রমজানের শ্রেষ্ঠতম আমল ইতিকাফ
কামরুল হাসান রাহমানী
জুলাই, আগস্ট'১৪
ইতিকাফ একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সুনির্ধারিত পন্থায় মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত ইতিকাফ করেছেন। পরবর্তীতে তাঁর সাহাবিগণ এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন। সে হিসেবে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
ইতিকাফের ব্যাপারে আমাদের সমাজে মৌলিকভাবে তিনটি ত্র“টি পরিলক্ষিত হয়। এক. ইবাদতটিকে খুবই হালকা ভাবে দেখা হয়। দুই. ভুল ভাবে পালন করা হয়। তিন. অত্যন্ত কঠিন ভাবে পালন করা হয়।
খুবই হালকা ভাবে দেখা হয়নবীজি সা. আজীবন রমজানে ইতিকাফ করেছেন। তিনি নবী ছিলেন, ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধানও। তাই খুব সহজেই অনুমেয় যে তিনি সীমাহীন ব্যস্ত মানুষ ছিলেন। কিন্তু রমজান মাসে সব ব্যস্ততা উপেক্ষা করে ইবাদত ও ইতিকাফে সময় অতিবাহিত করতেন। অথচ আজকাল আমাদের সমাজের অবস্থা হলো আমরা ধরেই নিয়েছি, কোনো একজন দরিদ্র মানুষকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে মসজিদের কোনায় বসিয়ে দিয়েই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে ফেললাম। ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। আসল কথা হলো, ইতিকাফের গুরুত্ব উপলদ্ধি করতেই আমরা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে এই ইবাদত নিয়ে এক ধরনের খামখেয়ালীতে মেতে উঠছি। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হতে। সত্বর তওবা করতে হবে। আর তওবা হলো- সমাজের সর্বস্তরের লোকদের নিয়ে অধিক সংখ্যক লোকজনসহ ইতিকাফে বসে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা। আর যদি বরাবরের মতোই ইতিকাফ থেকে দূরে থাকি তাহলে মুখে যতোই তওবা করিনা কেন সে তওবা আল্লাহর দরবাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভুল ভাবে পালন করা হয়
ভুল ভাবে পালনের অর্থ হলো, এটা একটা ইবাদত। আর ইবাদতের প্রথম এবং প্রধান শর্তই হলো ইবাদতকারির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততার উপস্থিতি। অর্থাৎ কাজটিকে প্রত্যেক ব্যক্তি আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আদায় করবে। এক্ষেত্রে এই বিষয়টি দুঃখজনক ভাবে অনুপস্থিত। লোকদের ধারণা, ইতিকাফ হলো বৃদ্ধ-বেকার লোকদের জন্য। এ জন্য সমাজের তরুণ বা যুবক শ্রেণিকে ইতিকাফে বসতে দেখা যায় না। তদুপরি বৃদ্ধদেরও খুব যে একটা পাওয়া যায় তাও নয়। এক কথায় বলা যায়, এটাকে সকলের জন্য পালনীয় ইবাদত বলে ভাবা হয় না। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকা চাই তা ফরজ হোক বা সুন্নত- প্রত্যেক ব্যক্তি মনে করে কাজটি আমার করা দরকার। ব্যতিক্রম শুধু এই ইতিকাফ। এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তা-ভাবনা অনেকটা এমনÑ ‘আমি এ সমাজের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, ইতিকাফ আমার জন্য নয়।’ এই চিন্তা-ভাবনা মারাত্মক ভুল ও ক্ষতিকর, এ থেকে আমাদের সত্বর তওবা করতে হবে।
ইবাদতটিকে খুব কঠিন ভাবে পালন করা হয়এককথায় বলতে গেলে এ সমাজের লোকদের ভাবনাÑ ‘ইতিকাফকারিকে অবশ্যই অন্ধ, বোবা ও বধির হতে হবে।’ যদি এমন কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে একজন ভালো মানুষকে অবশ্যই অন্ধ, বোবা ও বধির সাজতে হবে। সে কিছু দেখতে পারবে না, কিছু বলতে পারবে না, কিছু শুনতে পারবে না। সারাক্ষণ মসজিদের এক কোনায় পড়ে থাকবে। শত প্রয়োজনীয় কথাও মুখে বলা যাবে না, ইশারা ইঙ্গিতে কাজ সারতে হবে। অথচ ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। এটা হচ্ছে দ্বীন-শরিয়ত না জানার ভয়াবহ পরিণতি। নবীজি সা. বলেছেন- ‘দ্বীন হলো সহজ জিনিস, কিন্তু কেউ যদি দ্বীনকে কঠিন করতে চায় দ্বীন তার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।’ এই হাদিসের বাস্তব নমুনা হলো আমাদের সমাজের ইতিকাফ।
ইতিকাফের সারকথা হচ্ছে মসজিদে অবস্থান করা। শরিয়ত নির্ধারিত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া। বাকি মসজিদে সে কী করবে বা কী করতে পারবে? এর উত্তর হচ্ছে বৈধ যে কোনো কাজই করতে পারবে। বিনা ওজরে ইতিকাফকারী যদি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে তার ইতিকাফ বাতিল বলে গণ্য হবে। যদি শরীরের অংশ বিশেষ বের করে, তাহলেও কোনো অসুবিধা হবে না। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ইতিকাফ অবস্থায় মাথা বের করে দিতেন। মা আয়েশা রা. নিজ কক্ষে বসেই রাসুলুল্লাহর মাথা ধুয়ে সিঁথি করে দিতেন। প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন, অজু, পানাহার, পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি কাজের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে বের হওয়া জায়েয। আর যদি উল্লিখিত বিষয়সমূহ মসজিদের ভিতরে থেকেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় তাহলে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। ইতিকাফ যদি এমন মসজিদে হয়, যেখানে জুমার নামাজ হয় না, তাহলে জুমার নামাজের জন্য জামে মসজিদে গমন করা ওয়াজিব। বিশেষ প্রয়োজন যেমন গোসল না করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এমতাবস্থায় অজুর সময়ের মধ্যেই সংক্ষেপে গোসল সেরে নেবে।
ওয়াজিব নয় এমন ইবাদত যেমন জানাযায় অংশ গ্রহণ, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া ইত্যাদির উদ্দেশ্যে বের হতে পারবে না। ইতিকাফকারী সব ধরনের ইবাদতই করতে পারবে এবং করতে হবে। যেমনÑ নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া, ইসতেগফার, সালামের উত্তর দেয়া, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, ফতোওয়া প্রদান, ইলম শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি সবই তার জন্য জায়েয। এমনকি পণ্য মসজিদে না এনে কোনো ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে তাও করতে পারবে।
ইতিকাফকারীদের জন্য পর্দা টাঙ্গিয়ে লোকজন থেকে নিজকে আড়াল করে নেয়া মুস্তাহাব। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করেছেন একটি তুর্কি তাঁবুতে যার প্রবেশ দ্বারে ছিল একটি পাটি। [সহিহ মুসলিম]
ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদের ভেতরে পানাহার, ঘুমানো, গোসল, সাজগোজ, সুগন্ধী ব্যবহার, পরিবার-পরিজনের সাথে কথপোকথন ইত্যাদি সবই বৈধ। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সীমাতিরিক্ত না হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইতিকাফস্থলে তার পতিœগণের সাক্ষাৎ ও কথপোকথন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেসব কাজ তবে অতিরিক্ত কথা, ঘুম, অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করা, মানুষের সাথে বেশি বেশি মেলামেশা ইত্যাদি ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যহত করে। তাই এ সব থেকে ইতিকাফকারী বিরত থাকবে।
ইতিকাফের তাৎপর্য
রমজানের শেষ দশ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। রাসুলুল্লাহ সা. এই দশ দিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। বস্তুজগতের বাঁধন ছিড়ে তাকওয়ামুখি হৃদয় অর্জন ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা-প্রচেষ্টায় লিপ্ত হতেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় রমজানের শেষ দশ দিন আবশ্যই ইতিকাফে নিমগ্ন হতেন। কারণ এই দশক হলো তাকওয়া ও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের শেষ সুযোগ। সে হিসেবে বর্ণনাতীত শ্রম-সাধনায় ডুবে যেতেন এই দিনগুলোতে।
হাদিসে এসেছে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, ‘রমজান মাসের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতো বেশি ইবাদত করেছেন যা অন্য সময় করেননি।’ [মুসলিম শরিফ]
তিনি আরো বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে রাতযাপন করতেন। তারপর সেহরি খেয়ে বিশ্রামে যেতেন।
আয়েশা রা. থেকে অন্য হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাজানের শেষ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন। এমনকি লুঙ্গি বেঁধে নিতেন।’ [বুখারি ও মুসলিম]
রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সা. ইতিকাফ করতেন নিয়মিত। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও, অন্যসব কাজকর্ম পেছনে ফেলে একনিষ্ঠ হয়ে শেষ দশ দিন মসজিদে কাটাতেন। আর এর একটি বড় কারণ ছিল শবেকদরের ফজিলত অর্জন করা।
ইতিকাফের উপকারীতা ইতিকাফের মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। অহেতুক কথা, কাজ ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সংযত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে। ইতিকাফ অবস্থায় লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা সহজ হয়। ইতিকাফের মাধ্যমে মসজিদের সাথে সম্পর্ক তাজা হয় ও মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে ওঠে। ইতিকাফকারী দুনিয়াবী ব্যস্ততা থেকে দূরে অবস্থান করে ইবদাত বন্দেগির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে একদির ইতিকাফ করে, আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দকের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন। যার পরিমাণ আসমান ও জমিন থেকেও বেশি। অন্য বর্ণনায় এসেছে- রমজানের দশ দিনের ইতিকাফ এক হজ ও এক ওমরাহ সমতুল্য। [মাজমাউজ জাওয়ায়েদ]
এক হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ইতিকাফকারিরা মসজিদসমূহের পেরেক স্বরূপ। ফেরেশতারা তাদের সঙ্গী হয়, তাদের মসজিদে না পেলে ফেরেশতারা তাদের তালাশ করে, তারা অসুস্থ হলে তাদের সেবা-শুশ্রƒষায় হাজির হয় এবং প্রয়োজনগ্রস্ত হলে তাদের সাহায্য করে।
নবীজী সা. আরও বলেন, ইতিকাফকারী তার গোনাহ থেকেই ইতিকাফ করে।
হযরত আয়িশা রা. বলেন, নবীজী সা. সর্বদা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এবং তার ইন্তেকালের পর তার বিবিগণও ইতিকাফ করতে থাকেন। (বুখারি, মুসলিম)
ইতিকাফে প্রবেশ
ইতিকাফকারীর জন্য বিশ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতিকাফস্থলে প্রবেশ করতে হয়। কেননা ইতিকাফের একটি বড় লক্ষ্য লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান, যা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর একুশতম রাতও এরই অন্তর্ভুক্ত। তবে ফজরের নামাজান্তেও ইতিকাফে প্রবেশ করা যেতে পারে। এ মর্মে আয়শা রা. থেকে একটি হাদিস বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
ইতিকাফ থেকে বের হওয়া
ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ থেকে বেরিয়ে পড়া বৈধ। তবে সালাফদের কারও কারও মতে ঈদের রাত মসজিদে অবস্থান করে মসজিদ থেকেই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করা উত্তম। ইতিকাফের আরও প্রয়োজনীয় খুটিনাটি বিষয় রয়েছে, সেসব কোনো হক্কানি আলেম থেকে জেনে নেবেন। আল্লাহ তায়ালা এই ইবাদতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সঠিক নিয়মে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দেশজুড়ে গুমআতঙ্ক স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কোথায়?
জহির উদ্দিন বাবর
জুন'১৪
‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ এই দাবিটি ১৯৭৩ সালে উত্থাপন করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক নির্মল সেন। সেই সময়ের ভয়াবহ চিত্রের কথা তাঁর এই বাক্যটি দ্বারাই কিছুটা অনুভব করা যায়। ৪১ বছর পরে এসে আজও বাংলাদেশে ভয়াবহ সেই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। চারদিকে চলছে গুম-খুন আর অপহরণের মহোৎসব। আপনি-আমি কে কখন কোথা থেকে গুম-খুনের শিকার হয়ে যাবো এর কোনো গ্যারান্টি নেই। হয়ত আমার-আপনার স্বজনরা সৌভাগ্যবান হলে লাশ পেয়ে সান্ত¦না পাবে; আর হতভাগা হলে সেই সুযোগটুকুও তারা পাবে না। যেমন পায়নি ইলিয়াস আলী-চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য মানুষের স্বজনরা। আপনি যে কেউই হোন না কেন ঘর থেকে বেরিয়ে যে নিরাপদে পুনরায় ঘরে ফিরবেন এর ন্যূনতম গ্যারান্টিটুকুও আজ বাংলাদেশে নেই। চারদিকে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অরাজকতা ও অনাচারের ভয়াবহ চিত্র প্রতিদিনই আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি গণমাধ্যমের কল্যাণে। কিন্তু এর পরিণতি কী; কোথায় যাচ্ছে দেশ। তা নিয়ে কারো মধ্যে যেন কোনো ভাবনানেই। এ বিষয়ে যাদের উদ্বিগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কথা তাদের যেন কিছুই হয়নি। দিব্যি আরামেই কাটছে তাদের দিনকাল। জনগণের প্রতি একটি সরকার বা প্রশাসনের দায়বদ্ধতা না থাকলে যা হওয়ার তাই হ"েছ।
গত এক-দেড় বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভয়াবহ ঝড় বইয়ে গেছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার ঘৃণ্য মহড়ায় কত প্রাণ যে বিনাশ হয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার যে নির্লজ্জ উন্মাদনা আমরা এই সময়ে দেখেছি তাতে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা লজ্জায় হেট হয়ে যায়। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ জাতির কপালে এমন নেতৃত্ব জুটেছে
যারা নিজেদের স্বার্থ আর অভিলাস পূর্ণ করা ছাড়া আর কিছুই দেখে না। বরাবরই তাদের এই স্বার্থান্ধতা আর ক্ষমতার মদমত্ততার বলি হয়েছে সাধারণ মানুষ। নজিরবিহীন রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপ্টার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নামমাত্র একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো রকম একটি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। যেকোনো
কারণেই হোক রাজনৈতিক অস্থিরতাও সাময়িকভাবে কেটে যায়। কিন্তু এ জাতির কপালে বুঝি স্বস্তি আর সয় না! গত কয়েক মাস ধরে সারা দেশে ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে গুম-খুন আর অপহরণের ঘটনা। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় ওঠে আসছে ভয়াবহ চিত্র। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র এবং একজন বিশিষ্ট আইনজীবীসহ ৭ জন লোক দিনেদুপুরে অপহৃত হওয়া এবং দুদিন পর শীতলক্ষ্যায় তাদের লাশ ভেসে ওঠার পর থেকে দেশবাসীর মনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এখানেই থেমে থাকেনি এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে অপহরণ আর খুনের নৃশংস ও লোমহর্ষক ঘটনা। এ অবস্থায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ১৬ কোটি মানুষের।
ভয়াবহ চিত্র, উদ্বেগজনক খতিয়ান
আইন ও শালিস কেন্দ্র্র (আসক) এর প্রদত্ত তথ্য মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ২৬৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের পর ছেড়ে দেয়া হয় ২৪ জনকে। পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় ১৪ জনকে। কিন্তু ১৮৭ জনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজই মেলেনি। সংস্থাটির দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সালে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। ২০১৩ সালে ৭২ জন বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার এবং এর মধ্যে ৫৩ জন গুম হয়; মাত্র পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা বলছে, দেশের অপরাধ পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে অপহরণ বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। ২০১১ সালে দেশে অপহরণ ছিল ৭৯২ জন, ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৫০;
আর ২০১৩ সালে হয়েছে ৮৭৯। ২০১৪ সালের তিন মাসেই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১৯৬টি। গত তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রেই জানা যায়, জানুয়ারি মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৭০টি, দস্যুতা ৯৯টি, খুন ৪০৩টি, দাঙ্গা ৯টি, নারী ও শিশু নির্যাতন
১১২৭টি, অপহরণ ৬২টি, পুলিশ আক্রান্তে ঘটনা ১০৪টি, চুরির ঘটনা ৬৩৩টি-সব মিলিয়ে সারা দেশে জানুয়ারি মাসেই মামলা হয় ১৩ হাজার ১৮৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে ডাকাতির ঘটনা ৪৮, খুন ৩২৮, দাঙ্গা ৪, নারী ও শিশু নির্যাতন ১ হাজার ১৪৬, অপহরণ ৫৫, পুলিশ আক্রান্ত ৪৮, চুরি ৬১৫- সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৯৫৫। মার্চে ডাকাতি ৪৮, দস্যুতা ১০৫, খুন ৩৬১, দাঙ্গা ৬, নারী ও শিশু নির্যাতন ১ হাজার ৬৬৯, অপহরণ ৭৯, পুলিশ আক্রান্ত ৫৭, চুরি ৫৬৯-সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২২১।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও জনসংযোগ শাখা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের কাছে দুই হাজার ৬৪১ জনকে অপহরণের অভিযোগ আসে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৭ জনকে র্যাব উদ্ধার করে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ বলছে, বাংলাদেশে গত চার মাসে ৮৭টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- এবং ১৯ জনকে গুমের ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এসব মানুষদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারগুলোর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এর পর থেকে তারা গুম হয়েছেন অথবা তাদের লাশ পাওয়া গেছে।
কালো পোশাকের ভয়াল মূর্তি
সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির মধ্যে নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। সেনা, নৌ ও পুলিশ বাহিনী থেকে বাছাই করে চৌকস সদস্যদের নিয়ে ২০০৪ সালে তৎকালীন জোট সরকার গঠন করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব বাহিনী। সন্ত্রাস নির্মূলে এই বাহিনীটি অনেক ক্ষেত্রে
প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ র্যাব স্বাধীনতা পদকও পেয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার সিঁড়ি হিসেবে যখন থেকে র্যাবকে ব্যবহার করা শুরু করে তখন থেকেই বিতর্কিত হতে থাকে এই বাহিনীটি। এর আগেও বিভিন্ন সময় র্যাবের বিরুদ্ধে ছোটখাট অভিযোগ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের উ"চ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর এই বাহিনীর সুনাম সব ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, একে একে বেরিয়ে আসছে তাদের অনেক অপকর্মের কথা। এতদিন মূর্তিমান আতঙ্ক র্যাবের ভয়ে যারা মুখ খুলতে সাহস পাননি তারা নতুন করে অভিযোগের তীর তাদের দিকে ছুড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র্যাবের যে তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ ওঠেছে তাদের একজন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর জামাতা। শ্বশুরের আস্কারায় ওই র্যাব কর্মকর্তা অনেক অন্যায়-অপকর্ম করেছেন বলে এখন একে একে বেরিয়ে আসছে। ভয়াল কালো পোশাকের নিচে কুৎসিত যে চিত্র তা পুরোটাই ফাঁস হয়ে গেছে জনগণের সামনে। এখন বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে এই বাহিনী বিলুপ্তির দাবি উঠছে। যে বিএনপি সরকার র্যাব গঠন করেছিল তারাই এখন র্যাব বিলুপ্তির জন্য সবচেয়ে বেশি সরব। তাদের বক্তব্য হলো, যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাত জনগণের রক্তে রঞ্জিত সে বাহিনীর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সরকার এই দাবিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিতে চা"েছ। তাদের বক্তব্য হলো, একটি বাহিনীর কিছু সদস্য অনৈতিক কাজে জড়িয়ে গেলে পুরো বাহিনী বিলুপ্ত করার দাবি যৌক্তিক নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা জোর গলায় চাপা পেটা"েছন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের কিছু সদস্যও অনৈতিক কাজে জড়িত। তাহলে কি এই দুই বাহিনীও বিলুপ্তির দাবি করবে বিরোধী দল? তাদের যুক্তি সুন্দর, মাথায় ব্যথা থাকলে মাথা কেটে ফেলে দেয়া সমাধান নয়। তবে তাদের এটাও মনে রাখা দরকার, শরীরের কোনো অঙ্গে পচন ধরলে তা কেটে ফেলে দিয়েই পুরো শরীর রক্ষা করতে হয়। আর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে র্যাবের তুলনা চলে না। কারণ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক; আর পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিবেদিত। উভয়টিই একটি দেশের স্থায়ী বাহিনী। কিন্তু র্যাব কোনো স্বতন্ত্র বা স্থায়ী বাহিনী নয়। বিশেষ প্রয়োজনে এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল; এখন প্রয়োজন অনুভব না করলে বা এর দ্বারা
ক্ষতির আশঙ্কা করলে তা বিলুপ্তি করতে আপত্তি কোথায়? নির্বিকার সরকার
সারা দেশে গুম-খুনের এই মহোৎসব সরকারের মধ্যে যে কোনো ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছে তা বলা যাবে না। জনগণের টাকায় লালিত-পালিত যে বাহিনীর দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা দেয়া তারাই আজ মূর্তিমান অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। অথচ সরকার তাদের পক্ষেই সাফাই গাইছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও সরকার প্রথমেই কোনো অ্যাকশনে যায়নি; হাইকোর্টের নির্দেশের পর অনেক গড়িমসি করে সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তাদেরকে সরাসরি হত্যা মামলায় না জড়িয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এমনও হতে পারে জনগণের দৃষ্টি সে দিক থেকে ফিরে যাওয়ার পর সরকার তাদেরকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। কারণ সরকার তো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। যে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই সেই সরকার ক্ষমতায় দাপটের সঙ্গে টিকে আছে এই বাহিনীর কারণেই। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বেপরোয়া চড়াও হয়ে র্যাব-পুলিশ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। সুতরাং সরকারের কাছে এই বাহিনীর সাতখুন মাফ যে হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের দেশে সব সরকারই কমবেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। তবে বর্তমান সরকার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিয়মতান্ত্রিক মিটিং-মিছিলে কোনো উস্কানি ছাড়াই নির্বিচারে গুলি চালানোর ন্যাক্কারজনক উদাহরণ এই সরকার স্থাপন করেছে। পেটোয়া বাহিনী র্যাব-পুলিশ; কখনো কখনো বিজিবি-সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় মাঠে নামিয়েছে আওয়ামী লীগ। থানায় থানায় একটি বিশেষ জেলার লোক বসিয়ে পুরো রাজধানীতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে তারা। এজন্য এসব বাহিনী যখন অন্যায়-অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সরকারের নৈতিক মনোবল নেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। নিজেরা নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রহীন হলে অন্যের অন্যায়-অপকর্মের বিচার কেউ করতে
পারে না।
এ জাতির কপালে বরাবরই অত্যন্ত নির্লজ্জ, ব্যক্তিত্বহীন ও নীচু মানসিকতার সরকার জুটেছে। কেউ বেশি করেছে, কেউ কম। দিন দিন অতীতের রেকর্ড শুধুই ভঙ্গই হ"েছ। অথচ বাইরের রাষ্ট্রগুলোর চিত্র যখন আমরা দেখি ভাবতেই ভালো লাগে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ফেরি দুর্ঘটনায় কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরপরই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছে; রাষ্ট্রপতি কেঁদে কেঁদে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, দায়িত্বে অবহেলার জন্য পুরো কোস্ট গার্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। গত বছর লাটভিয়ায় একটি ভবন ধসে শ’খানেক লোক মারা যাওয়ার ঘটনায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পুরো দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। আমাদের পাশের দেশ ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার দায় নিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা বারবার ঘটেছে। এই উদাহরণগুলো ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন শাসকের প্রমাণ বহন করে।
অথচ আমাদের দেশে রানা প্লাজা ধসে সহ¯্রাধিক মানুষ মারা যাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ‘ঝাঁকুনি তত্ত্ব’ বের করেন।
নিজের বেড-রুমে সাংবাদিক দম্পতি নির্মমভাবে খুন হওয়ার পরও দেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেন, ‘কারো বেড-রুমে নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব না’। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় লঞ্চ ডুবে শত শত লোক মারা যাওয়ার পরও নৌমন্ত্রী সুন্দর স্যুট-কোট পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণাতেই শেষ করেন নিজের দায়িত্ব। আবার এই টাকা যেন দিতে না হয় সেজন্য পেট কেটে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগও ওঠে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। পিতার কোলে সন্তান সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পরও যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারেন ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন’ সে দেশের শাসকশ্রেণীর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র যে নেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গুম-খুনের শেষ কোথায়?
