি এই দ্বীনি শিক্ষা-ই দিতাম। এখন তো তুমি একা আছ। আশা করি আল্লাহ তায়ালা আমার নেক নিয়তের প্রতিদান এভাবে দিবেন যে, তোমার মাধ্যমেই আমার মনোবাসনা পূরণ হবে। ইহকালে ও পরকালে আমার মুখ উজ্জ্বল হবে এবং তোমাকে আমার গর্বিত নেক-সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে পারব। মায়ের আকুলতা ছিল। আশা-আকাক্সক্ষা ছিল। দোয়া ছিল। দিকনির্দেশনা ছিল। চেষ্টা ছিল। পাহারাদারী ছিল। ফিকির ছিল। যার ফলাফল এই হলো যে, হযরত আলী মিয়া নদভী রহ. একা শত শত নয় হাজার আলেমের সমান কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন । একটি সংগঠন অথবা একটি প্রতিষ্ঠানও এত কাজ করতে পারেনি যত কাজ একজন ব্যক্তি হয়ে তিনি করে গেছেন। এটা ছিল মায়ের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বেরিয়ে আসা দোয়ার ফল। কী খাবে ? কোথা থেকে খাবে ? সকলের প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন এই যে, বিশেষভাবে মাতা-পিতার প্রতি আমার আহ্বান হলো, অনুগ্রহপূর্বক আপনারা আপনাদের যেহেন থেকে এ জাতীয় চিন্তা-ভাবনা দূর করে দিন যে, আমাদের সন্তান কোত্থেকে খাবে? কী উপার্জন করবে? ঘরবাড়ি তৈরি করবে কীভাবে? এসব ধারণা মন থেকে বের করে দিয়ে এই বিষয়টিকে আল্লাহ তায়ালার দায়িত্বে সোপর্দ করে দিন। আপনি কারো কথাতেই প্রভাবিত হবেন না। রুজি-রুটি তো আল্লাহ তায়ালার দায়িত্বে। কিছু লোক তো সারাক্ষণ মৌলবিদের রুজির ফিকিরে থাকে। তারা বলে বেড়ায় যে, পৃথিবীতে অনেক মাদরাসা রয়েছে, আর এতে অগণিত ছাত্ররা পড়ালেখা করছে। এত ছাত্র ফারেগ হওয়ার পরে তারা খাবে কোত্থেকে? এদের উপায় কী হবে? মূলত এটা কোনো কল্যাণকামিতা নয়, বরং এটা সহমর্মিতার চাদরে মোড়ানো গোপন শত্র“তা। এ জাতীয় লোকেরা দ্বীনি মাদরাসার অস্তিত্বই চায় না; বরং তারা মাদরাসাকে বন্ধ দেখতে চায়। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখুন যে, আল্লাহ তায়ালা তো আপনাকে অনেক ধন-সম্পদ দান করেছেন। আপনার আলেম ওলামাদের ব্যাপারে কল্যাণ-কামনা, সহমর্মিতা ও ফিকিরও রয়েছে। তাহলে আপনি অন্তত একজন লোকের দায়িত্ব নিয়ে নিন। দেখবেন, তাদের থেকে সম্মতিসূচক কোনো জবাব পাবেন না। আসলে আলেম ওলামাদের ব্যাপারে এদের ন্যূনতম দরদও নেই। এরা মাদরাসা ও আলেম-ওলামাদের শত্র“। দুনিয়াতে এখন এমন বাতাস প্রবলভাবে বইতে শুরু করেছে। তাদের অভিপ্রায় হলো, যে কোনো উপায়ে হোক এই মাদরাসাগুলো শেষ হয়ে যাক। আলেম-ওলামারা খতম হয়ে যাক। দ্বীন-ই খতম হয়ে যাবে মাদরাসা ও ওলামায়ে কেরাম খতম হয়ে গেলে তো দ্বীন-ই খতম হয়ে যাবে। কারণ, মাদরাসা খতম হলে ইলম খতম হয়ে যাবে। ইলম খতম হলে উলামায়ে কেরাম খতম হয়ে যাবে। আর ইলম ও ওলামা খতম হলে তো দ্বীন-ই খতম হয়ে যাবে। এজন্যই ইসলাম বিরোধীদের সকল মেহনত দ্বীনি মাদরাসাগুলো খতম করার কাজেই ব্যয় হচ্ছে। দুর্ভাগ্য যে, আমাদের কিছু ভাইয়েরাও এই ষড়যন্ত্রের জালে পা দিয়ে মাদরাসা ধ্বংসের চক্রান্তে মেতে উঠেছে এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হযরত মাওলানা মুফতি শফি রহ. বলতেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এই মৌলবিদের রুজি-রুটির ফিকির ছেড়ে দাও। তারাই তাদের রুজি রুটি কামাই করে নিবে। সুতরাং তাদের চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। কোনো মৌলবি সাহেব আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে আত্মহত্যা করেছে আমাকে এমন কোনো উদাহরণ দেখাও। অপর দিকে অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারী, মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত দিতে পারি, যারা আত্মহত্যা করেছে। নিজের অবস্থার ওপর হতাশ হয়ে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। অনেকেই এমন আছে যারা চাকুরি নামক সোনার হরিণের পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে জুতোর তলা ক্ষয় করে ফেলেছে; কিন্তু চাকুরি তার ভাগ্যে জুটেনি। পক্ষান্তরে এমন একজন