চার দিকে চাপা আতঙ্ক; পুরো দেশই যেন গুম-খুনের মৃত্যুপুরী। কার জীবনে অথবা কার পরিবারে কবে নেমে আসবে দুর্ভাগ্যজনক ট্রাজেডি কেউ
বলতে পারে না। যারা প্রিয়জন হারান কেবল তারাই বলতে পারবেন এর জ্বালা যে কত বিষের। একজন মানুষের
গুম-খুন হওয়া মানে এর সঙ্গে জড়িত একটি পরিবার; একটি সমাজ। খুনের চেয়েও গুমের ভয়াবহতাটা আরো মারাত্মক। কারো প্রিয়জন যেভাবেই হোক মারা যাওয়ার পর তাকে নিজ হাতে দাফন-কাফন করতে পারলে মনে কিছুটা প্রশান্তি বোধ হয়। কিন্তু কেউ যদি জানেনই না তার প্রিয়জন বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তাহলে এর দুঃখ ও বেদনা যে কত কঠিন তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। যাদের প্রিয়জন গুম হয়েছেন তাদের আকুতি একটাই অন্তত মৃতদেহটি যেন তারা পান; নিজ হাতে যেন দাফন-কাফন সারতে পারেন আপনজনের। আর বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের দাবি হলো, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। সরকার যত নৈতিকতা ও চরিত্রহীনই হোক না কেন এর জন্য তাদেরকেই আন্তরিক হতে হবে। সরকার চাইলেই পারবে দেশের মানুষকে চলমান আতঙ্ক থেকে মুক্তি এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে। #
gnvb n‡Ri cÖ¯‘wZ, c_ I cv‡_q
L›`Kvi gbmyi Avng`
মে'১৪
†`L‡Z †`L‡Z AveviI gnvb n‡Ri cÖ¯‘wZ †bIqvi mgq P‡j G‡jv| cweÎ KvÕevi ¯^‡cœ we‡fvi nevi w`b G‡jv| Rxeb‡K bZzb K‡i mvRv‡bvi G gnv †mŠfvM¨ hv‡`i Rb¨ †jLv n‡q‡Q GLb Zv‡`i Avbw›`Z nevi Ges G gnvb Bev`‡Zi Rb¨ me©vZ¥K cÖ¯‘wZ †bqvi mgq| Avb‡›`i K_v n‡jv, Gevi we‡k¦i jv‡Lv jv‡Lv gymwj‡gi mv‡_ evsjv‡`‡ki j¶vwaK bibvixI GB gnvb Bev`Z Av`v‡qi my‡hvM jvf Ki‡eb| ZvB Dchy³ m½x mÜvb K‡i GLb †_‡KB n‡Ri Rb¨ kvixwiK-gvbwmK cÖ¯‘wZ †bqv cÖ‡qvRb| KviY Dchy³ cÖ¯‘wZ I h_vh_ m½x wbe©vP‡bi Afv‡e Avcbvi mviv Rxe‡bi Kvw•¶Z GB gnvb Bev`ZwU ¶wZMÖ¯— n‡q †h‡Z cv‡i| †ZgbwU NU‡j Avcbvi Aby‡kvPbvi Aš— _vK‡e bv| A‡bK †¶‡Î Ggb ¶wZI n‡q hvq hvi Kvi‡Y n‡Ri `vwqZ¡ †_‡K `vqgy³ nIqv hvq bv| A_P `vqgyw³i welqwU Avcbvi Rb¨ AZ¨ন্ত Rরুwi| G cÖm‡½ gnvb Avjvn& Bikv` K‡ib– Ôgvby‡li g‡a¨ hvi †mLv‡b hvIqvi mg_©¨ Av‡Q, Avjvni D‡Ï‡k IB N‡ii nR Kiv Zvi Aek¨-KZ©e¨| Avi †KD cÖZ¨vL¨vb Ki‡j †m †R‡b ivLyK, wbðqB Avjvn wek¦RM‡Zi gyLv‡c¶x bbÕ| [Av‡j Bgivb: 97]
G cÖm‡½ wcÖqbex mjvjvû AvjvBwn Iqvmvjvg Bikv` K‡ib- Ô‡h e¨w³ evBZzjvn ch©š— †cuŠQvi cv‡_q I evn‡bi [mvwe©K e¨‡qi gvwjK nIqv m‡Ë¡I nR Ki‡jv bv| †m Bûw` n‡q giyK ev bvmviv n‡q giyK Zv‡Z Avgvi †Kv‡vb `vq `vwqZ¡ †bBÕ| cvkcvwk n‡Ri AZzjbxq dwRjZI hv‡Z Avcbvi nvZ Qvov bv nq †m w`‡K j¶¨ ivLv KZ©e¨| n‡Ri dwRjZ cÖm‡½ Avjvni ivmyj mv. Bikv` K‡ib - Ôn‡R gvei“‡ii cÖwZ`vb n‡”Q GKgvÎ RvbœvZÕ [eyLvwi kwid: nvw`m bs 1773] Ab¨Î wZwb Bikv` K‡ib- Ô†h e¨w³ nR K‡i Ges Zv‡Z †Kv‡bv AkxjZv ev cvcvPv‡i wjß nq bv †m Zvi Rb¥w`‡bi gZ wb®úvc n‡q wd‡i Av‡mÕ| [gymwjg kwid] wZwb Av‡iv Bikv` K‡ib- †Zvgiv nR I Dgiv jvMvZi Av`vq Ki‡e, KviY G `yÕwU `vwi`ª¨ I cvcmg~n‡K Ggbfv‡e `~i K‡i †`q, †hgb Kvgv‡ii nuvci †jvnv, ¯^Y© I iƒcvi gwiwPKv `~i K‡i †`q| gKeyj n‡Ri mvIqve GKgvÎ RvbœvZÕ [wZiwgwR I bvmvwq ] G QvovI eû nvw`‡m n‡Ri AZzjbxq dwRjZ ewY©Z n‡q‡Q| cÖ‡qvRbxq Ávb I h_vh_ cÖ¯‘wZi Afv‡e GB dwRjZ hw` Avcbvi nvZQvov n‡q hvq Z‡e ZvI n‡e LyeB `ytLRbK e¨vcvi|
dz‡ji m‡½ †hgb KuvUv _v‡K †Zgwb nR bvgK G gnvb Bev`‡Zi m‡½I Rwo‡q Av‡Q Z¨vM wZwZ¶vi A‡bK KuvUv| GB Bev`‡Zi c_wU evn¨Z wKQzUv KÈKvKxY©| G‡Z Z¨v‡Mi wKQz w`K‡Zv i‡q‡Q gnvb weavZvi c¶ †_‡K cÖ`Ë| K‡ói †m c_UzKz mKj‡KB cvwo w`‡Z nq| AZ¨š— ˆah©mn Avbw›`Z wP‡Ë me Kó‡K eiY K‡i wb‡Z nq| me©iKg weiw³ cÖKvk Kiv †_‡K wb‡R‡K mš—c©‡Y euvwP‡q ivL‡Z nq| G c_UKz cvwo w`‡q ev›`v Zvi wcÖqZg gvÕe~‡`i Lye mvwbœ‡a¨ †cuŠ‡Q hvq| gnvb Avjvn& hv‡K fv‡jvev‡mb Zvi Rb¨ Gc_ cvwo †`qv mnR K‡i †`b| †m Z¨v‡Mi cÖwZwU c‡` Abyfe K‡i D`¨g I Avb›`| Avi wKQz KÈK ˆZwi K‡i gvbyl| †m me KȇKi g‡a¨ c‡o †M‡j GB gnvb Bev`ZwU Kvw•¶Z gv‡b m¤úbœ Kiv m¤¢e nq bv| wKQz cvw_©e ¯^v_© mÜvbx gvby‡li ¯^v_© wPš—vi RwUj N~Y©ve‡Z© nvwi‡q hvq n‡Ri gZ gnvb Bev`‡Zi A‡bK Avgj I dwRjZ| hv ü`q‡K AvnZ I we¶yä K‡i| GKwU †jLvi gva¨‡g GB RwUj mgm¨vi mgvavb †`qv †Zv Avi m¤¢e bq| Z‡e Avgi‡`i mxgve× AwfÁZvi Av‡jv‡K Avb›` †e`bvi wKQz Abyf~wZ wgwk‡q Avjvni wcÖq †gngvb n‡Z AvMÖnx ev›`v‡`i Rb¨ wKQz civgk© Z‚‡j ai‡Z PvB| hw` Gi †Kv‡bv GKwU civgk© Avjvni †Kv‡bv ev›`vi DcKv‡i G‡m hvq Z‡eB Avgvi G †jLv mv_©K n‡e|
1. DËg m½x wbe©vPb Ki“b
G gnvb md‡ii Rb¨ mva¨gZ †LuvR Lei wb‡q h_vm¤¢e DËg m½x wbe©vPb Kiv PvB| gvei“i nR Av`v‡qi Rb¨ GwU GKwU ¸i“Z¡c~Y© j¶Yxq welq| Avcbvi Kv‡djvi me m`m¨B hw` †bKKvi e¨w³ nb Ges n‡Ri gvmAvjv gvmvwqj m¤ú‡K© AwfÁ AvwjgI Kv‡djvq _v‡Kb, Zvn‡j Avcbvi nR Avjvni B”Qv&q gvei“i nIqvi GKwU eo ai‡bi mnvqZv n‡q hv‡e| †Zgb Kv‡djv cvIqv Aek¨ h‡_ó Kómva¨ e¨vcvi| AwZ‡Z nhiZ nv‡dw¾ ûRyi ivn. Zvi mxwgZ msL¨K m½x‡`i wb‡q †h ¶y`ª nR¡ Kv‡djv ˆZwi K‡i wQ‡jb Zv G‡¶‡Î D¾¡j `„óvš— n‡q Av‡Q| cixw¶Z wb‡j©vf n°vbx Av‡j‡gi ZË¡veav‡b A_ev `vIqvZ I Zvejx‡Mi ej‡q †Kvb †Kvb †¶‡Î Ggb Kv‡djv cvIqvi Avkv Kiv hvq| mem`m¨ †bKKvi –Ggb Kv‡djv cvIqv m¤¢e bv n‡j Aš—Zt AwaKvsk m`m¨ †bKvi nIqvi m¤¢vebv Av‡Q Ggb Kv‡djvq kixK nIqvi †Póv Ki“b| GgbwU m¤¢e n‡jI Avcwb Avcbv‡K nqZ euvwP‡q ivL‡Z cvi‡eb| GKwU ¶y`ª m½x ej‡q wb‡R‡K kyw× I mrK‡g©i g‡a¨ †i‡L n‡Ri gnvb AvgjwU wb¯‹jylfv‡e m¤úbœ Ki‡Z cvi‡eb| ZvI m¤¢e bv n‡j Aš—Zt Avcbvi Av¯’vfvRb AwfÁ `yÕGKRb ci‡nRMvi Av‡jg Ges wKQz msL¨K †bKKvi mv_x Av‡Q Ggb Kv‡djv Aek¨B nIqv PvB| Ab¨_vq n‡Ri Av`e m¤ú‡K© Am‡PZb m½x‡`i fyj KvRKg© I AmshZ bvbvwea AvPiY Avcbvi GB gnvb I e¨qeûj Avgj‡K ¶wZMÖ¯— Ki‡e|
2. Kv‡djvi gyqvwjg Avwjg wK bv j¶¨ Ki“b
A‡bK nR Uªv‡fjm wb‡R‡`i evwbwR¨K ¯^v‡_© †e G‡jg e¨w³‡`i‡KI gyqvwjg wb‡qvM K‡i _v‡K | n‡Ri md‡i A‡bK MÛg~L©I gyqvwjg †m‡R e‡m| Avcwb hw` Ggb gyqvwj‡gi Là‡i c‡ob Avi wb‡RI n‡Ri gvmAvjv gvmvwqj m¤ú‡K© AwfÁ bv nb, Zvn‡j Avcbvi nR eo iK‡gi SzwKi g‡a¨ co‡e| KviY wbwðZ K‡iB ejv hvq Giv n‡Ri i“n ev cÖvYkw³ Kx Ges KZUv ggZ¡‡ev‡ai m‡½ n‡Ri Avgj¸‡jv m¤úbœ Ki‡Z nq G m¤ú‡K© D`vmxb| Giv wb‡R‡`i gZ K‡i AvbyôvwbKZv †kl K‡i `vqgyw³i †NvlYv w`‡Z AvMÖnx _v‡K| Avg‡ji ï×Zv I cÖvYeš—Zvi welqwU G`i Kv‡Q †Zgb eo e¨vcvi bq| A‡bK †¶‡Î gvmAvjv fv‡jv K‡i bv †R‡bB e‡j †`q Avgiv Gfv‡eB welqwU GZKvj a‡i K‡i AvmwQ|
welqwU ¯úó Kivi Rb¨ G cÖm‡½ Avgvi AwfÁZvi `ywU NUbv D‡jL KiwQ| gnvb Avjvni AbyMÖ‡n n‡Ri md‡i wM‡q GKevi GK gyqvwjg mv‡ne‡K †`Ljvg hyeK I my¯’ mej wKQz AbyPimn wZwb 10B wRjnR Zvi wba©vwiZ ¯’v‡b wekªv‡g _vK‡jb | Avi Ab¨ wKQz msL¨K nvwR mv‡ne‡K Zv‡`i KsKi †g‡i †`qvi civgk© w`‡jb| [A_P wgbvq wM‡q kqZvb‡K wZbw`b KsKi gviv IqvwRe| Ges kwiqZm¤§Z KviY Qvov ·Z ΓwU Ki‡j `g IqvwRe n‡q hvq| cieZ©x‡Z G NUbvq mswkó e¨w³iv gvmAvjv †R‡b `g Av`vq K‡ib Ges gyqvwjg‡K KwVb frmbvq RR©wiZ K‡ib| Ges Zv‡`i m¤ú‡K©i g‡a¨ GKwU ¯’vqx dvUj m„wó n‡q hvq| hv LyeB `ytLRbK| wØZxq NUbvwU n‡jv BRwZev m¤úwK©Z GKwU gvmAvjv wb‡q| nR welqK cÖvq me wKZv‡e GK_v wjwce× Av‡Q †h ZvIqv‡di †¶‡Î ÔigjÕ [`yKvua mÂvjb K‡i Nb c`‡¶c exi `‡c© Pjv] ïay wZb P°‡i Ki‡Z nq, Z‡e BR‡Zev [Bniv‡gi Pv`i Wvb eM‡ji wbP w`‡q †ei K‡i Zvi Dfq gv_v evg Kuv‡ai Ici †d‡j ivLv] envj ivL‡Z nq cyY© mvZ P°‡i| Avgv‡`i AÁ gyqvwjg mv‡ne `yÕRb Av‡j‡gi Dcw¯’wZ‡ZB G wel‡q fyj w`K wb‡`©kbv w`‡jb| mZK© Kiv n‡j wZwb ej‡jb: Avgiv eo‡`i m‡½ Gfv‡e K‡i AvmwQ| wKZve †`Lv‡bv n‡jI wZwb Zvi GKMuy‡qwg Z¨vM Ki‡jb bv| ej‡jb Gfv‡eB Avgiv K‡i AvmwQ| Avgiv j¶ Kijvg †h G‡nb gyqvwjgiv n‡Ri †¶‡Î wb‡R‡`i‡K A‡bK ei cwÊZ I me©Rvš— iƒ‡c cÖ`k©b K‡i| nvwR‡`i mvg‡b Zv‡`i fveg~wZ© A¶zbœ ivLvi †Póv K‡i| n‡Ri †¶‡Î Gai‡bi AÁ gyqvwj‡gi ms¯úk© †_‡K †eu‡P _vKv LyeB Ri“wi|
3. `ywbqv`vi cxi gvkv‡qL I we`vwZ‡`i ms¯úk© †_‡KI euvPzb
`yf©vM¨RbKfv‡e Kv‡djv hw` †Kv‡bv fÊcxi, fÊgywi` A_ev we`vwZ m¤cÖ`v‡qi †jvKRb _v‡K Zvn‡j Avcbvi n‡Ri Avgj bvbv fv‡e ¶wZMª¯— nIqvi SzwK i‡q‡Q| A‡bK Uªv‡fjm Av‡Q nvwR MÖn‡Y Zv‡`i †Kv‡bv kZ© †bB| wbשvwiZ As‡Ki A_© Rgv w`‡Z cvi‡jB Zv‡K MÖnY Kiv nq| †Lv`v bvLv¯—v Avcwb hw` Ggb †Kv‡bv Kv‡djvi mv‡_ Rwo‡q c‡ob Zvn‡j we`vwZiv Avcbvi Avg‡j h‡_ó weNœ NUv‡e| we`vwZiv Avivdv‡Zi gq`v‡b Ges wgbvq cÖPzi DrcvZ K‡i _v‡K| we`vwZiv Mvwoi g‡a¨ hyewZ‡`i j¶¨ K‡i bvbv iKg MRj †M‡q _v‡K Ges wewfbœ Akxj K_v I fve fw½ cÖ`k©b K‡i _v‡K| hv m¤ú~Y©iƒ‡c nvivg| wKš—y Bniv‡gi †mB Ae¯’vq we`vwZ‡`i _vgv‡Z hvIqUvI eo iK‡gi SywKc~Y© KvR| weavq n‡Ri Av`e i¶v‡_© Zv bxi‡e mn¨ Kiv Qvov Dcvq _v‡K bv|
weMZ n‡Ri †gŠmy‡g ÔR‰bK wecexÕ we`vwZ Zvi m½x‡`i wb‡q Gfv‡eB A‡bK nvwRi cweÎ mdi‡K Avivdv‡Zi gq`v‡b Ges wgbvq KjywlZ K‡iwQ‡jv| hvi eY©bv w`‡ZI i“wP‡Z ev‡a| Ggb †¶‡Î eySvB hvq bv †h GUv †Kv‡bv gnvcweÎ Avg‡ji mdi, bvwK Aeva we‡bv`‡bi GKwU cÖ‡gv` ågY?
4. gnvb Avjvni Kv‡Q wbqwgZ ZvIwdK cÖv_©bv Ki‡Z _vKzb
n‡Ri gZ DuPz gv‡bi G AZzjbxq Bev`Z h_vh_fv‡e Av`v‡qi Rb¨ gnvb Avjvni Kv‡Q ZvIwdK cÖv_©bv K‡i wbqwgZ `yÕAv Ki“b| GRb¨ w`b ev iv‡Zi †Kv‡bv GKwU mgq wbשviY Ki“b| mgwc©ZwP‡Ë AkÖ“cvZ K‡i GKvš— dwiqv‡`i gva¨‡g gnvb iveŸyj Avjvwg‡bi `iev‡i AviR K‡i ejyb ÔcÖfy! ZzwgB Avgvi gZ bMY¨‡K hLb †Zvgvi mvwbœ‡a¨ †Zvgvi N‡i Avgš¿Y Rvwb‡q‡Qv ZLb ZzwgB Avgv‡K G gnvb Bev`Z †Zvgvi gwR© †gvZv‡eK Av`vq Kivi ZvIwdK w`‡q `vI| Zzwg hw` mnR K‡i bv `vI Zvn‡j me †Póv K‡iI n‡¾ gvei“i Av`vq Kiv Avgvi c‡¶ m¤¢e bq|Õ GQvovI bvbvfv‡e wb‡Ri g‡bi K_v wcÖqZg gvIjvi Kv‡Q cªwZw`b Ly‡j ejyb Mfxi AvMÖn Avi e¨K‚jZv wb‡q| Avcbvi nR Mg‡bi myLei e¨vcKfv‡e cÖPvi bv K‡i Dchy³ I †bKKvi ïfv_x©‡`i Kv‡Q e¨³ K‡i Zv‡`i Kv‡QI Avš—wiK fv‡e `yÕAv Pvb| ¯§Z©e¨ †h, nvw`‡mi fvl¨g‡Z `yÕAvB n‡”Q mKj Bev`‡Zi gMR Ges Nwbô `yÕAvi gva¨‡gB ev›`v I gvIjvi gv‡S Mfxi m¤úK© ˆZwi nq|
5. nR wel‡q weÁ Av‡jg‡`i †jLv eBcy¯—K wbqwgZ cvV Ki“b
nR wel‡q weÁ Av‡jgM‡Yi †jLv eBcy¯—K wbqwgZ cvV Ki“b| wb‡Ri g‡a¨ n‡Ri Av‡eM I fv‡jvevmv e„w×i Rb¨ n‡Ri dwRjZ, BwZnvm I weÁ Av‡jg‡`i nR mdi welqK eBcy¯—K †hgb cvV Ki‡eb, †Zgwb n‡Ri Ri“wi gmAvjv gvmvwqj I Av`e m¤úwK©Z eBcy¯—KI cvV Ki‡eb| Z‡e gvmAvjv gvmvwqj wel‡q ïay Avcbvi cwVZ eB‡qi Ici wbf©ikxj bv †_‡K weÁ Av‡j‡gi m‡½I Avjvc Av‡jvPbv Ki‡eb| ïay eB cvV Kiv G †¶‡Î h‡_ó bq| GKRb weÁ Av‡j‡gi ZË¡veav‡b e¨w³MZfv‡e n‡Ri we‡kl Ri“wi wKQz welq fv‡jvfv‡e AvqË K‡i wb‡Z cvi‡j LyeB myweav n‡e|
G †¶‡Î weÁ Av‡j‡gi ZË¡veav‡b cwiPvwjZ nR cÖwk¶‡Y Ask MÖnYI DcKvix n‡q _v‡K| Z‡e me wKQz g‡b ivLvi Rb¨ Aw¯’i nevi †Kv‡bv cÖ‡qvRb †bB| Dchy³ gyqvwjg †¶ÎgZ mnvqZv Ki‡eb| wb‡Ri mv‡a¨i †fZ‡i Aw¯’iZvgy³fv‡e hZUzKz Avcwb PP©v Ki‡Z cv‡ib ZZUyKzB gnvb Avjvni `qv AvKl©Y Ki‡e e‡j Avkv Kiv hvq|
6. gvnivg gwnjv mv‡_ _vK‡j c„_K i“‡gi kZ© Ki“b
AZ¨š— e¨qeûj gnvb GB Bev`ZwU my›`i I †Mvbvngy³fv‡e Av`vq Kivi mnvqK cwi‡ek jv‡fi Rb¨ mv‡_ gvnivg gwnjv [gv, †evb, ¯¿x] _vK‡j c„_K i“‡gi kZ© Ki“b| G‡Z LiP GKUz †ewk n‡jI Avcwb A‡bK w`K †_‡K wbivc` _vK‡Z cvi‡eb| †hgb c`©vi gZ GKwU Ri“wi diR i¶v Kiv mnR n‡q hvq Ges cvi¯úwiK Kjn-weev` †_‡KI evuPv hvq| Avi G `ywU welq [c`©vnxbZv I Kjn-weev`] Ggb hv n‡Ri gnvb Bev`Z‡K AZ¨š— ¶wZMÖ¯— K‡i| weij e¨wZµg ev‡` Uªv‡fjm¸‡jv mvaviYZ Gme wel‡q †Zgb 哇¶c K‡i bv|
7. bR‡ii wndvR‡Zi Af¨vm M‡o Zzjyb
n‡Ri †¶‡Î AmZK© n‡j †h †Mvbvn wU e¨vcKfv‡e NUvi Ges gnvb n‡Ri mIqve I eiKZ‡K bó Kivi Avk¼v _v‡K Zvn‡jv bR‡ii Amshg| n‡Ri †¶‡Î A‡bK gwnjv nvwR c~e© Abykxj‡bi Afv‡e kiqx c`©v i¶v K‡i Pj‡Z e¨_© nb| G †¶‡Î cyi“l nvwRMYI hw` AmZK© nb Zvn‡j e¨vcKfv‡e bR‡ii †Mvbvn NU‡Z cv‡i hv †_‡K †eu‡P _vKv diR| Aek¨ mZK© _vKvi Rb¨ c~Y© †Póv m‡Ë¡I †Kv‡bv wePz¨wZ NU‡j Zv gnvb Avjvn wbR¸‡Y ¶gv Ki‡eb Ges Zv Aš—‡i †Kv‡bv ¶wZKi cÖfve we¯—vi Ki‡e bv e‡jB Avkv Kiv hvq|
8. ˆah© I ZvKIqv Abykxjb Ki“b
G gnvb md‡ii Rb¨ me‡P Ri“wi cv‡_q n‡jv ZvKIqv I ˆah©| gnvb Avjvn ZvÔAvjv, n‡Ri †¶‡Î ZvKIqv‡K m‡e©vËg cv‡_q †NvlYv K‡i Bikv` K‡i‡Qb- Ô†Zvgiv cv‡_q Aej¤^b K‡iv, Avi m‡e©vËg cv‡_q n‡jv ZvKIqvÕ| Avi ˆah© cÖm‡½ Bikv` n‡q‡Q- Ôgnvb Avjvn& ˆah©kxj‡`i mv‡_ i‡q‡QbÕ| GB ZvKIqv I ˆah© e¨wZZ n‡¾ gvei“i [†Mvbvngy³ I gvKeyj nR] Av`vq Kiv m¤¢e bq| gvei“i n‡Ri Rb¨ wZbwU k‡Z©i K_v cweÎ †KviAv‡b ewY©Z n‡q‡Q| Zv n‡PQ- Akxj K_v I KvR †_‡K, Ab¨vb¨ cvcvPvi Ges ZK© weZK© †_‡K †e‡P _vKv| myZivs cweÎ KvÕevi c‡_i hvÎxiv GLb †_‡KB ZvKIqv, Z¨vM I ˆa‡h©i Abykxjb ïi“ Ki“b|
9. gvBK m‡½ wb‡q AwZwi³ eqvb K‡i Ggb Kv‡djv †_‡KI `~‡i _vKzb
n‡Ri †¶‡Î Avivdv‡Zi gq`v‡b Ges wgbvq nvwRMY mg‡eZ K‡i wKQz mgq ZvKIqv I nR m¤úwK©Z Ri“wi w`K wb‡`©kbv msw¶ßfv‡e †`qv †`vlbxq bq| eis fv‡jv| Z‡e †ckv`vi gyqvwjg‡`i AwZwi³ I AcÖvmw½K eqvb n‡Ri Mvw¤¢h©c~Y© I mybœZ c×wZi Avg‡ji Rb¨ A‡bK †¶‡Î Aš—ivq n‡q `uvovq| †m Kvi‡Y m¤¢e n‡j Kv‡djv wbe©vP‡bi Av‡M G welqwUI j¶ Ki“b| gnvb Avjvn Avgv‡`i‡K n‡¾ gvei“‡ii ZvIwdK `vb Ki“b!
cybð :
nR I cweÎ evBZzjvn kwi‡di cÖwZ fv‡jvevmv wb‡q Avjvni AvMÖnx ev›`v‡`i DcKviv‡_© Avgv‡`i mxwgZ AwfÁZvi Av‡jv‡K K‡qKwU civgk© Zz‡j aiv n‡jv| Kj¨vYKvwgZvB G †jLvi D‡Ïk¨| wbeÜKvi †Kv‡bv we‡kl Uªv‡fjm ev †Kv‡bv nR Kv‡djvi mv‡_ RwoZ bq| gnvb
Avjvn Avgv‡`i G kÖgUzKz Keyj Ki“b!
চলমান উপজেলা নির্বাচন :
আমরা কী বার্তা পেলাম?
কামরুল হাসান রাহমানী
এপ্রিল'১৪
২৪.০৩.১৪ ইংরেজি তারিখে লেখাটি যখন লিখছি তখন ৪র্থ দফা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে- এ দফায় এসে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিগত তিনদফায় পেছনে পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আগের দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। আ.লীগের একাধিক মন্ত্রী-এমপি দাবি করেছেন- এ দফার নির্বাচন পেছনের সকল নির্বাচন থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। মন্ত্রী হাসান মাহমুদ খন্দকার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন- নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সাঈদীপুত্র বিজয়ী হতে পারতো না। সরকাল জোর গলায় দাবি করছে সারাদেশে বিপুল উতসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
এদিকে বিএনপিসহ ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ অন্যান্য পক্ষগুলো দাবি করছে- ‘সরকার পেশিশক্তি ব্যবহার করে শুধুমাত্র ভোট কারচুপি বা জালভোটে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তারা রীতিমত ভোট ডাকাতির মহোতসব পালন করেছে। সরকারী দলের ক্যাডার ও গুণ্ডাবাহিনী এবার তাদের অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সরকারি দলে হয়ে কাজ করেছে। এবং প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থাই তারা গ্রহণ করেনি।’
প্রিয় পাঠক! আসলে কী ঘটেছে, বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য আমাদের মিডিয়ার সাহায্য নেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। যেহেতু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কোনো রেকর্ড সর্বসাধারণের কাছে সংরক্ষিত থাকে না- তাই তাদের জন্য প্রিন্ট মিডিয়াই শেষ ভরসা। সে মতে আমরা গত ২৩ ও ২৪ মার্চের প্রিন্ট মিডিয়ার কিছু প্রতিবেদন ও রিপোর্ট তুলে ধরছি।
ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার ‘উতসব’ ছিল নির্বিঘœ
এই ‘উতসব’কে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ৪০টি উপজেলায় সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। চলমান উপজেলা নির্বাচনে গতকাল চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণে এই সহিংসতায় নিহত হন আরও চারজন। আহতের সংখ্যা কমপক্ষে আড়াইশ।
দুপুর গড়ানোর আগেই ভোটের বাক্স ভর্তি! নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনতাই ও আগুন, এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট জালিয়াতি। কাল এ রকম দৃশ্য ছিল অনেক ভোটকেন্দ্রেই।
নিহত চার
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। দ্বিতীয় ধাপে অল্প কিছু এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটে, নিহত হন একজন। তৃতীয় ধাপে মারা যান তিনজন, ভোট জালিয়াতির ঘটনাও বেড়ে যায়। আর চতুর্থ ধাপে সহিংসতা-জালিয়াতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। গতকাল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার বরুড়া ও ঝালকাঠির রাজাপুরে একজন করে চারজন নিহত হয়েছেন।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র দখল ও গণসিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা ১১টার মধ্যে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনেকটাই শেষ পর্যায়ে ছিল। বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় কেন্দ্র দখলের মহোতসব করেছেন সরকারদলীয় সমর্থকদের প্রার্থীরা। (প্রথমআলো ২৪.০২.১৪)
কেন্দ্র দখল জাল ভোট, সহিংসতায় নিহত ৪
সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘাত সহিংসতার মধ্যদিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে চতুর্থ ধাপে ৯১ উপজেলা নির্বাচন। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন চারজন।...নির্বাচনের আগেরদিন সহিংসতা রোধে কমিশনের পক্ষর থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে তেমন কোনো ফল হয়নি। ব্যালট ছিনতাইকারীদের গুলি করার নির্দেশও কার্যকর হয়নি। বরং কোথাও কোথাও প্রশাসনের সহযোগিতায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করছে প্রতিপক্ষ। কিছু স্থানে ভোট গ্রহণের আগেই ব্যালট ভর্তি বাক্স পাওয়া যায়। গত তিন ধাপের চেয়ে এবার সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়েছে।
সোনাগাজীতে রাতেই দখল ভোটকেন্দ্র
গভীর রাতেই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল, প্রার্থীর ওপর হামলা, এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়া, ভোটারদের ভয়ভীতি ও কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।...