মৌলবিও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যে তার অবস্থায় হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছে। অতএব, এমন ভ্রান্ত চিন্তা-ভাবনা অন্তর থেকে বের করে দিন। এ সব-ই হলো শয়তানি চিন্তা-ভাবনা। এক-অদ্বিতীয় আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা ও মালিকানায় সকল কিছুর ভাণ্ডার রয়েছে। সন্তান যদি বড় হয়ে ইলম ও আমলের গুণে আল্লাহওয়ালা হয়ে যেতে পারে, তাহলেই কামিয়াবি। আর এটা স্পষ্ট, যে আল্লাহ তায়ালার জন্য হয়ে যায় আল্লাহ তায়ালা-ই তার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করে দেন। ‘যে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় আল্লাহ তায়ালাও তার জন্য হয়ে যান।’ ‘আল্লাহ তায়ালার বিধানসমূহের হেফাজত কর, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে হেফাজত করবেন।’ আমার নিজের কথা আপনাদের সমীপে আবেদন করছিলাম যে, সন্তানের ইলমি এবং দ্বীনি ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য মাতা-পিতার পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে দোয়া করা উচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং আমাদের উদাসীনতা মাসূমা সাদিয়া বিনতে ওবায়েদ
কিছু কিছু আমল এমন আছে, যা আদায় করা খুব সহজ, কিন্তু খেয়াল না করার কারণে ওইসব আমলের ফজিলত থেকে আমরা বঞ্চিত হই। যেমন মিসওয়াক করা। আমাদের আশেপাশে কিছু পরিবার আছে যারা এই সুন্নতের ওপর আমল করেন। মিসওয়াক সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে এবং এতে দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক ফায়দা আছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে এই আশঙ্কা না হলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম (অর্থাৎ মিসওয়াক করা অপরিহার্য করে দিতাম)। (মুসলিম) আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, জিবরিল আ. যখনই আমার নিকট আসতেন আমাকে মিসওয়াকের তাকিদ করতেন। এমনকি আমার আশঙ্কা হতে লাগলো যে, অত্যাধিক মিসওয়াকের কারণে আমি নিজের মাড়ি না ছিলে ফেলি। (মুসনাদে আহমাদ) আরেক হাদিসে আছে, বান্দা যখন মিসওয়াক করে নামাজের জন্য দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়িয়ে যান এবং মনোযোগের সাথে তার তিলাওয়াত শুনতে থাকেন। এরপর তার খুবই নিকটবর্তী হন এমনকি তার মুখের ওপর নিজের মুখ রাখেন। ফলে কুরআনে পাকের শব্দ নামাজির ভিতর থেকে বের হয়ে সোজা ফেরেশতার পেটের ভেতর চলে যায় এবং এইভাবে সে ফেরেশতাদের নিকট প্রিয় হয়ে যায়। অতএব, কুরআনে কারিমের তিলাওয়াতের জন্য নিজেদের মুখ পরিষ্কার রাখ, অর্থাৎ মিসওয়াকের ইহতেমাম কর। (বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ) আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, মিসওয়াক করে দুই রাকাত নামাজ মিসওয়াক ব্যতীত সত্তর রাকাত নামাজ থেকে উত্তম। (বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ) আরও বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করলাম। চিন্তাশীলদের জন্য একটি হাদিসই যথেষ্ট। দ্বিতীয় আরেকটি আমল আজানের উত্তর দেওয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদিস শরিফে এর অনেক বড় ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। অথচ আমরা যখন একসাথে বসে গল্প-গুজব শুরু করি তখন হাসাহাসির মাঝে কখন যে আজান হয়ে যায় সেদিকে খেয়ালও থাকে না। অথচ দেখুন হাদিস শরিফে কতবড় ফজিলত বর্ণিত হয়েছেÑ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সা. কে ইরশাদ করতে শুনেছেন, যখন মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শোন তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও সেরূপ বল, অতপর আমার প্রতি দুরূদ পড়। যে আমার প্রতি একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘উসিলা’র দোআ কর। ‘উসিলা’ জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা, যা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে শুধু একজনকেই দেওয়া হবে। আমি আশা করি, সেই বান্দা আমিই হব। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘উসিলা’র দোআ করবে সে আমার শাফায়াতের হকদার হবে।(সহিহ মুসলিম) অন্য হাদিসে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, মুয়াজ্জিনগণ তো আজর ও সওয়াবের হিসেবে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়েছেন (এমন কোনো আমল আছে কি যার দ্বারা আমরাও মুয়াজ্জিনের মতো ফজিলত হাসিল করতে পারি?) রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করলেন, তোমরাও ওই বাক্যগুলো বল যেগুলো মুয়াজ্জিন বলে, এরপর আজানের জওয়াব শেষ করে দুআ কর। তোমার দুআ কবুল করা হবে। (আবু দাউদ) এ রকম আরেকটি সহজ আমল কুরআনে কারিমের তিলাওয়াত। আমাদের অনেকেরই নিয়মিত তিলাওয়াত হয় না। এক্ষেত্রে সাংসারিক ঝামেলার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝেও যদি আমরা নিয়মিত তিলাওয়াত করে যেতে পারি তাহলে আমাদের সওয়াবও হবে বহুগুণ বেশি। আবু মুসা আশআরি রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন কুরআন শরিফ পাঠ করে তার উদাহরণ যেন কমলা লেবু, যা খোশবুদার এবং সুস্বাদু। আর যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ যেন খেজুর, যার খোশবু নেই তবে স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ যেন সুগন্ধি ফুল যাতে সুঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ যেন মাকাল ফল, যাতে ঘ্রাণও নেই স্বাদও তিক্ত। (মুসলিম) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বিনিময়ে দশটি নেকি দান করা হবে। আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মিম এক হরফ, বরং আলিফ এক হরফ, লাম এক হরফ এবং মিম এক হরফ। (তিরমিজি) কুরআনে কারিমের তিলাওয়াতের ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার ফজিলত এবং সুওয়াব অন্য সব আমল থেকে বেশি। কুরআন তো আমার মাহবুবের কালাম, রাববুল আলামিনের কথা। মানুষ তার প্রিয়জনের চিঠি কত মনোযোগ সহকারে পড়ে। প্রতিটি অক্ষরে কী গভীর স্বাদই না অনুভব করে। তাহলে মহামান্য রাববুল আলামিনের কালাম কতই না আগ্রহ ও ভালোবাসার সাথে পাঠ করা উচিত। বুজুর্গানে দ্বীনের ঘটনাবলী পাঠ করলে জানা যায়, তারা কত বেশি তিলাওয়াত করতেন। কিন্তু আমরা দুনিয়া নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে গেছি যে, প্রতিদিন অল্প অল্প তিলাওয়াত করতেও ভুলে যাই। আরেকটি ভুল আমরা করি, যা সত্যিই পরিতাপের সাথে বলতে হয়, তা হচ্ছে নামাজে গাফলতি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি ঠিক, কিন্তু আউয়াল ওয়াক্তের দিকে খেয়াল করি না। অনেক পরিবারে দেখা যায়, দুপুরের রান্নাবান্না শুরু হয় জোহরের আজানের সময়। রান্না শেষ হতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। অনেক সময় তো আসরের ওয়াক্তের কাছাকাছি হয়ে যায়। কাজের সময় পরিবর্তনের মাধ্যমে এই উদাসীনতা দূর করা সম্ভব। নামাজের খুশু-খুজুর প্রতিও খেয়াল রাখা চাই। আবু কাতাদাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, নিকৃষ্ট চোর ওই ব্যক্তি, যে নামাজের মধ্য হতে চুরি করে। সাহাবা রা. আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! নামাজে কিভাবে চুরি করে? ইরশাদ করলেন, রুকু সেজদা উত্তমরূপে আদায় করে না। তো এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, প্রতিদিন আমাদের কত আমলের সুযোগ আছে, কিন্তু অবহেলা করে ছেড়ে দিচ্ছি। আর যেগুলো আদায় করছি, চিন্তা করা উচিত, কতটুকু যতেœর সাথে আদায় করছি। আল্লাহ পাক অমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। এবার অন্য একটি দিক সম্পর্কে বলি। তা হচ্ছে, খেয়াল না করার কারণে আমরা খুব সহজেই অন্যকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। তা-ই জবানের বিষয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এই