অশান্ত রূপসা ও তেরখাদা
৫ উপজেলায় আজ বিএনপির হরতাল। ব্যালট ছিনতাইকালে গুলিতে আহত ১১।
খুলনার রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা রোববার নির্বাচনের দিন ছিল অশান্ত। ভোটারদের মনে ছিল আতঙ্ক। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই দখল করে নেয় আওয়ামীলীগ...। (সমকাল : ২৪.০৩.১৪)
জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আ. লীগ প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপেও নজিরবিহীন কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলায় জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। এই নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয় ভোট জালিয়াতির। কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতিতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। ভোটারকে কুপিয়ে হত্যা, ভোটকেন্দ্র দখল, প্রিজাইডিং অফিসারদের জিম্মি করে জালভোট দেয়া, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও সরকারবিরোধীদের ওপর পুলিশের গুলিসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটে।
চতুর্থ ধাপের ৯১টি উপজেলার এই নির্বাচনে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে ৩২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। (নয়াদিগন্ত : ২৪.০৩.১৪)
আধাঘণ্টায় ১৮০০ ভোট
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় আজ রোববার সকালে উপজেলা সদরের বিএইচপি একাডেমি কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে আওয়ামীলীগ- সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মর্তুজা খানের কর্মীরা ব্যালট পেপারে সিল মেরে তা বাক্সে ভরছেন। এ সময় পুলিং অফিসাররা অসহায় হয়ে বসে রয়েছেন। এ ব্যাপারে ওই কেন্দ্রে প্রিজাডিং অফিসার বকতিয়ার উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রের ৯টি বুথের প্রত্যেকটিতে ২০০টি করে ব্যালট পেপার পোলিং অফিসারদের সরবরাহ করা হয়েছে। ভোট শুরু হওয়ার পর ৩০ মিনিটে সব ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোট ২হাজার ৮৭৮টি। ৩০মিনিটে ব্যালট বাক্সে ভোট ঢুকেছে ১হাজার ৮০০টি।
বরুড়ায় রাতের আঁধারেই ভোট গ্রহণ শেষ
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় প্রিজাইডিং অফিসারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৮০০ ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার শেষ রাতে শিলামুড়ী উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের (আনারস) সমর্থকরা প্রিজাইডিং অফিসার ফখরুদ্দিনকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকায় দ্রুত ভোট গ্রহণ শুরু করার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা।
তেরখাদা উপজেলায় ১১ টায় ভোট গ্রহণ শেষ
তেরখাদা উপজেলায় প্রায় সব কেন্দ্রে সকাল ১১ টার মধ্যে দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোট গ্রহণ শেষ করে ফেলেছে বলে অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন। সকালে ভোট গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে কেন্দ্রে দখল ও জাল ভোটের মহোতসব শুরু হয়। বিরোধী পক্ষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে জাল ভোট দেয়া হয়। এদিকে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করা হয়। (ইনকিলাব : ২৩.০৩.১৪)
১০ বছরের কিশোর একাই ১৩টি ভোট দিয়েছে
চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বেড়েছে সহিংসতা ও অনিয়ম। জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল আর ভোটের আগেই ব্যালট বোঝাইয়ের নজিরবিহীন এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা, অবস্থান এবং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে। শক্তির মহড়ায় কেন্দ্র দখলের উতসবের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেমন প্রাধান্য বিস্তার করেছেন তেমনি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা বেশি জয়ী হয়েছেন। ব্যবধান কমানোর সহিংসতাপূর্ণ এ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ ফল ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে। গতকাল পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্র্কিং গ্রুপ জানিয়েছে, চতুর্থ ধাপের নির্বাচন ছিল অধিক সহিংসতাপূর্ণ। এ নির্বাচনে তাদের পাঠানো প্রতিনিধিকে অনেক স্থানে ভোকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি পর্যবেক্ষককে কেন্দ্রে আটকে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাপক জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে এ সংস্থাটি। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পিরোজপুরের একটি কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের সামনেই ১০ বছরের কিশোর একাই ১৩টি ভোট দিয়েছে। এদিকে নির্বাচনে ক্রমে সহিংসতা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৃটেন।... (মানবজমিন : ২৩.০৩.১৪)
সহিংসতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ধাপে ধাপে সহিংসতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা। এ পর্যন্ত চার দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোটসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে সংঘর্ষ, হানাহানি, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগের মতো সহিংসতা যেমন এক ধাপ থেকে পরের ধাপে বেড়েছে, তেমনি বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। কম অনিয়ম ও সহিংসতার প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বেশি জয়ী হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে তাঁদের অতিক্রম করে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। (কালেরকণ্ঠ:২৩.০৩.১৪)
ভোট দিতে পারেনি সংখ্যাগুরুরাও
ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে না পারার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। সকাল আটটায় ভোট শুরু হতে না হতেই কেন্দ্র দখল করে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সভর্তি করেছে দলীয় ক্যাডাররা। ফলে এ উপজেলার নির্বাচনে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নন, ভোট দিতে পারেননি সংখ্যাগুরু সাধারণ ভোটাররা।
সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। এ প্রতিবেদক সকাল পৌনে আটটা থেকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সদরের আগৈলঝাড়া বিএইচপি একাডেমি কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে ৫০ গজের মধ্যেই আগৈলঝাড়া থানা। কেন্দ্রের ঠিক ১০০ গজ পেছনেই সেনা ক্যাম্প। সকাল আটটার আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে মানুষের জটলা। ভোট কেন্দ্রের বুথগুলোর সামনে বেশ দীর্ঘ সারি। হঠাত করেই আটটা সাত মিনিটে কেন্দ্রটির নয়টি বুথে প্রবেশ করেন পাঁচ-ছয়জনের একেকটি দল। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মর্তুজা খানের আনারস প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভরে তারা। এ সময় পোলিং অফিসারদের অনেকটা অসহায়ের মতো ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়।...
সাড়ে আটটার দিকে পোলিং বুথ গুলোতে গিয়ে দেখা যায় সবগুলো ব্যালটই বাক্সে ভরা হয়েছে। অর্থাত ভোট শুরু হওয়ার পর প্রথম আধা ঘণ্টায় সরবরাহ করা সব ব্যালটই শেষ হয়ে গেছে। প্রথম আধা ঘণ্টায় ব্যালট বাক্সে ভোট ঢুকেছে এক হাজার ৮০০টি। কেন্দ্রটির মোট ভোট দুই হাজার ৮৭৮টি। দিন শেষে এ কেন্দ্রে দুই হাজার ৩৪২ ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।.
(কালেরকণ্ঠ ২৩.০৩.১৪)
এই লেখাটি পড়ে অনলাইন পাঠকদের করা কিছু মন্তব্য নিুে তুলে ধরা হলে। একজন পাঠক লিখেছেন- আওয়ামীলীগ প্রমাণ করে দিলো ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ না করে সঠিক কাজটাই করেছিল। আরেকজন পাঠক লিখেছেনÑ কেমন করে দিবে? ভোট তো গতকাল (২২/০৩/২০১৪) রাতেই হয়ে গেছে ! আজ (২৩/০৩/২০১৪) রাত্রে আ.লীগের পক্ষে শুধু ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে !
এব্যাপারে আওয়ামীলীগ নির্বাচন পরিচালনা সেল প্রধানের বক্তব্য হলো- আগের তিনটির চেয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে- এইচ টি ইমাম। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, আগের তিনটির চেয়ে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত কঠোর ও শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ জন্য তাদের অভিনন্দন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এবার খুব একটা ঘটনাবহুল কিছু হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগে আপনারা বলেছিলেন, তৃতীয় দফায় অনেক সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু দেখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) না থাকা সত্ত্বেও কত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে জটলা দেখেছে, হাঙ্গামা দেখেছে, সেখানে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবদুল মোবারকের বক্তব্যÑ
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবদুল মোবারক বলেছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ দফা ভোট গ্রহণ সন্তোষজনক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ইসি সন্তুষ্ট কি না সাংবাদিকেরা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর মেহেরবাণী। যথাযথভাবে নির্বাচন হয়েছে।’
সিইসির বক্তবের পরিপেক্ষিতে কয়েকজন অনলাইন পাঠকের মতামত নিুে তুলে ধরা হলে-
সহিংসতায় চার চারটি তাজা প্রাণ ঝরে গেলো অথচ ওনার কি স্বস্তি! আলহামদুল্লিহ!
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- এই নির্বাচন কমিশন এদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। লজ্জা-শরম, ব্যক্তিত্ব বা মানিবক মূল্যবোধ কোনোটাই এদের নেই। যদি কারো চাপে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে পদত্যাগ করুন।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ?
সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- এই ধরনের মন্তব্য করে আমাদের বুদ্ধি, বিবেচনা, দৃষ্টিশক্তিকে অপমান করার কোনোই দরকার ছিল না।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- ইন্নালিল্লাহ...খুবই কলংকজনক নির্বাচন হচ্ছে...।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- মিথ্যা কথা বলার আগে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয় না !
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- ডিজিটাল বাংলাদেশে বলা যায়। কোনো অসুবিধা নাই।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন-‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর মেহেরবাণী। যথাযথভাবে উপরের আদেশ নিষেধ মানতে পেরেছি। চাকরি সেইফ। আগামীতে কিছু একটা হতে পারবো।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- ভাই উনাকে কেউ একটা ফ্রুটিকা কিনে খাওয়ান।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- উনি মিথ্যা কি বলেছেন! উনি তো এর চেয়ে আরও অনেক বেশি সহিংসতা আশা করেছিলেন।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- এদের কি মৃত্যুর পরের চিন্তা নাই !
জাতিয় দৈনিকের এসকল রিপোর্ট আমাদের সামনে কয়েকটি বিষয়কে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
এক. আওয়ামীলীগের দাবি অনুযায়ী এই নির্বাচন অতীতের সকল নির্বাচন থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এখন চিন্তার বিষয় হলো- সুষ্ঠু ও শান্তিপূণ নির্বাচনের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে তার পূর্বেরগুলোর অবস্থা কী ছিল তা সহজেই অনুমেয়।
দুই. যে ভোট ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয় সেই ভোটে এই পরিমাণ সহিংসতা ও ডাকাতির মাধ্যমে প্রমাণিত হলো- শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বিরোধীদলের দাবি শতভাগ সত্য ছিল।
তিন. এই সরকারের অধীনে বিরোধীদলের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা যে সঠিক ছিল তাও প্রমাণিত হয়েছে।
চার. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী এমপিরা এতদিন যে বড় গলায় বলে আসছেন- এ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এই দাবিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছ।
পাঁচ. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া যে এদেশে ভোট ডাকাতি ঠেকানো সম্ভব নয় এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে না তাও প্রমাণিত হয়েছে।
ছয়. মুখে মুখে যতই গণতন্ত্রের কথা বলে নেতা নেত্রীরা খৈ ফুটান না কেন, তা যে আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার শুধুই ছলনা এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধও নেই তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
সাত. আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব যে সীমাহীন নির্লজ্জ এবং মিথ্যাচারে পারদর্শী তাও জাতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছে।
সবশেষে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ভোট ডাকাতি করে অধিক আসনে বিজয়ী দেখানোর পরও শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয় হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে ভোটাধিকার হরণকারী এই গণবিচ্ছিন্ন সরকারকে তারা কত দিন ক্ষমতায় রাখবে।
২৪.৩.১৪ ইং
০০০০০০০০০
স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা হলেও ঈমানদার মানুষের জন্য স্বাধীনতা একটু বেশি প্রয়োজনীয়। কারণ দেশ ও জাতির ওপর অন্যায়-অসত্যের নিয়ন্ত্রণ থাকলে দেশের মানুষের নাগরিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামি জীবন যাত্রাও ব্যহত হয়। অথচ মুসলিম জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামিব্যবস্থা মানার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা এবং আখিরাতের অনন্ত জীবনে মুক্তি ও শান্তি লাভ করা। এ দৃষ্টিকোন থেকেই দেশের স্বাধীনতা মাহান আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। তাই স্বাধীনতা একজন মুসলিমের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা রক্ষা করা তার ঈমানী দায়িত্ব। সে কারণে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধেও সজাগ থাকতে হয়। আধুনিক কালে মুসলিম দেশগুলোর স্বাধীনতার সবচে বড় শত্র“ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদীশক্তি অন্যের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এদের চরিত্রই হচ্ছে প্রভাব ও কর্তৃত্বের অব্যাহত বিস্তার। অবশ্য সাম্রাজ্যবাদ সর্বদা একই রূপ রেখায় কর্তৃৃত্ব বিস্তার করে না। সময় ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রভাব ও প্রভুত্ব বিস্তারের কৌশলগত পথ অবলম্বন করে। আধুনিক কালে সাম্রাজ্যবাদ কোনো দেশ দখল করে তাতে নিজেদের প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠার পুরনো ধাঁচে কাজ করছে না। এখন সাম্রাজ্যবাদ কোনো দেশের ওপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সে দেশেরই একটি ক্ষমতালোভী অংশকে বেছে নেয়। এবং দেশের জাতীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনতার বিরুদ্ধে তাদেরকে নানা উপায়ে ব্যবহার করে। অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করে তাদের অনুগত অংশকে ক্ষমতায় বসিয়ে সংশ্রিষ্ট দেশের উপর কর্তত্বও চালায়। বিভিন্ন চটকদার শিরোনামে বিশ্বকে ধোকা দেয়ার প্রয়াস চালায়। ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার প্রতি লক্ষ করলেই সাম্রাজ্যবাদের এ আধুনিক চেহারাটি সহজে চোখে পড়বে। নতুন প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যবাদের কৌশল ও চেহারা পরিবর্তন হলেও কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব বিস্তারের সেই চরিত্র রয়েছে অভিন্ন। সে কারণে আধুনিক বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও জাতি বাহ্যত স্বাধীন বলে দেখা যায় কিন্তু অন্তর্গত বাস্তবতায় তাদের স্বাধীনতা নেই। আমরা যদি সাম্রাজ্যবাদের এই কৌশলটির কথা মাথায় না রেখে শুধু পুরনো ও জংলী সাম্রাজ্যবাদের রূপটিই মাথায় রাখি তাহলে আমরা বড় রকমের ভুল করবো।
আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ অনেক বেশি কৌশলী এবং শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রলোভনের সাহায্যে কোনো দেশের সেনাবাহিনীকেও ক্রয় করে নেয়, যেমনটি ঘটেছিল ইরাক যুদ্ধের ক্ষেত্রে। সাদ্দামের ষাট হাজার সৈন্যের শক্তিশালী রিপাবলিকান গার্ড প্রয়োজনের মুহূর্তে ছিল নিস্ক্রিয়। এক শ্রেণির জেনারেল আগ্রাসী শক্তির হাতে বিক্রিত হয়ে যাওয়ায় সাদ্দাম হোসেন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদের কাছে বিক্রি হওয়ার সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো মিশরের সেনাবাহিনী। মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা জনাব মুরসি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। তদুপরি তিনি ইসলামি শরীয়ার আইন প্রয়োগের জন্য পৃথক গণভোট নিয়ে তা চালু করতে চেয়ে ছিলেন। এতে মুসলমানদের চির বৈরী পশ্চিমা শক্তির গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায় এবং ওরা ইন্ধন দিয়ে সেনাবাহিনীকে ব্রাদারহুড সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেয় এক শ্রেণির আদর্শচ্যুত ও নীতভ্রষ্ট তরুণ। সেনাবহিনী ও এই তরুণশ্রেণি তাদের স্বেচ্ছাচারী ও অনৈতিক জীবন যাত্রার পথে এই শরিয়া ব্যবস্থাকে প্রতিবন্ধক দেখতে পায়। তাই দেশটির সম্পূর্ণ বৈধ সরকার ও বৈধ প্রেসিডেন্টকে তারা শক্তির মুখে উৎখাত করে এবং বন্দি করে । তারপর সেনাবাহিনী দেশের মুসলিম জনতার ওপর গণহত্যা চালায়। গুলি করে। এভাবেই কৌশলে সাম্্রাজ্যবাদী শক্তি মিশরের স্বাধীনতাকে তছনছ করে দেয়। বর্তমান মিশর বাহ্যত স্বাধীন, কিন্তু প্রকৃতভাবে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির হাতে বন্দি। মিশরের বৈধ সরকার তার দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য যে মূল্যবোধ আশ্রয়ী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, তা প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হলো না। মিশরের এ বাস্তবতায় সাম্রাজ্যবাদের আধুনিক চরিত্রটি খুব সহজেই ধরা পড়ে। মিশরের আদর্শবাদী শক্তির জন্য এখন সম্ভবত জিহাদের আর কোনো বিকল্প নেই। এ পথে হয়ত মিশরের অনেক রক্ত ঝরবে, তবে এক সময় সাম্রাজ্যবাদের অনুচরগোষ্ঠী পরাজিত হবে এবং ইসলামি জনতার বিজয়ের লালসূর্য উদিত হবে। কারণ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জিহাদই হচ্ছে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সমাধান। বিভিন্ন সময়ে তা পৃথিবীর সামনে স্পষ্ট হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সম্প্রতি জনাব মুরসি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নতুন করে বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন।
সাম্রাজ্যবাদের আরেকটি কৌশল হচ্ছে মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি ও শক্তি সঞ্চয়। সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির সহায়তায় দেশে দেশে তাদের দালাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত স্বাধীনতাকামী মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বলে প্রচার করাই এই সাংবাদিকগোষ্ঠীর প্রধান কাজ। কোন দেশে মুসলিম জনতার সংগ্রাম যতই ন্যায়ানুগ ও মানবিক হোক না কেন, সাম্রাজ্যবাদের দালাল সাংবাদিক গোষ্ঠী তাকে চোখবুজে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বলে অভিহিত করে এবং স্বাধীনতাকামী মুসলিম জনতাকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বলে অষ্টপ্রহর প্রচার করে। আফগানিস্তানে আগ্রাসী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামরত মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘তালেবান জঙ্গি’ বলে প্রচার করতে এরা ঢের আনন্দ পান। আগ্রাসী শক্তিকে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বলা হচ্ছে দেশ রক্ষায় নিবেদিত স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সংগ্রামকেও এরা নানা উপায়ে কটাক্ষ করে থাকে এবং জনাব মুরসি দেশের কল্যাণে যে শরিয়া আইনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাকে এরা বলে ক্ষমতার অপব্যবহার। সাংবাদিকগোষ্ঠীর এহেন প্রচারণাকে মদখোর মানুষের কান্ডজ্ঞানহীন বাক-তাণ্ডবের মতোই মনে হয়। বস্তুত এরা সাম্রাজ্যবাদের অন্ধ গোলাম। এদের মগজ পুরোটুকুই সাম্রাজ্যবাদের কছে বিক্রি হয়ে আছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাংবাদিক শ্রেণির অবস্থাও অভিন্ন। বিরল ব্যতিক্রম বাদে প্রায় প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও প্রতিটি দৈনিকে সাম্রাজ্যবাদের এহেন অনুচরদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে পবিত্র কোরআনের নিম্নলিখিত বাণীই মনে পড়ে ‘বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।’
সাম্রাজ্যবাদীরা মুসলিম বিশ্বের ওপর হঠাৎ করেই এতটা আধিপত্য অর্জন করেনি, এজন্য তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে। মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে জাতিয় পর্যায়ে আধুনিক শিক্ষার নামে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে যার ফলে মুসলিম তরুণরা ওদের চিন্তা চেতনায় গড়ে ওঠে। রক্তে মাংসে ওরা যে দেশেরই হোক না কেন মনমগজে ওরা হয় ইংরেজ। কারণ, শিক্ষা হচ্ছে একজন মানুষের চিন্তা-চেতনার ভিত্তিভূমি। এ শিক্ষার মাধ্যমেই মুসলিম বিশ্বের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য ধরে রাখার একটি স্থায়ী বুনিয়াদ তৈরি হয়ে গেছে। পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে মুসলিম তরুণদেরকে মানসিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে। পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আল্লামা ইকবাল যথার্থই বলেছেন-
‘ইঁয়ো কতল ছে বাচ্চুঁ কি ঔহ বদনাম না হোতা
আফসোস কেহ ফেরাউন কো কালেজ কি না সুঝি।
‘শিশু হত্যার পথে ফেরাউন দুর্নামের বোঝা নিতো না কাঁধে অযথা
বোধে থাকত যদি সে হতভাগার এই সব ইংরেজ কলেজের কথা।’
ওসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেও যে সীমিত সংখ্যক তরুণ আপন ধর্মীয় ও জাতীয় মূল্যবোধকে লালন করে থাকে, তারা ভিন্ন কোনো প্রচেষ্টার সংস্পর্শেই তা করতে পারছে।
এখন যে কথাটি আমরা দেশের বিবেকবান মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলতে চাই তা হলো দেশে ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে পূর্বাহ্নেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা শুরুতেই বলেছিÑ যে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন ঈমানদার মানুষরাই। কারণ একজন ঈমানদারের প্রতিটি কাজ হতে হয় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির বিষয় বিবেচনায় রেখে, হালাল-হারাম ও বৈধ অবৈধের বিবেচনা সর্বোপরি মহান আল্লাহর আনুগত্যই তার আরাধ্য। স্বাধীনতা বিপন্ন হলে তিনি তার মহান স্রষ্টার আনুগত্যের পথে পদে পদে বাধাগ্রস্থ হন। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে ভোগবাদী ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদদের হয়ত তেমন একটা অসুবিধা হয় না। তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার লোভ দেখিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা সহজেই বশ করে ফেলতে পারে। সে কারণে ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতার দুর্গতি দেখতে পান না। দেশের কোনো ভয়াবহ সংকটও তাদের কাছে সংকট বলে মনে হয় না। এই রাজনীতিবিদদের চরিত্র বিশ্লেষণে উপমহাদেশের স্মরণীয় মনীষী হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. এর বর্ণিত একটি ঘটনা এখানে খুবই উপযোগী। ঘটনাটি হলো- এক ডাক্তারের দরবারে এক লোক থাকতো। সে ওষুধের উপকরণ দলন-পেষণের কাজ করতো। একবার সে হাকীম সাহেবের আদেশক্রমে জামালগোটার গুলি তৈরি করেছিলো। ওই গুলি হাসপাতালের সে সব রোগীকে দেয়া হতো, যাদের জোলাপের প্রয়োজন হতো। এই ব্যক্তি দু’চারবার জামাল বড়ি তৈরি করার ফলে ব্যবস্থাটি তার মুখস্থ হয়ে গেছে। এর পর হাকীমের মৃত্যুর পর ডাক্তার সেজে বসলো। এখন যে-ই এসে-কোনো সমস্যা বলে তাকেই সে জামাল বড়ির ব্যবস্থা দেয়। দু’চারজনের বেলায় কাকতালীয়ভাবে তার সঠিক প্রয়োগের ফলে সাফল্য অর্জিত হয়। এ কারণে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। একবার এক অসুস্থ লোক এসে সমস্যা জানালে সে তাকে ব্যবস্থা দিয়ে বলে দেহের ভেতর অস্বাস্থ্যকর উপাদান অনেক বেড়ে গেছে, সে কারণে পেট পরিষ্কার করা দরকার। সুতরাং চালাও জামাল বড়ি। ঘটনাক্রমে ওই বড়ি কিছুটা উদ্দীপক ও তেজস্বীরূপে তৈরি হয়েছিল। আর অসুস্থের পেট ছিলো কিছুটা দুর্বল। ফলে শুরু হয় দাস্ত। রোগী একবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার কাছে খবর এলো হাকীম সাহেব! রোগীর খুব দাস্ত হচ্ছে এবং সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। হাকীম সাহেব উত্তর দিলেন, দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাচ্ছে, বের হতে দাও। কিছুক্ষণ পর সংবাদ এলো রোগীর অবস্থা খুবই শোচনীয়। দাস্ত বন্ধের ব্যবস্থা করুন। হাকীম উত্তর দিলেন, নাহ! দূষিত পদার্থ থেকে গেলে ক্ষতি হবে, বরং বেরিয়ে যেতে দাও। এরপর সংবাদ এলো- জনাব! ওই রোগীর ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে। তখন হাকীম তাকে দেখতে গেলেন এবং গিয়ে বলতে লাগলেন, আল্লাহরে! দুষিত উপাদান বের হয়ে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাহলে তা পেটের মধ্যে যদি থেকে যেতো তাহলে কী উপায় হতো!
বর্তমান সময় দেশে দেশে রাজনীতিবিদদের অবস্থাও অনুরূপ। দেশের বারোটা বেজে গেলেও যতক্ষণ তারা ক্ষমতার মসনদে থাকতে পারেন, বলে যান- ‘নো প্রোবলেম! আমরা সবকিছু দেখছি এবং সমাধান দিচ্ছি’। তারপর দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার মৃত্যু হলে বলেন, আমরা এত কিছু করা সত্ত্বেও এ অবস্থা হলো, তাহলে আমরা তৎপর না থাকলে কী উপায় হতো!
যা হোক সর্বশেষ আমরা যে কথাটি বলতে চাই তা হলো, মুসলিম দেশগুলো যদি তাদের ভৌগলিক ও আদর্শিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে চায় তাহলে মুসলিম জনতাকে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপোস করে চলা ভীরু ক্ষমতালোভীদের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। বরং পূর্ব থেকেই এমন প্রস্তুতি থাকতে হবে যাতে ক্ষমতালোভীরা স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়ে যেন তেন প্রকারে ক্ষমতা চর্চার সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভুলুণ্ঠিত করার পথে এগিয়ে গেলে ঈমানদার মুসলিমজনতা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং প্রয়োজনে দেশের ঈমানদার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে পারেন। যেমনটি ঘটে ছিল একত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। সেই প্রস্তুতি থাকলে অন্তত আরাকানের মুসলমানদের মতো চরম অসহায়তার মধ্যে ধুকে ধুকে মরতে হবে না। মরতে হলেও মাতৃভূমির জন্য জীবন দিয়ে বীরের মতো শাহাদাতের মৃত্যু বরণের সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। দেশ রক্ষার সেই সংগ্রাম জিহাদ বলে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বার বার আমাদেরকে জিহাদের কথা বলেছেন এবং সেই অমোঘ বাণীর আবেদন কখনও রহিত হবার নয়। এ প্রস্তুতি প্রসংঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘তোমরা তাদের (ইসলামের দুশমনদের) মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এরদ্বারা তোমরা তোমাদের শত্র“দেরকে এবং আল্লাহর শত্র“দেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করবে।’ (আনফাল-৬০)
এ আয়াতে পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় সকল যুগে ও সকল প্রেক্ষাপটে সে যুগ ও প্রেক্ষাপটের উপযোগী যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলাম ও দেশ রক্ষায় এটা মুসলমানদের ধর্মীয় ও ঈমানী দায়িত্ব।
বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমেও আমাদের প্রিয়নবী সা. ইসলামি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাযি. হতে বর্ণিত, নবী কারিম সা. ইরশাদ করেন- একদিন ইসলামি সীমান্তে প্রহরা দেয়া সারা পৃথিবী ও তদভ্যন্তরস্ত সব কিছুর চাইতে উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম)
হযরত ফুজালা ইবনে উবাইদ রা. হতে বর্ণিত হযরত রসুল করিম সা. ইরশাদ করেছেন, মৃত ব্যক্তির সকল আমলের উপর সীল মোহর এঁটে দেয়া হয় [বন্ধ করে দেয়া হয়] মৃত্যুর পরে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারে না, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে ব্যক্তি কোনো ইসলামি সীমান্তের প্রহরায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। বস্তুত তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর হতেও সে ব্যক্তি মুক্ত থাকবে। (তিরমিজি, আবু দাউদ, দারিমি)
এ দু’টি হাদিস থেকেই বুঝা যায় ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব ও মর্যাদা কতখানি। সুতরাং এই স্বাধীনতা কোনোভাবে যাতে হুমকির মুখে না পড়ে সে জন্য সজাগ ও প্রস্তুত থাকা সমগ্র জাতির ঈমানী দায়িত্ব। মাহান আল্লাহ আমাদের সর্বোত্তম আশ্রয়।
ইতিহাসের আয়নায় রক্তাক্ত আমাদের বর্তমান
খন্দকার মনসুর আহমদ
ফেব্রুয়ারি'১৪
আত্মসচেতন জাতি ইতিহাসকে তার পরম শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে এবং ইতিহাসের সত্যকে জীবনচলার পথে আলোকবর্তিকারূপে গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে আত্মভোলা জাতি তাদের ইতিহাস ভুলে যায়। এবং জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে যথাযথ কর্তব্য নির্ধারণে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই আমরা আমাদের বিগত ইতিহাসের একটি দগদগে অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনের বর্তমান সংকটকালকে খানিকটা মূল্যায়নের প্রয়াস পাব।
আমি ইতিহাসের যে অধ্যায়টির প্রতি ইঙ্গিত করতে চাই তা হলো আমাদের ভারত উপমহাদেশে আগ্রাসী ইংরেজদের দখল প্রতিষ্ঠা ও সুদীর্ঘ দুঃশাসন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সাম্রাজ্যবাদী ধুরন্ধর ইংরেজগোষ্ঠী বাণিজ্যের কৌশলগত পথে একদা আমাদের এই উপমহাদেশ দখল করে নিয়েছিলো এবং এদেশকে মানবতার বদ্ধভূমিতে পরিণত করেছিলো। হাজার হাজার আলেম উলামাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছিলো। হাজার হাজার মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছিলো এবং উপমহাদেশকে খ্রিস্টান রাজ্যে পরিণত করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলো। গোটা উপমহাদেশেই নেমে এসেছিলো ভয়াল অন্ধকার। অত্যাচারী সেই আগ্রাসীদের মোকাবেলায় কোনো বিপ্লব গড়ে তোলাও ছিলো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের দখল প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছর পর ওদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি বিপ্লব গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হলে ইংরেজ কমান্ডার মুলারের নির্দেশে চৌদ্দজন বিপ্লবী দেশীয় সৈনিককে কামানের মুখে উড়িয়ে দেয়। তবে বিপ্লবীদের কর্মসূচি চলতে থাকে এবং সময়ের ব্যবধানে তার গতি বাড়তে থাকে। তারপর সুদীর্ঘ ৯৩ বছর পর ১৮৫৭ সালে তা একটি জ্বলন্ত ভিসুবিয়াসের রূপ পরিগ্রহ করে। যা সিপাহীবিপ্লব নামে পরিচিত। কিন্ত নানা কারণে শেষ পর্যন্ত সেই বিপ্লবও ব্যর্থ হলে ইংরেজদের উৎখাত করতে আরও ৯০ বছর লেগে যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে এই আগ্রাসী শক্তিকে বহু রক্তের বিনিময়ে বিতাড়িত করা হয়। এখানে শুধু সে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের দিকে ইশারা করে বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে আমরা আমাদের জাতিকে একটি বার্তা দিতে চাই। এবং সকলকে আমরা সেই অধ্যায়টির প্রতি একটু মনোযোগী হবার আহ্বান জানাই। এতে সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র সম্পর্কে যেমন একটি ধারণা লাভ করা যাবে তেমনি আমাদের মহান পূর্বসূরিদের সীমাহীন ত্যাগের আয়নায় আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিরূপণ করা সহজ হবে।
ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে উলামায়ে দেওবন্দ-এর বিপ্লবের ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। উলামায়ে দেওবন্দ-এর আন্দোলনের একটি বড় হাতিয়ার ছিলো ফতোয়া। মুসলিম জনজীবনে ফতোয়ার প্রভাব অত্যন্ত গভীর। শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ.-এর একটি বিপ্লবী ফতোয়া সাম্রাজ্যবাদীদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। তার সুযোগ্য শিষ্য মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি রহ.-ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ওয়াজিব বলে ফতোয়া প্রচার করেন এবং বিভিন্ন স্থানে অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে জাতিকে জাগিয়ে তোলেন। পরে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী তাকে আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত করে। সীমাহীন নির্যাতন ভোগ করে তিনি এক পর্যায়ে সেই দ্বীপেই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রহ., হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতবি রহ., শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. প্রমুখ মহান ব্যক্তিও ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামে সীমাহীন ত্যাগ শিকার করেন।
আজকে বাংলাদেশে আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও স্বাধীনতা নাস্তিক্যবাদী শক্তির যে-হামলার মুখে পতিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে এই দেশের মুসলমানদের কর্তব্য কী হতে পারে সে সম্পর্কেও বিজ্ঞ আলেম সমাজের সম্মিলিত ফতোয়ার প্রয়োজনীয় বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য আমরা সচেতন মহলের প্রতি আহ্বান জানাই। শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ.-এর বিপ্লবী ফতোয়া প্রমাণ করেছিলো যে ফতোয়া শুধু ইসলাম রক্ষার হাতিয়ার নয়, বরং ফতোয়া দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষারও অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। আজকের প্রেক্ষাপটে কোনো একক ব্যক্তির ফতোয়ার ফলপ্রসূতার ব্যাপারে সংশয় থাকলেও জাতীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত ফতোয়া আগের মতোই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যবহুল বক্তৃতা। আদর্শিক জাগরণের পক্ষে ভাষা ও ভাষণের প্রয়োজনীয়তা এতখানি যে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রেরিত নবী-রসূলগণকেও এর মুখাপেক্ষী করেছেন। বিখ্যাত মুসলিম বীর তারিক বিন যিয়াদের একটি ভাষণ স্পেন জয়ের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিলো। যা আজও সাহিত্য ও ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। আফগানিস্তানের নরশার্দুল মোল্লা মোহাম্মদ উমরের একটি ভাষণ আফগান জাতিকে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে নতুনভাবে জগিয়ে তুলেছিলো। ইংরেজ-বিরোধী সংগ্রামেও উলামায়ে দেওবন্দ-এর ভাষণসমূহ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলো। সে কারণেই দেখা যায় যে ভোগবাদী শক্তি সর্বদা ভাষা ও ভাষণকে ভয় পায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভাষা ও ভাষণ বন্দি বা গৃহবন্দি রাখতে চায় অথবা নির্বাসনে পাঠায়। অতীত ও বর্তমানে এর অনেক নজির রয়েছে। ভাষা ও ভাষণের এই শক্তির কথা বিবেচনায় রেখে আজকের শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজকেও এই হাতিয়ারটি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত তরুণ আলেম শ্রেণিকে বক্তৃতার শাণিত ও সাবলীল ভাষা এবং কলাকৌশল রপ্ত করতে হবে। বক্তৃতায় অশুদ্ধ বা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার হলে বক্তৃতা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে প্রভাবশালী হতে পারে না। বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখার জন্য আমরা শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বার বার ব্যর্থতা ও পরাজয় বরণের পরও সামনের পথে এগিয়ে চলা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি, কারণ সংগ্রাম ও বিপ্লব সর্বদা একই মাত্রায় গতিশীল থাকে না। বিপর্যয় ও ব্যর্থতা এ-পথের একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা। সফলতার সূর্যোদয়ের জন্য ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে সংগ্রামের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক যুগও পার হয়ে যায়। এ-বাস্তবতার আলোকে আমাদের চলমান নাস্তিক্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের সাময়িক বিপর্যয়কে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। একথা তো অস্বীকারের উপায় নেই যে শাপলাচত্বরের বিপর্যয়ের পর আলেমসমাজের নাস্তিক্যবাদবিরোধী সংগ্রাম একটি প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে এবং সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের আয়নায় বিচার করলে এটা তেমন বড়ো কিছু নয়। কারণ সংগ্রামের পথটাই হচ্ছে চড়াই-উৎরাইয়ের পথ। সুতরাং আলেমসমাজ নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে নতুন রূপরেখায় এগিয়ে যাবেন এটাই ইতিহাসের দাবি। উগ্র নাস্তিক্যবাদ এখন শুধু ব্লগ আর মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ছত্রছায়ায় যথেষ্ট পরিপুষ্টি লাভ করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেও অধিষ্ঠিত। ফলে উগ্র-নাস্তিক্যবাদ রাষ্ট্রশক্তিরও যথেষ্ট প্রশ্রয় পাচ্ছে। নাস্তিক্যবাদ যে নোংরা মূর্তিতে ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে এর প্রতিরোধ সফলভাবে করা সম্ভব না হলে এক সময়ে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ উগ্র দাম্ভিক শক্তি নিজেদের দম্ভ ও দাপট রক্ষার জন্য দেশের বহিঃশক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। এটা ইতিহাসের এক নির্মম সত্য। উপমহাদেশে একটি বৃহৎ হিন্দু জনগোষ্ঠী এবং নামধারী এক শ্রেণীর মুনাফিক মুসলমান ইংরেজদেরকে যেভাবে সহায়তা করেছিলো তা আমাদের একথার জ্বলন্ত প্রমাণ। দাম্ভিক শক্তি যখন স্বদেশের জনগণকে আর নিজেদেও পক্ষে ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না তখনই তারা তাদের সতীর্থ শক্তিকে স্বদেশে আমন্ত্রণ জানায় এবং আধিপত্য বিস্তারে প্ররোচনা দেয়। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মুসলিম দেশে তার প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে এবার একটু ভেবে দেখা যাক। একটু ভেবে দেখলে আমাদের দেশে ইংরেজদের দখল প্রতিষ্ঠার পূর্বপ্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটের অনেক মিল পাওয়া যায়। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য এনজিও এবং ইংরেজ সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে দেশের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ। দেশে শীর্ষ রাজনৈতিক মেধাগুলো আধিপত্যকামী শক্তির কাছে বিক্রি হয়ে আছে। কঠিনভাবে জাতীয়তাবোধসম্পন্ন দীনি মাদরাসাসমূহের ওপর চলছে নজরদারি। প্রতিবাদী সাহসী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বড় আকারে কোনো শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিদেশি দখলদারদের মতই শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ঈমানি দাবিসমূহকে পদদলিত করা হচ্ছে। সর্বাত্মকভাবে দেশে একটি আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উত্তরসূরিদের আত্মীয়স্বজনরাও এদেশে সদম্ভে বিচরণশীল। ইংরেজ সভ্যতার অসংখ্য দাস এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এরা ক্ষমতার প্রয়োজনে জনগণকে পাশ কাটিয়ে যেকোনো নিকৃষ্ট পথে পা বাড়াতেও দ্বিধা করবে না বলে দেশের জাতীয়তাবোধসম্পন্ন মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও ঈমানি আবেগকে এরা থোড়াই কেয়ার করে। ইংরেজ সভ্যতায় প্রশিক্ষিত ডিজিটাল দালালরাও মাদরাসা বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। কখনো মাদরাসাকে জঙ্গি তৈরির কারখানা বলে অভিহিত করছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে ইতিহাসের পরীক্ষিত পথে এগোতে হবে। ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেও গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যে দেশে মানবতার হৃদয়ের টুকরো হযরত মুহাম্মদ সা.-কে একের পর এক কটূক্তি করেও বেঁচে থাকা যায় এবং শহীদ বলে মর্যাদা লাভ করা যায় (নাউযুবিল্লাহ), যে দেশে রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে শত শত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সে দেশে ইসলাম ও স্বাধীনতা কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। সম্প্রসারণবাদী কোনো অপশক্তির ইঙ্গিতে স্বজাতির বিরুদ্ধে এহেন নির্মমতা প্রদর্শন করা হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখা দরকার এবং দেশে ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য পূর্বাহ্নেই সদূরপ্রসারী সতর্ক পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায়।
জানুয়ারি'১৪
নববর্ষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা
খন্দকার মনসুর আহমদ
আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর হারিয়ে গেল। আমরা একটি নতুন বছরকে বরণ করলাম। স্বভাবতই আমরা নববর্ষে নতুন স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বুকে নিয়ে সামনের পথে এগিয়ে যেতে চাই। সে হিসেবে একটি নববর্ষ আমাদের জীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা দেখছি যে সময় স্রোতের মতো ধাবমান। আমরা একটি নববর্ষকে গ্রহণ করি, আবার দেখতে না দেখতেই বর্ষটি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যায়। নতুন বর্ষ এসে দুয়ারে করাঘাত করে। অতএব সময়ের এ ধাবমানতার মধ্যেই আমাদেরকে অনন্তের কথা ভাবতে হবে এবং অনন্ত জীবনের পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে। নববর্ষে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে যে, পৃথিবী আখেরাতের শস্যক্ষেত। আখেরাতের ফসল ফলাবার জন্যই মহান আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। যেদিন আর পৃথিবীতে আখেরাতের ফসল ফলানো যাবে না, সেদিন পৃথিবীরও আর কোনো মূল্য থাকবে না। সেদিন মহাপ্রলয়ের দিকে এগিয়ে যাবে পৃথিবী। কিছুকাল পূর্বে আমি এ বিষয়ে ছোট্ট একটি কবিতা লিখেছিলাম। প্রিয় পাঠকদের কাছে কবিতাটি তুলে ধরলাম।