তো সেদিন আমাদের মাদরাসার এক সহপাঠি আমার কাছে ফোন করলো। অনেক দিন তার সাথে যোগাযোগ নেই। হঠাৎ তার কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে গেলাম। প্রথমে চিনতে পারিনি। তার কণ্ঠ কিছুটা ভারাক্রান্ত ছিল। কারণ কিছুদিন আগে তার শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। জন্মের পরপরই মারা গেছে। তার সম্পর্কে একজনের কাছে শুনেছিলাম তার অবহেলার কারণে বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে। তাকে সবাই ডাক্তারের কাছে নিতে চাইলে সে যেতে চায়নি। জোর করে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তখন সময় পার হয়ে গেছে, যার কারণে বাচ্চাটি আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে অভিমান করে বললো, ‘আপু হসপিটালে থাকাকালীন আমার আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবী অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছে। তারা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি এটাও বলেছে যে, আরো আগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে বাচ্চাটিকে বাঁচানো যেত। তাদের কথায় বুঝতে পারলাম, আমার ত্র“টির কারণেই এমনটি হয়েছে!’ আমি তাকে কিছু বুঝাতে চাইলাম। সে বললো, আপু এই দীর্ঘ নয় মাস যে কষ্ট করেছি গর্ভধারণের কষ্ট, প্রসবের কষ্ট, আমার সন্তানের জন্য আমার চেয়ে বেশি টান আর কার হতে পারে? আমি অসতর্কভাবে চলাফেরা করিনি, গর্ভাবস্থায় কয়েকবার মেডিক্যাল চেকআপ করেছি এবং সেদিন কারও আমাকে জোর করে হসপিটালে নিতে হয়নি। অথচ সবার এক কথা, আরো আগে ...! এখন আমি আমার অন্তরে কোরআনের এ আয়াত বদ্ধমূল করে নিয়েছি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘ তোমার প্রতিপালক সৃষ্টি করেন যা চান ও যা পছন্দ করেন, আর এ ব্যাপারে অন্যদের কোনো এখতিয়ার নেই। আল্লাহ তাদের শিরক থেকে মুক্ত ও পবিত্র।’ (সুরা কাসাস : ৬৮) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেÑ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিত তোমাদের কোনো ইচ্ছা নেই, আর তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত তোমরা কোনো ইচ্ছা করতেও পার না। (সুরা দাহর : ৩০) অন্য জায়গায় ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা, অতপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতপর তোমাদের বের করেন শিশুরূপে, অতপর তোমরা যৌবনে পদার্পন কর, অতপর বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের কারো এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে, তোমরা যাতে অনুধাবন কর তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেন। যখন তিনি কোনো কাজের আদেশ করেন তখন একথা বলেন, ‘হও’ তখন তা হয়ে যায়।’ আল্লাহ তায়ালা এতভাবে বলার পরও আমরা কেন তাকদির নিয়ে প্রশ্ন তুলি। মৃত্যু তো এক চরম সত্য, যা নির্ধারিত সময়ে আসবেই। যতবড় ডাক্তার হোক যত চেষ্টাই করা হোক এক মিনিটের হায়াত বাড়ানোর সাধ্য তো কারো নেই। এক হাদিসে আছে যে, আল্লাহ তাআলা মাখলুকের ভাগ্য লিখে রেখেছেন জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে, তখন তাঁর আরশ পানির ওপর ছিল। (সহিহ মুসলিম) আজ আমাদের অবস্থা হলো, কোনো একটা সংবাদের সত্য মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করে তিল থেকে তাল বানিয়ে প্রচার করতে থাকি এবং একসাথে বসে গিবত-শেকায়েত ও অনর্থক কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ি। কুরআনে মুমিনদের গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত।’ অর্থাৎ এমন কথা, যার সাথে ধর্মীয় ও দুনিয়াবি কোনো উপকার জড়িত নেই; বরং ক্ষতি। আর হাদিসের ভাষায়ও মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি তরক করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এসব অনর্থক বিষয়াদি পরিত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।