বেঁচে থাকতে চাই আরও কিছুকাল
ফলাতে চাই অনন্তে’র আরও কিছু ফসল,
পৃথিবীইতো আখেরাতের শস্যক্ষেত।
এখানে এখনও আখেরাতের ফসল
ফলানো যায় দিন-রাত।
সওয়াবের সবুজ ফসলে ভরে যায় মাঠ।
যেদিন পৃথিবীতে আর ফলবে না সওয়াবের ফসল
সেদিন বিধাতা ধ্বংস করে দিবেন
পৃথিবী নামের এ গ্রহটিকে।
তাই এসো আমরা এ গ্রহে বাস করে প্রতিনিয়ত
আখেরাতের ফসল ফলাই।
আখেরাতের জীবনে অতুলনীয় সুখ-সমৃদ্ধি লাভের জন্য আমাদেরকে বহুবিধ শুভস্বপ্নের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। শুভস্বপ্ন মহান আল্লাহর বড় প্রিয়। হাদিস শরিফে বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে, ‘মুমিনের নিয়ত তার কর্মের চেয়ে উত্তম’। কর্মের চেয়ে নিয়ত উত্তম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কর্মের একটি সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু নিয়ত বা স্বপ্নের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। স্বপ্ন হতে পারে অসীম ও অনন্তের। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়তো পার্থিব জীবনে নাও ঘটতে পারে, কিন্তু অন্তরের সত্যিকার ভালোবাসা ও আকাক্সক্ষার কারণে, মহান আল্লাহ তার প্রতিদান দিয়ে দিবেন। কারণ তিনি অসীম করুণার অধিকারী। তাঁর করুণার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। বান্দা তাঁর করুণার পরিধি কল্পনাও করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেকে বলেছেন ‘মহান করুণার আধার’। আরও বলেছেন, ‘আমার রহমত সকল কিছুতে পরিব্যাপ্ত’।
স্বপ্ন সকলেই দেখতে পারেন। তবে কৈশোর ও তারুণ্যই স্বপ্ন দেখার সর্বোত্তম সময়। তাই কিশোর ও তরুণ বন্ধুদেরকে আমি নিরন্তর স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানাই। সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ. তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘মানুষ শৈশবে যা কিছু চিন্তা করে ঠিক তাই মহান আল্লাহ কোনো না কোনো অবস্থায় তার জীবনে বাস্তবায়িত করে দেন। অতএব যা কিছু চিন্তা করবে, যা কিছু আকাক্সক্ষা করবে, অনেক ভেবে চিন্তে করবে’। আমাদের কাজ হচ্ছে স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্নের পথে অবিরাম হেঁটে চলা। আমরা দেখবো রেজায়ে এলাহি’র স্বপ্ন, আলোকিত জীবনের স্বপ্ন, শুদ্ধি ও সৎকর্মের স্বপ্ন, জীবনের সর্বত্র সুন্নতে নববীর অনুগামী হবার স্বপ্ন, উত্তম আমলের স্বপ্ন, প্রাণবন্ত নামাজের স্বপ্ন, প্রাণবন্ত রোজার স্বপ্ন, জিহাদের স্বপ্ন, বিজ্ঞ আলিম হবার স্বপ্ন, আলোকিত দেশ-জাতি ও সমাজ গড়ার স্বপ্ন, স্বদেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, মিথ্যাকে পরাভূত করার স্বপ্ন, নবীজির অবমাননা প্রতিরোধের স্বপ্ন, পবিত্র কা’বা জিয়ারতের স্বপ্ন, মদিনা শরিফের স্বপ্ন, রওযা শরিফের স্বপ্ন, বাবার হজের স্বপ্ন, মায়ের হজের স্বপ্ন এবং আরও হাজারো স্বপ্ন। হৃদয়ের গহীনে আরও হাজারো স্বপ্নের বীজ রোপিত হতে পারে আমাদের। আর আমরা স্বপ্ন দেখবো না বিত্তবৈভবের এবং স্বার্থান্ধ ক্ষমতার। দেখবো না কোনো অবৈধ প্রেমের বা অন্য কোনো পাপকর্মের স্বপ্ন। এমন কোনো স্বপ্নের মোহ যদি আমাদের অন্তরে আসে, তাহলে আমরা আমাদের হৃদয়কে অবশ্যই সেই মোহ থেকে মুক্ত করবো।
মহান দয়ালু তাঁর করুণায় বান্দার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত করে দেন। আমি মহান আল্লাহর এক নগণ্য বান্দা। আমি আমার জীবনে যে সকল স্বপ্ন দেখেছিলাম তার অনেকগুলোই মহান আল্লাহ বাস্তবতার পুষ্পোদ্যানে প্রস্ফুটিত করে দিয়েছেন। তিনি দয়া করে সম্প্রতি আমার যে স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করলেন, তা হলো আমার মায়ের হজের স্বপ্ন। আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার বুকে এ স্বপ্ন লালন করে আসছিলাম এবং এর জন্য মহান বিধাতার সাহায্য প্রার্থনা করে আসছিলাম। মহান আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন আমার কল্পনার চেয়েও সুন্দর রূপরেখায় বাস্তবায়িত করলেন। সেই বেহেশতি সফরে মায়ের সহযাত্রী বানালেন এ নগণ্যকেই। মাতৃস্নেহের কোমল পরশে এমন পবিত্র সফরের কী যে আনন্দ ও প্রশান্তি তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করে কোনোদিনই শেষ করা যাবে না। আমার মনে হয় ঈমানের পরে এটিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। সুদীর্ঘ বেদনার পর আমার জীবনে যখন এই সৌভাগ্য এলো, তখন তা আমার সমগ্র সত্তাকেই নতুন ভাবে স্পর্শ করলো। আমি আমার জীবনে এক নতুন আলোর সন্ধান পেলাম। পবিত্র কা’বা ও রওজা শরিফের জিয়ারত আমার হৃদয়ে এনেছে নতুন সজীবতা, জীবনে এনেছে নতুন আনন্দ, বুকে এনেছে নতুন স্বপ্ন এবং সত্তায় এনেছে নতুন উদ্যম। প্রত্যাশী সকল মুমিনের জন্যই আমি এই সৌভাগ্য কামনা করি ।
অবশেষে প্রার্থনা করি নববর্ষে আমাদের জীবন কল্যাণের প্রাচুর্যে ভরে উঠুক। শান্তিময় হয়ে উঠুক আমাদের জীবন ও পৃথিবী। মহান আল্লাহর রহমতে পূর্ণ হোক আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। তিনিই সর্বত্র আমাদের সহায়। আমরা তার কাছেই আমাদের সকল স্বপ্নের শুভ পরিণতি কামনা করি ।
কামরুল হাসান রাহমানী
জুলাই, আগস্ট'১৪
ইতিকাফ একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সুনির্ধারিত পন্থায় মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত ইতিকাফ করেছেন। পরবর্তীতে তাঁর সাহাবিগণ এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন। সে হিসেবে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
ইতিকাফের ব্যাপারে আমাদের সমাজে মৌলিকভাবে তিনটি ত্র“টি পরিলক্ষিত হয়। এক. ইবাদতটিকে খুবই হালকা ভাবে দেখা হয়। দুই. ভুল ভাবে পালন করা হয়। তিন. অত্যন্ত কঠিন ভাবে পালন করা হয়।
খুবই হালকা ভাবে দেখা হয়নবীজি সা. আজীবন রমজানে ইতিকাফ করেছেন। তিনি নবী ছিলেন, ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধানও। তাই খুব সহজেই অনুমেয় যে তিনি সীমাহীন ব্যস্ত মানুষ ছিলেন। কিন্তু রমজান মাসে সব ব্যস্ততা উপেক্ষা করে ইবাদত ও ইতিকাফে সময় অতিবাহিত করতেন। অথচ আজকাল আমাদের সমাজের অবস্থা হলো আমরা ধরেই নিয়েছি, কোনো একজন দরিদ্র মানুষকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে মসজিদের কোনায় বসিয়ে দিয়েই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে ফেললাম। ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। আসল কথা হলো, ইতিকাফের গুরুত্ব উপলদ্ধি করতেই আমরা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে এই ইবাদত নিয়ে এক ধরনের খামখেয়ালীতে মেতে উঠছি। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হতে। সত্বর তওবা করতে হবে। আর তওবা হলো- সমাজের সর্বস্তরের লোকদের নিয়ে অধিক সংখ্যক লোকজনসহ ইতিকাফে বসে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা। আর যদি বরাবরের মতোই ইতিকাফ থেকে দূরে থাকি তাহলে মুখে যতোই তওবা করিনা কেন সে তওবা আল্লাহর দরবাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভুল ভাবে পালন করা হয়
ভুল ভাবে পালনের অর্থ হলো, এটা একটা ইবাদত। আর ইবাদতের প্রথম এবং প্রধান শর্তই হলো ইবাদতকারির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততার উপস্থিতি। অর্থাৎ কাজটিকে প্রত্যেক ব্যক্তি আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আদায় করবে। এক্ষেত্রে এই বিষয়টি দুঃখজনক ভাবে অনুপস্থিত। লোকদের ধারণা, ইতিকাফ হলো বৃদ্ধ-বেকার লোকদের জন্য। এ জন্য সমাজের তরুণ বা যুবক শ্রেণিকে ইতিকাফে বসতে দেখা যায় না। তদুপরি বৃদ্ধদেরও খুব যে একটা পাওয়া যায় তাও নয়। এক কথায় বলা যায়, এটাকে সকলের জন্য পালনীয় ইবাদত বলে ভাবা হয় না। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকা চাই তা ফরজ হোক বা সুন্নত- প্রত্যেক ব্যক্তি মনে করে কাজটি আমার করা দরকার। ব্যতিক্রম শুধু এই ইতিকাফ। এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তা-ভাবনা অনেকটা এমনÑ ‘আমি এ সমাজের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, ইতিকাফ আমার জন্য নয়।’ এই চিন্তা-ভাবনা মারাত্মক ভুল ও ক্ষতিকর, এ থেকে আমাদের সত্বর তওবা করতে হবে।
ইবাদতটিকে খুব কঠিন ভাবে পালন করা হয়এককথায় বলতে গেলে এ সমাজের লোকদের ভাবনাÑ ‘ইতিকাফকারিকে অবশ্যই অন্ধ, বোবা ও বধির হতে হবে।’ যদি এমন কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে একজন ভালো মানুষকে অবশ্যই অন্ধ, বোবা ও বধির সাজতে হবে। সে কিছু দেখতে পারবে না, কিছু বলতে পারবে না, কিছু শুনতে পারবে না। সারাক্ষণ মসজিদের এক কোনায় পড়ে থাকবে। শত প্রয়োজনীয় কথাও মুখে বলা যাবে না, ইশারা ইঙ্গিতে কাজ সারতে হবে। অথচ ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। এটা হচ্ছে দ্বীন-শরিয়ত না জানার ভয়াবহ পরিণতি। নবীজি সা. বলেছেন- ‘দ্বীন হলো সহজ জিনিস, কিন্তু কেউ যদি দ্বীনকে কঠিন করতে চায় দ্বীন তার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।’ এই হাদিসের বাস্তব নমুনা হলো আমাদের সমাজের ইতিকাফ।
ইতিকাফের সারকথা হচ্ছে মসজিদে অবস্থান করা। শরিয়ত নির্ধারিত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া। বাকি মসজিদে সে কী করবে বা কী করতে পারবে? এর উত্তর হচ্ছে বৈধ যে কোনো কাজই করতে পারবে। বিনা ওজরে ইতিকাফকারী যদি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে তার ইতিকাফ বাতিল বলে গণ্য হবে। যদি শরীরের অংশ বিশেষ বের করে, তাহলেও কোনো অসুবিধা হবে না। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ইতিকাফ অবস্থায় মাথা বের করে দিতেন। মা আয়েশা রা. নিজ কক্ষে বসেই রাসুলুল্লাহর মাথা ধুয়ে সিঁথি করে দিতেন। প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন, অজু, পানাহার, পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি কাজের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে বের হওয়া জায়েয। আর যদি উল্লিখিত বিষয়সমূহ মসজিদের ভিতরে থেকেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় তাহলে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। ইতিকাফ যদি এমন মসজিদে হয়, যেখানে জুমার নামাজ হয় না, তাহলে জুমার নামাজের জন্য জামে মসজিদে গমন করা ওয়াজিব। বিশেষ প্রয়োজন যেমন গোসল না করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এমতাবস্থায় অজুর সময়ের মধ্যেই সংক্ষেপে গোসল সেরে নেবে।
ওয়াজিব নয় এমন ইবাদত যেমন জানাযায় অংশ গ্রহণ, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া ইত্যাদির উদ্দেশ্যে বের হতে পারবে না। ইতিকাফকারী সব ধরনের ইবাদতই করতে পারবে এবং করতে হবে। যেমনÑ নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া, ইসতেগফার, সালামের উত্তর দেয়া, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, ফতোওয়া প্রদান, ইলম শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি সবই তার জন্য জায়েয। এমনকি পণ্য মসজিদে না এনে কোনো ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে তাও করতে পারবে।
ইতিকাফকারীদের জন্য পর্দা টাঙ্গিয়ে লোকজন থেকে নিজকে আড়াল করে নেয়া মুস্তাহাব। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করেছেন একটি তুর্কি তাঁবুতে যার প্রবেশ দ্বারে ছিল একটি পাটি। [সহিহ মুসলিম]
ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদের ভেতরে পানাহার, ঘুমানো, গোসল, সাজগোজ, সুগন্ধী ব্যবহার, পরিবার-পরিজনের সাথে কথপোকথন ইত্যাদি সবই বৈধ। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সীমাতিরিক্ত না হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইতিকাফস্থলে তার পতিœগণের সাক্ষাৎ ও কথপোকথন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেসব কাজ তবে অতিরিক্ত কথা, ঘুম, অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করা, মানুষের সাথে বেশি বেশি মেলামেশা ইত্যাদি ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যহত করে। তাই এ সব থেকে ইতিকাফকারী বিরত থাকবে।
ইতিকাফের তাৎপর্য
রমজানের শেষ দশ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। রাসুলুল্লাহ সা. এই দশ দিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। বস্তুজগতের বাঁধন ছিড়ে তাকওয়ামুখি হৃদয় অর্জন ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা-প্রচেষ্টায় লিপ্ত হতেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় রমজানের শেষ দশ দিন আবশ্যই ইতিকাফে নিমগ্ন হতেন। কারণ এই দশক হলো তাকওয়া ও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের শেষ সুযোগ। সে হিসেবে বর্ণনাতীত শ্রম-সাধনায় ডুবে যেতেন এই দিনগুলোতে।
হাদিসে এসেছে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, ‘রমজান মাসের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতো বেশি ইবাদত করেছেন যা অন্য সময় করেননি।’ [মুসলিম শরিফ]
তিনি আরো বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে রাতযাপন করতেন। তারপর সেহরি খেয়ে বিশ্রামে যেতেন।
আয়েশা রা. থেকে অন্য হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাজানের শেষ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন। এমনকি লুঙ্গি বেঁধে নিতেন।’ [বুখারি ও মুসলিম]
রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সা. ইতিকাফ করতেন নিয়মিত। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও, অন্যসব কাজকর্ম পেছনে ফেলে একনিষ্ঠ হয়ে শেষ দশ দিন মসজিদে কাটাতেন। আর এর একটি বড় কারণ ছিল শবেকদরের ফজিলত অর্জন করা।
ইতিকাফের উপকারীতা ইতিকাফের মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। অহেতুক কথা, কাজ ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সংযত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে। ইতিকাফ অবস্থায় লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা সহজ হয়। ইতিকাফের মাধ্যমে মসজিদের সাথে সম্পর্ক তাজা হয় ও মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে ওঠে। ইতিকাফকারী দুনিয়াবী ব্যস্ততা থেকে দূরে অবস্থান করে ইবদাত বন্দেগির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে একদির ইতিকাফ করে, আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দকের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন। যার পরিমাণ আসমান ও জমিন থেকেও বেশি। অন্য বর্ণনায় এসেছে- রমজানের দশ দিনের ইতিকাফ এক হজ ও এক ওমরাহ সমতুল্য। [মাজমাউজ জাওয়ায়েদ]
এক হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ইতিকাফকারিরা মসজিদসমূহের পেরেক স্বরূপ। ফেরেশতারা তাদের সঙ্গী হয়, তাদের মসজিদে না পেলে ফেরেশতারা তাদের তালাশ করে, তারা অসুস্থ হলে তাদের সেবা-শুশ্রƒষায় হাজির হয় এবং প্রয়োজনগ্রস্ত হলে তাদের সাহায্য করে।
নবীজী সা. আরও বলেন, ইতিকাফকারী তার গোনাহ থেকেই ইতিকাফ করে।
হযরত আয়িশা রা. বলেন, নবীজী সা. সর্বদা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এবং তার ইন্তেকালের পর তার বিবিগণও ইতিকাফ করতে থাকেন। (বুখারি, মুসলিম)
ইতিকাফে প্রবেশ
ইতিকাফকারীর জন্য বিশ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতিকাফস্থলে প্রবেশ করতে হয়। কেননা ইতিকাফের একটি বড় লক্ষ্য লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান, যা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর একুশতম রাতও এরই অন্তর্ভুক্ত। তবে ফজরের নামাজান্তেও ইতিকাফে প্রবেশ করা যেতে পারে। এ মর্মে আয়শা রা. থেকে একটি হাদিস বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
ইতিকাফ থেকে বের হওয়া
ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ থেকে বেরিয়ে পড়া বৈধ। তবে সালাফদের কারও কারও মতে ঈদের রাত মসজিদে অবস্থান করে মসজিদ থেকেই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করা উত্তম। ইতিকাফের আরও প্রয়োজনীয় খুটিনাটি বিষয় রয়েছে, সেসব কোনো হক্কানি আলেম থেকে জেনে নেবেন। আল্লাহ তায়ালা এই ইবাদতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সঠিক নিয়মে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দেশজুড়ে গুমআতঙ্ক স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কোথায়?
জহির উদ্দিন বাবর
জুন'১৪
‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ এই দাবিটি ১৯৭৩ সালে উত্থাপন করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক নির্মল সেন। সেই সময়ের ভয়াবহ চিত্রের কথা তাঁর এই বাক্যটি দ্বারাই কিছুটা অনুভব করা যায়। ৪১ বছর পরে এসে আজও বাংলাদেশে ভয়াবহ সেই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। চারদিকে চলছে গুম-খুন আর অপহরণের মহোৎসব। আপনি-আমি কে কখন কোথা থেকে গুম-খুনের শিকার হয়ে যাবো এর কোনো গ্যারান্টি নেই। হয়ত আমার-আপনার স্বজনরা সৌভাগ্যবান হলে লাশ পেয়ে সান্ত¦না পাবে; আর হতভাগা হলে সেই সুযোগটুকুও তারা পাবে না। যেমন পায়নি ইলিয়াস আলী-চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য মানুষের স্বজনরা। আপনি যে কেউই হোন না কেন ঘর থেকে বেরিয়ে যে নিরাপদে পুনরায় ঘরে ফিরবেন এর ন্যূনতম গ্যারান্টিটুকুও আজ বাংলাদেশে নেই। চারদিকে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অরাজকতা ও অনাচারের ভয়াবহ চিত্র প্রতিদিনই আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি গণমাধ্যমের কল্যাণে। কিন্তু এর পরিণতি কী; কোথায় যাচ্ছে দেশ। তা নিয়ে কারো মধ্যে যেন কোনো ভাবনানেই। এ বিষয়ে যাদের উদ্বিগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কথা তাদের যেন কিছুই হয়নি। দিব্যি আরামেই কাটছে তাদের দিনকাল। জনগণের প্রতি একটি সরকার বা প্রশাসনের দায়বদ্ধতা না থাকলে যা হওয়ার তাই হ"েছ।
গত এক-দেড় বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভয়াবহ ঝড় বইয়ে গেছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার ঘৃণ্য মহড়ায় কত প্রাণ যে বিনাশ হয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার যে নির্লজ্জ উন্মাদনা আমরা এই সময়ে দেখেছি তাতে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা লজ্জায় হেট হয়ে যায়। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ জাতির কপালে এমন নেতৃত্ব জুটেছে
যারা নিজেদের স্বার্থ আর অভিলাস পূর্ণ করা ছাড়া আর কিছুই দেখে না। বরাবরই তাদের এই স্বার্থান্ধতা আর ক্ষমতার মদমত্ততার বলি হয়েছে সাধারণ মানুষ। নজিরবিহীন রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপ্টার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নামমাত্র একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো রকম একটি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। যেকোনো
কারণেই হোক রাজনৈতিক অস্থিরতাও সাময়িকভাবে কেটে যায়। কিন্তু এ জাতির কপালে বুঝি স্বস্তি আর সয় না! গত কয়েক মাস ধরে সারা দেশে ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে গুম-খুন আর অপহরণের ঘটনা। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় ওঠে আসছে ভয়াবহ চিত্র। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র এবং একজন বিশিষ্ট আইনজীবীসহ ৭ জন লোক দিনেদুপুরে অপহৃত হওয়া এবং দুদিন পর শীতলক্ষ্যায় তাদের লাশ ভেসে ওঠার পর থেকে দেশবাসীর মনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এখানেই থেমে থাকেনি এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে অপহরণ আর খুনের নৃশংস ও লোমহর্ষক ঘটনা। এ অবস্থায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ১৬ কোটি মানুষের।
ভয়াবহ চিত্র, উদ্বেগজনক খতিয়ান
আইন ও শালিস কেন্দ্র্র (আসক) এর প্রদত্ত তথ্য মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ২৬৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের পর ছেড়ে দেয়া হয় ২৪ জনকে। পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় ১৪ জনকে। কিন্তু ১৮৭ জনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজই মেলেনি। সংস্থাটির দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সালে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। ২০১৩ সালে ৭২ জন বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার এবং এর মধ্যে ৫৩ জন গুম হয়; মাত্র পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা বলছে, দেশের অপরাধ পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে অপহরণ বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। ২০১১ সালে দেশে অপহরণ ছিল ৭৯২ জন, ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৫০;
আর ২০১৩ সালে হয়েছে ৮৭৯। ২০১৪ সালের তিন মাসেই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১৯৬টি। গত তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রেই জানা যায়, জানুয়ারি মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৭০টি, দস্যুতা ৯৯টি, খুন ৪০৩টি, দাঙ্গা ৯টি, নারী ও শিশু নির্যাতন
১১২৭টি, অপহরণ ৬২টি, পুলিশ আক্রান্তে ঘটনা ১০৪টি, চুরির ঘটনা ৬৩৩টি-সব মিলিয়ে সারা দেশে জানুয়ারি মাসেই মামলা হয় ১৩ হাজার ১৮৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে ডাকাতির ঘটনা ৪৮, খুন ৩২৮, দাঙ্গা ৪, নারী ও শিশু নির্যাতন ১ হাজার ১৪৬, অপহরণ ৫৫, পুলিশ আক্রান্ত ৪৮, চুরি ৬১৫- সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৯৫৫। মার্চে ডাকাতি ৪৮, দস্যুতা ১০৫, খুন ৩৬১, দাঙ্গা ৬, নারী ও শিশু নির্যাতন ১ হাজার ৬৬৯, অপহরণ ৭৯, পুলিশ আক্রান্ত ৫৭, চুরি ৫৬৯-সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২২১।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও জনসংযোগ শাখা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের কাছে দুই হাজার ৬৪১ জনকে অপহরণের অভিযোগ আসে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৭ জনকে র্যাব উদ্ধার করে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ বলছে, বাংলাদেশে গত চার মাসে ৮৭টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- এবং ১৯ জনকে গুমের ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এসব মানুষদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারগুলোর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এর পর থেকে তারা গুম হয়েছেন অথবা তাদের লাশ পাওয়া গেছে।
কালো পোশাকের ভয়াল মূর্তি
সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির মধ্যে নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। সেনা, নৌ ও পুলিশ বাহিনী থেকে বাছাই করে চৌকস সদস্যদের নিয়ে ২০০৪ সালে তৎকালীন জোট সরকার গঠন করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব বাহিনী। সন্ত্রাস নির্মূলে এই বাহিনীটি অনেক ক্ষেত্রে
প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ র্যাব স্বাধীনতা পদকও পেয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার সিঁড়ি হিসেবে যখন থেকে র্যাবকে ব্যবহার করা শুরু করে তখন থেকেই বিতর্কিত হতে থাকে এই বাহিনীটি। এর আগেও বিভিন্ন সময় র্যাবের বিরুদ্ধে ছোটখাট অভিযোগ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের উ"চ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর এই বাহিনীর সুনাম সব ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, একে একে বেরিয়ে আসছে তাদের অনেক অপকর্মের কথা। এতদিন মূর্তিমান আতঙ্ক র্যাবের ভয়ে যারা মুখ খুলতে সাহস পাননি তারা নতুন করে অভিযোগের তীর তাদের দিকে ছুড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র্যাবের যে তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ ওঠেছে তাদের একজন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর জামাতা। শ্বশুরের আস্কারায় ওই র্যাব কর্মকর্তা অনেক অন্যায়-অপকর্ম করেছেন বলে এখন একে একে বেরিয়ে আসছে। ভয়াল কালো পোশাকের নিচে কুৎসিত যে চিত্র তা পুরোটাই ফাঁস হয়ে গেছে জনগণের সামনে। এখন বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে এই বাহিনী বিলুপ্তির দাবি উঠছে। যে বিএনপি সরকার র্যাব গঠন করেছিল তারাই এখন র্যাব বিলুপ্তির জন্য সবচেয়ে বেশি সরব। তাদের বক্তব্য হলো, যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাত জনগণের রক্তে রঞ্জিত সে বাহিনীর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সরকার এই দাবিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিতে চা"েছ। তাদের বক্তব্য হলো, একটি বাহিনীর কিছু সদস্য অনৈতিক কাজে জড়িয়ে গেলে পুরো বাহিনী বিলুপ্ত করার দাবি যৌক্তিক নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা জোর গলায় চাপা পেটা"েছন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের কিছু সদস্যও অনৈতিক কাজে জড়িত। তাহলে কি এই দুই বাহিনীও বিলুপ্তির দাবি করবে বিরোধী দল? তাদের যুক্তি সুন্দর, মাথায় ব্যথা থাকলে মাথা কেটে ফেলে দেয়া সমাধান নয়। তবে তাদের এটাও মনে রাখা দরকার, শরীরের কোনো অঙ্গে পচন ধরলে তা কেটে ফেলে দিয়েই পুরো শরীর রক্ষা করতে হয়। আর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে র্যাবের তুলনা চলে না। কারণ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক; আর পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিবেদিত। উভয়টিই একটি দেশের স্থায়ী বাহিনী। কিন্তু র্যাব কোনো স্বতন্ত্র বা স্থায়ী বাহিনী নয়। বিশেষ প্রয়োজনে এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল; এখন প্রয়োজন অনুভব না করলে বা এর দ্বারা
ক্ষতির আশঙ্কা করলে তা বিলুপ্তি করতে আপত্তি কোথায়? নির্বিকার সরকার
সারা দেশে গুম-খুনের এই মহোৎসব সরকারের মধ্যে যে কোনো ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছে তা বলা যাবে না। জনগণের টাকায় লালিত-পালিত যে বাহিনীর দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা দেয়া তারাই আজ মূর্তিমান অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। অথচ সরকার তাদের পক্ষেই সাফাই গাইছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও সরকার প্রথমেই কোনো অ্যাকশনে যায়নি; হাইকোর্টের নির্দেশের পর অনেক গড়িমসি করে সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তাদেরকে সরাসরি হত্যা মামলায় না জড়িয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এমনও হতে পারে জনগণের দৃষ্টি সে দিক থেকে ফিরে যাওয়ার পর সরকার তাদেরকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। কারণ সরকার তো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। যে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই সেই সরকার ক্ষমতায় দাপটের সঙ্গে টিকে আছে এই বাহিনীর কারণেই। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বেপরোয়া চড়াও হয়ে র্যাব-পুলিশ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। সুতরাং সরকারের কাছে এই বাহিনীর সাতখুন মাফ যে হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের দেশে সব সরকারই কমবেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। তবে বর্তমান সরকার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিয়মতান্ত্রিক মিটিং-মিছিলে কোনো উস্কানি ছাড়াই নির্বিচারে গুলি চালানোর ন্যাক্কারজনক উদাহরণ এই সরকার স্থাপন করেছে। পেটোয়া বাহিনী র্যাব-পুলিশ; কখনো কখনো বিজিবি-সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় মাঠে নামিয়েছে আওয়ামী লীগ। থানায় থানায় একটি বিশেষ জেলার লোক বসিয়ে পুরো রাজধানীতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে তারা। এজন্য এসব বাহিনী যখন অন্যায়-অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সরকারের নৈতিক মনোবল নেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। নিজেরা নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রহীন হলে অন্যের অন্যায়-অপকর্মের বিচার কেউ করতে
পারে না।
এ জাতির কপালে বরাবরই অত্যন্ত নির্লজ্জ, ব্যক্তিত্বহীন ও নীচু মানসিকতার সরকার জুটেছে। কেউ বেশি করেছে, কেউ কম। দিন দিন অতীতের রেকর্ড শুধুই ভঙ্গই হ"েছ। অথচ বাইরের রাষ্ট্রগুলোর চিত্র যখন আমরা দেখি ভাবতেই ভালো লাগে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ফেরি দুর্ঘটনায় কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরপরই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছে; রাষ্ট্রপতি কেঁদে কেঁদে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, দায়িত্বে অবহেলার জন্য পুরো কোস্ট গার্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। গত বছর লাটভিয়ায় একটি ভবন ধসে শ’খানেক লোক মারা যাওয়ার ঘটনায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পুরো দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। আমাদের পাশের দেশ ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার দায় নিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা বারবার ঘটেছে। এই উদাহরণগুলো ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন শাসকের প্রমাণ বহন করে।
অথচ আমাদের দেশে রানা প্লাজা ধসে সহ¯্রাধিক মানুষ মারা যাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ‘ঝাঁকুনি তত্ত্ব’ বের করেন।
নিজের বেড-রুমে সাংবাদিক দম্পতি নির্মমভাবে খুন হওয়ার পরও দেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেন, ‘কারো বেড-রুমে নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব না’। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় লঞ্চ ডুবে শত শত লোক মারা যাওয়ার পরও নৌমন্ত্রী সুন্দর স্যুট-কোট পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণাতেই শেষ করেন নিজের দায়িত্ব। আবার এই টাকা যেন দিতে না হয় সেজন্য পেট কেটে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগও ওঠে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। পিতার কোলে সন্তান সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পরও যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারেন ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন’ সে দেশের শাসকশ্রেণীর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র যে নেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গুম-খুনের শেষ কোথায়?
চার দিকে চাপা আতঙ্ক; পুরো দেশই যেন গুম-খুনের মৃত্যুপুরী। কার জীবনে অথবা কার পরিবারে কবে নেমে আসবে দুর্ভাগ্যজনক ট্রাজেডি কেউ
বলতে পারে না। যারা প্রিয়জন হারান কেবল তারাই বলতে পারবেন এর জ্বালা যে কত বিষের। একজন মানুষের
গুম-খুন হওয়া মানে এর সঙ্গে জড়িত একটি পরিবার; একটি সমাজ। খুনের চেয়েও গুমের ভয়াবহতাটা আরো মারাত্মক। কারো প্রিয়জন যেভাবেই হোক মারা যাওয়ার পর তাকে নিজ হাতে দাফন-কাফন করতে পারলে মনে কিছুটা প্রশান্তি বোধ হয়। কিন্তু কেউ যদি জানেনই না তার প্রিয়জন বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তাহলে এর দুঃখ ও বেদনা যে কত কঠিন তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। যাদের প্রিয়জন গুম হয়েছেন তাদের আকুতি একটাই অন্তত মৃতদেহটি যেন তারা পান; নিজ হাতে যেন দাফন-কাফন সারতে পারেন আপনজনের। আর বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের দাবি হলো, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। সরকার যত নৈতিকতা ও চরিত্রহীনই হোক না কেন এর জন্য তাদেরকেই আন্তরিক হতে হবে। সরকার চাইলেই পারবে দেশের মানুষকে চলমান আতঙ্ক থেকে মুক্তি এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে। #
gnvb n‡Ri cÖ¯‘wZ, c_ I cv‡_q
L›`Kvi gbmyi Avng`
মে'১৪
†`L‡Z †`L‡Z AveviI gnvb n‡Ri cÖ¯‘wZ †bIqvi mgq P‡j G‡jv| cweÎ KvÕevi ¯^‡cœ we‡fvi nevi w`b G‡jv| Rxeb‡K bZzb K‡i mvRv‡bvi G gnv †mŠfvM¨ hv‡`i Rb¨ †jLv n‡q‡Q GLb Zv‡`i Avbw›`Z nevi Ges G gnvb Bev`‡Zi Rb¨ me©vZ¥K cÖ¯‘wZ †bqvi mgq| Avb‡›`i K_v n‡jv, Gevi we‡k¦i jv‡Lv jv‡Lv gymwj‡gi mv‡_ evsjv‡`‡ki j¶vwaK bibvixI GB gnvb Bev`Z Av`v‡qi my‡hvM jvf Ki‡eb| ZvB Dchy³ m½x mÜvb K‡i GLb †_‡KB n‡Ri Rb¨ kvixwiK-gvbwmK cÖ¯‘wZ †bqv cÖ‡qvRb| KviY Dchy³ cÖ¯‘wZ I h_vh_ m½x wbe©vP‡bi Afv‡e Avcbvi mviv Rxe‡bi Kvw•¶Z GB gnvb Bev`ZwU ¶wZMÖ¯— n‡q †h‡Z cv‡i| †ZgbwU NU‡j Avcbvi Aby‡kvPbvi Aš— _vK‡e bv| A‡bK †¶‡Î Ggb ¶wZI n‡q hvq hvi Kvi‡Y n‡Ri `vwqZ¡ †_‡K `vqgy³ nIqv hvq bv| A_P `vqgyw³i welqwU Avcbvi Rb¨ AZ¨ন্ত Rরুwi| G cÖm‡½ gnvb Avjvn& Bikv` K‡ib– Ôgvby‡li g‡a¨ hvi †mLv‡b hvIqvi mg_©¨ Av‡Q, Avjvni D‡Ï‡k IB N‡ii nR Kiv Zvi Aek¨-KZ©e¨| Avi †KD cÖZ¨vL¨vb Ki‡j †m †R‡b ivLyK, wbðqB Avjvn wek¦RM‡Zi gyLv‡c¶x bbÕ| [Av‡j Bgivb: 97]
G cÖm‡½ wcÖqbex mjvjvû AvjvBwn Iqvmvjvg Bikv` K‡ib- Ô‡h e¨w³ evBZzjvn ch©š— †cuŠQvi cv‡_q I evn‡bi [mvwe©K e¨‡qi gvwjK nIqv m‡Ë¡I nR Ki‡jv bv| †m Bûw` n‡q giyK ev bvmviv n‡q giyK Zv‡Z Avgvi †Kv‡vb `vq `vwqZ¡ †bBÕ| cvkcvwk n‡Ri AZzjbxq dwRjZI hv‡Z Avcbvi nvZ Qvov bv nq †m w`‡K j¶¨ ivLv KZ©e¨| n‡Ri dwRjZ cÖm‡½ Avjvni ivmyj mv. Bikv` K‡ib - Ôn‡R gvei“‡ii cÖwZ`vb n‡”Q GKgvÎ RvbœvZÕ [eyLvwi kwid: nvw`m bs 1773] Ab¨Î wZwb Bikv` K‡ib- Ô†h e¨w³ nR K‡i Ges Zv‡Z †Kv‡bv AkxjZv ev cvcvPv‡i wjß nq bv †m Zvi Rb¥w`‡bi gZ wb®úvc n‡q wd‡i Av‡mÕ| [gymwjg kwid] wZwb Av‡iv Bikv` K‡ib- †Zvgiv nR I Dgiv jvMvZi Av`vq Ki‡e, KviY G `yÕwU `vwi`ª¨ I cvcmg~n‡K Ggbfv‡e `~i K‡i †`q, †hgb Kvgv‡ii nuvci †jvnv, ¯^Y© I iƒcvi gwiwPKv `~i K‡i †`q| gKeyj n‡Ri mvIqve GKgvÎ RvbœvZÕ [wZiwgwR I bvmvwq ] G QvovI eû nvw`‡m n‡Ri AZzjbxq dwRjZ ewY©Z n‡q‡Q| cÖ‡qvRbxq Ávb I h_vh_ cÖ¯‘wZi Afv‡e GB dwRjZ hw` Avcbvi nvZQvov n‡q hvq Z‡e ZvI n‡e LyeB `ytLRbK e¨vcvi|
dz‡ji m‡½ †hgb KuvUv _v‡K †Zgwb nR bvgK G gnvb Bev`‡Zi m‡½I Rwo‡q Av‡Q Z¨vM wZwZ¶vi A‡bK KuvUv| GB Bev`‡Zi c_wU evn¨Z wKQzUv KÈKvKxY©| G‡Z Z¨v‡Mi wKQz w`K‡Zv i‡q‡Q gnvb weavZvi c¶ †_‡K cÖ`Ë| K‡ói †m c_UzKz mKj‡KB cvwo w`‡Z nq| AZ¨š— ˆah©mn Avbw›`Z wP‡Ë me Kó‡K eiY K‡i wb‡Z nq| me©iKg weiw³ cÖKvk Kiv †_‡K wb‡R‡K mš—c©‡Y euvwP‡q ivL‡Z nq| G c_UKz cvwo w`‡q ev›`v Zvi wcÖqZg gvÕe~‡`i Lye mvwbœ‡a¨ †cuŠ‡Q hvq| gnvb Avjvn& hv‡K fv‡jvev‡mb Zvi Rb¨ Gc_ cvwo †`qv mnR K‡i †`b| †m Z¨v‡Mi cÖwZwU c‡` Abyfe K‡i D`¨g I Avb›`| Avi wKQz KÈK ˆZwi K‡i gvbyl| †m me KȇKi g‡a¨ c‡o †M‡j GB gnvb Bev`ZwU Kvw•¶Z gv‡b m¤úbœ Kiv m¤¢e nq bv| wKQz cvw_©e ¯^v_© mÜvbx gvby‡li ¯^v_© wPš—vi RwUj N~Y©ve‡Z© nvwi‡q hvq n‡Ri gZ gnvb Bev`‡Zi A‡bK Avgj I dwRjZ| hv ü`q‡K AvnZ I we¶yä K‡i| GKwU †jLvi gva¨‡g GB RwUj mgm¨vi mgvavb †`qv †Zv Avi m¤¢e bq| Z‡e Avgi‡`i mxgve× AwfÁZvi Av‡jv‡K Avb›` †e`bvi wKQz Abyf~wZ wgwk‡q Avjvni wcÖq †gngvb n‡Z AvMÖnx ev›`v‡`i Rb¨ wKQz civgk© Z‚‡j ai‡Z PvB| hw` Gi †Kv‡bv GKwU civgk© Avjvni †Kv‡bv ev›`vi DcKv‡i G‡m hvq Z‡eB Avgvi G †jLv mv_©K n‡e|
1. DËg m½x wbe©vPb Ki“b
G gnvb md‡ii Rb¨ mva¨gZ †LuvR Lei wb‡q h_vm¤¢e DËg m½x wbe©vPb Kiv PvB| gvei“i nR Av`v‡qi Rb¨ GwU GKwU ¸i“Z¡c~Y© j¶Yxq welq| Avcbvi Kv‡djvi me m`m¨B hw` †bKKvi e¨w³ nb Ges n‡Ri gvmAvjv gvmvwqj m¤ú‡K© AwfÁ AvwjgI Kv‡djvq _v‡Kb, Zvn‡j Avcbvi nR Avjvni B”Qv&q gvei“i nIqvi GKwU eo ai‡bi mnvqZv n‡q hv‡e| †Zgb Kv‡djv cvIqv Aek¨ h‡_ó Kómva¨ e¨vcvi| AwZ‡Z nhiZ nv‡dw¾ ûRyi ivn. Zvi mxwgZ msL¨K m½x‡`i wb‡q †h ¶y`ª nR¡ Kv‡djv ˆZwi K‡i wQ‡jb Zv G‡¶‡Î D¾¡j `„óvš— n‡q Av‡Q| cixw¶Z wb‡j©vf n°vbx Av‡j‡gi ZË¡veav‡b A_ev `vIqvZ I Zvejx‡Mi ej‡q †Kvb †Kvb †¶‡Î Ggb Kv‡djv cvIqvi Avkv Kiv hvq| mem`m¨ †bKKvi –Ggb Kv‡djv cvIqv m¤¢e bv n‡j Aš—Zt AwaKvsk m`m¨ †bKvi nIqvi m¤¢vebv Av‡Q Ggb Kv‡djvq kixK nIqvi †Póv Ki“b| GgbwU m¤¢e n‡jI Avcwb Avcbv‡K nqZ euvwP‡q ivL‡Z cvi‡eb| GKwU ¶y`ª m½x ej‡q wb‡R‡K kyw× I mrK‡g©i g‡a¨ †i‡L n‡Ri gnvb AvgjwU wb¯‹jylfv‡e m¤úbœ Ki‡Z cvi‡eb| ZvI m¤¢e bv n‡j Aš—Zt Avcbvi Av¯’vfvRb AwfÁ `yÕGKRb ci‡nRMvi Av‡jg Ges wKQz msL¨K †bKKvi mv_x Av‡Q Ggb Kv‡djv Aek¨B nIqv PvB| Ab¨_vq n‡Ri Av`e m¤ú‡K© Am‡PZb m½x‡`i fyj KvRKg© I AmshZ bvbvwea AvPiY Avcbvi GB gnvb I e¨qeûj Avgj‡K ¶wZMÖ¯— Ki‡e|
2. Kv‡djvi gyqvwjg Avwjg wK bv j¶¨ Ki“b
A‡bK nR Uªv‡fjm wb‡R‡`i evwbwR¨K ¯^v‡_© †e G‡jg e¨w³‡`i‡KI gyqvwjg wb‡qvM K‡i _v‡K | n‡Ri md‡i A‡bK MÛg~L©I gyqvwjg †m‡R e‡m| Avcwb hw` Ggb gyqvwj‡gi Là‡i c‡ob Avi wb‡RI n‡Ri gvmAvjv gvmvwqj m¤ú‡K© AwfÁ bv nb, Zvn‡j Avcbvi nR eo iK‡gi SzwKi g‡a¨ co‡e| KviY wbwðZ K‡iB ejv hvq Giv n‡Ri i“n ev cÖvYkw³ Kx Ges KZUv ggZ¡‡ev‡ai m‡½ n‡Ri Avgj¸‡jv m¤úbœ Ki‡Z nq G m¤ú‡K© D`vmxb| Giv wb‡R‡`i gZ K‡i AvbyôvwbKZv †kl K‡i `vqgyw³i †NvlYv w`‡Z AvMÖnx _v‡K| Avg‡ji ï×Zv I cÖvYeš—Zvi welqwU G`i Kv‡Q †Zgb eo e¨vcvi bq| A‡bK †¶‡Î gvmAvjv fv‡jv K‡i bv †R‡bB e‡j †`q Avgiv Gfv‡eB welqwU GZKvj a‡i K‡i AvmwQ|
welqwU ¯úó Kivi Rb¨ G cÖm‡½ Avgvi AwfÁZvi `ywU NUbv D‡jL KiwQ| gnvb Avjvni AbyMÖ‡n n‡Ri md‡i wM‡q GKevi GK gyqvwjg mv‡ne‡K †`Ljvg hyeK I my¯’ mej wKQz AbyPimn wZwb 10B wRjnR Zvi wba©vwiZ ¯’v‡b wekªv‡g _vK‡jb | Avi Ab¨ wKQz msL¨K nvwR mv‡ne‡K Zv‡`i KsKi †g‡i †`qvi civgk© w`‡jb| [A_P wgbvq wM‡q kqZvb‡K wZbw`b KsKi gviv IqvwRe| Ges kwiqZm¤§Z KviY Qvov ·Z ΓwU Ki‡j `g IqvwRe n‡q hvq| cieZ©x‡Z G NUbvq mswkó e¨w³iv gvmAvjv †R‡b `g Av`vq K‡ib Ges gyqvwjg‡K KwVb frmbvq RR©wiZ K‡ib| Ges Zv‡`i m¤ú‡K©i g‡a¨ GKwU ¯’vqx dvUj m„wó n‡q hvq| hv LyeB `ytLRbK| wØZxq NUbvwU n‡jv BRwZev m¤úwK©Z GKwU gvmAvjv wb‡q| nR welqK cÖvq me wKZv‡e GK_v wjwce× Av‡Q †h ZvIqv‡di †¶‡Î ÔigjÕ [`yKvua mÂvjb K‡i Nb c`‡¶c exi `‡c© Pjv] ïay wZb P°‡i Ki‡Z nq, Z‡e BR‡Zev [Bniv‡gi Pv`i Wvb eM‡ji wbP w`‡q †ei K‡i Zvi Dfq gv_v evg Kuv‡ai Ici †d‡j ivLv] envj ivL‡Z nq cyY© mvZ P°‡i| Avgv‡`i AÁ gyqvwjg mv‡ne `yÕRb Av‡j‡gi Dcw¯’wZ‡ZB G wel‡q fyj w`K wb‡`©kbv w`‡jb| mZK© Kiv n‡j wZwb ej‡jb: Avgiv eo‡`i m‡½ Gfv‡e K‡i AvmwQ| wKZve †`Lv‡bv n‡jI wZwb Zvi GKMuy‡qwg Z¨vM Ki‡jb bv| ej‡jb Gfv‡eB Avgiv K‡i AvmwQ| Avgiv j¶ Kijvg †h G‡nb gyqvwjgiv n‡Ri †¶‡Î wb‡R‡`i‡K A‡bK ei cwÊZ I me©Rvš— iƒ‡c cÖ`k©b K‡i| nvwR‡`i mvg‡b Zv‡`i fveg~wZ© A¶zbœ ivLvi †Póv K‡i| n‡Ri †¶‡Î Gai‡bi AÁ gyqvwj‡gi ms¯úk© †_‡K †eu‡P _vKv LyeB Ri“wi|
3. `ywbqv`vi cxi gvkv‡qL I we`vwZ‡`i ms¯úk© †_‡KI euvPzb
`yf©vM¨RbKfv‡e Kv‡djv hw` †Kv‡bv fÊcxi, fÊgywi` A_ev we`vwZ m¤cÖ`v‡qi †jvKRb _v‡K Zvn‡j Avcbvi n‡Ri Avgj bvbv fv‡e ¶wZMª¯— nIqvi SzwK i‡q‡Q| A‡bK Uªv‡fjm Av‡Q nvwR MÖn‡Y Zv‡`i †Kv‡bv kZ© †bB| wbשvwiZ As‡Ki A_© Rgv w`‡Z cvi‡jB Zv‡K MÖnY Kiv nq| †Lv`v bvLv¯—v Avcwb hw` Ggb †Kv‡bv Kv‡djvi mv‡_ Rwo‡q c‡ob Zvn‡j we`vwZiv Avcbvi Avg‡j h‡_ó weNœ NUv‡e| we`vwZiv Avivdv‡Zi gq`v‡b Ges wgbvq cÖPzi DrcvZ K‡i _v‡K| we`vwZiv Mvwoi g‡a¨ hyewZ‡`i j¶¨ K‡i bvbv iKg MRj †M‡q _v‡K Ges wewfbœ Akxj K_v I fve fw½ cÖ`k©b K‡i _v‡K| hv m¤ú~Y©iƒ‡c nvivg| wKš—y Bniv‡gi †mB Ae¯’vq we`vwZ‡`i _vgv‡Z hvIqUvI eo iK‡gi SywKc~Y© KvR| weavq n‡Ri Av`e i¶v‡_© Zv bxi‡e mn¨ Kiv Qvov Dcvq _v‡K bv|
weMZ n‡Ri †gŠmy‡g ÔR‰bK wecexÕ we`vwZ Zvi m½x‡`i wb‡q Gfv‡eB A‡bK nvwRi cweÎ mdi‡K Avivdv‡Zi gq`v‡b Ges wgbvq KjywlZ K‡iwQ‡jv| hvi eY©bv w`‡ZI i“wP‡Z ev‡a| Ggb †¶‡Î eySvB hvq bv †h GUv †Kv‡bv gnvcweÎ Avg‡ji mdi, bvwK Aeva we‡bv`‡bi GKwU cÖ‡gv` ågY?
4. gnvb Avjvni Kv‡Q wbqwgZ ZvIwdK cÖv_©bv Ki‡Z _vKzb
n‡Ri gZ DuPz gv‡bi G AZzjbxq Bev`Z h_vh_fv‡e Av`v‡qi Rb¨ gnvb Avjvni Kv‡Q ZvIwdK cÖv_©bv K‡i wbqwgZ `yÕAv Ki“b| GRb¨ w`b ev iv‡Zi †Kv‡bv GKwU mgq wbשviY Ki“b| mgwc©ZwP‡Ë AkÖ“cvZ K‡i GKvš— dwiqv‡`i gva¨‡g gnvb iveŸyj Avjvwg‡bi `iev‡i AviR K‡i ejyb ÔcÖfy! ZzwgB Avgvi gZ bMY¨‡K hLb †Zvgvi mvwbœ‡a¨ †Zvgvi N‡i Avgš¿Y Rvwb‡q‡Qv ZLb ZzwgB Avgv‡K G gnvb Bev`Z †Zvgvi gwR© †gvZv‡eK Av`vq Kivi ZvIwdK w`‡q `vI| Zzwg hw` mnR K‡i bv `vI Zvn‡j me †Póv K‡iI n‡¾ gvei“i Av`vq Kiv Avgvi c‡¶ m¤¢e bq|Õ GQvovI bvbvfv‡e wb‡Ri g‡bi K_v wcÖqZg gvIjvi Kv‡Q cªwZw`b Ly‡j ejyb Mfxi AvMÖn Avi e¨K‚jZv wb‡q| Avcbvi nR Mg‡bi myLei e¨vcKfv‡e cÖPvi bv K‡i Dchy³ I †bKKvi ïfv_x©‡`i Kv‡Q e¨³ K‡i Zv‡`i Kv‡QI Avš—wiK fv‡e `yÕAv Pvb| ¯§Z©e¨ †h, nvw`‡mi fvl¨g‡Z `yÕAvB n‡”Q mKj Bev`‡Zi gMR Ges Nwbô `yÕAvi gva¨‡gB ev›`v I gvIjvi gv‡S Mfxi m¤úK© ˆZwi nq|
5. nR wel‡q weÁ Av‡jg‡`i †jLv eBcy¯—K wbqwgZ cvV Ki“b
nR wel‡q weÁ Av‡jgM‡Yi †jLv eBcy¯—K wbqwgZ cvV Ki“b| wb‡Ri g‡a¨ n‡Ri Av‡eM I fv‡jvevmv e„w×i Rb¨ n‡Ri dwRjZ, BwZnvm I weÁ Av‡jg‡`i nR mdi welqK eBcy¯—K †hgb cvV Ki‡eb, †Zgwb n‡Ri Ri“wi gmAvjv gvmvwqj I Av`e m¤úwK©Z eBcy¯—KI cvV Ki‡eb| Z‡e gvmAvjv gvmvwqj wel‡q ïay Avcbvi cwVZ eB‡qi Ici wbf©ikxj bv †_‡K weÁ Av‡j‡gi m‡½I Avjvc Av‡jvPbv Ki‡eb| ïay eB cvV Kiv G †¶‡Î h‡_ó bq| GKRb weÁ Av‡j‡gi ZË¡veav‡b e¨w³MZfv‡e n‡Ri we‡kl Ri“wi wKQz welq fv‡jvfv‡e AvqË K‡i wb‡Z cvi‡j LyeB myweav n‡e|
G †¶‡Î weÁ Av‡j‡gi ZË¡veav‡b cwiPvwjZ nR cÖwk¶‡Y Ask MÖnYI DcKvix n‡q _v‡K| Z‡e me wKQz g‡b ivLvi Rb¨ Aw¯’i nevi †Kv‡bv cÖ‡qvRb †bB| Dchy³ gyqvwjg †¶ÎgZ mnvqZv Ki‡eb| wb‡Ri mv‡a¨i †fZ‡i Aw¯’iZvgy³fv‡e hZUzKz Avcwb PP©v Ki‡Z cv‡ib ZZUyKzB gnvb Avjvni `qv AvKl©Y Ki‡e e‡j Avkv Kiv hvq|
6. gvnivg gwnjv mv‡_ _vK‡j c„_K i“‡gi kZ© Ki“b
AZ¨š— e¨qeûj gnvb GB Bev`ZwU my›`i I †Mvbvngy³fv‡e Av`vq Kivi mnvqK cwi‡ek jv‡fi Rb¨ mv‡_ gvnivg gwnjv [gv, †evb, ¯¿x] _vK‡j c„_K i“‡gi kZ© Ki“b| G‡Z LiP GKUz †ewk n‡jI Avcwb A‡bK w`K †_‡K wbivc` _vK‡Z cvi‡eb| †hgb c`©vi gZ GKwU Ri“wi diR i¶v Kiv mnR n‡q hvq Ges cvi¯úwiK Kjn-weev` †_‡KI evuPv hvq| Avi G `ywU welq [c`©vnxbZv I Kjn-weev`] Ggb hv n‡Ri gnvb Bev`Z‡K AZ¨š— ¶wZMÖ¯— K‡i| weij e¨wZµg ev‡` Uªv‡fjm¸‡jv mvaviYZ Gme wel‡q †Zgb 哇¶c K‡i bv|
7. bR‡ii wndvR‡Zi Af¨vm M‡o Zzjyb
n‡Ri †¶‡Î AmZK© n‡j †h †Mvbvn wU e¨vcKfv‡e NUvi Ges gnvb n‡Ri mIqve I eiKZ‡K bó Kivi Avk¼v _v‡K Zvn‡jv bR‡ii Amshg| n‡Ri †¶‡Î A‡bK gwnjv nvwR c~e© Abykxj‡bi Afv‡e kiqx c`©v i¶v K‡i Pj‡Z e¨_© nb| G †¶‡Î cyi“l nvwRMYI hw` AmZK© nb Zvn‡j e¨vcKfv‡e bR‡ii †Mvbvn NU‡Z cv‡i hv †_‡K †eu‡P _vKv diR| Aek¨ mZK© _vKvi Rb¨ c~Y© †Póv m‡Ë¡I †Kv‡bv wePz¨wZ NU‡j Zv gnvb Avjvn wbR¸‡Y ¶gv Ki‡eb Ges Zv Aš—‡i †Kv‡bv ¶wZKi cÖfve we¯—vi Ki‡e bv e‡jB Avkv Kiv hvq|
8. ˆah© I ZvKIqv Abykxjb Ki“b
G gnvb md‡ii Rb¨ me‡P Ri“wi cv‡_q n‡jv ZvKIqv I ˆah©| gnvb Avjvn ZvÔAvjv, n‡Ri †¶‡Î ZvKIqv‡K m‡e©vËg cv‡_q †NvlYv K‡i Bikv` K‡i‡Qb- Ô†Zvgiv cv‡_q Aej¤^b K‡iv, Avi m‡e©vËg cv‡_q n‡jv ZvKIqvÕ| Avi ˆah© cÖm‡½ Bikv` n‡q‡Q- Ôgnvb Avjvn& ˆah©kxj‡`i mv‡_ i‡q‡QbÕ| GB ZvKIqv I ˆah© e¨wZZ n‡¾ gvei“i [†Mvbvngy³ I gvKeyj nR] Av`vq Kiv m¤¢e bq| gvei“i n‡Ri Rb¨ wZbwU k‡Z©i K_v cweÎ †KviAv‡b ewY©Z n‡q‡Q| Zv n‡PQ- Akxj K_v I KvR †_‡K, Ab¨vb¨ cvcvPvi Ges ZK© weZK© †_‡K †e‡P _vKv| myZivs cweÎ KvÕevi c‡_i hvÎxiv GLb †_‡KB ZvKIqv, Z¨vM I ˆa‡h©i Abykxjb ïi“ Ki“b|
9. gvBK m‡½ wb‡q AwZwi³ eqvb K‡i Ggb Kv‡djv †_‡KI `~‡i _vKzb
n‡Ri †¶‡Î Avivdv‡Zi gq`v‡b Ges wgbvq nvwRMY mg‡eZ K‡i wKQz mgq ZvKIqv I nR m¤úwK©Z Ri“wi w`K wb‡`©kbv msw¶ßfv‡e †`qv †`vlbxq bq| eis fv‡jv| Z‡e †ckv`vi gyqvwjg‡`i AwZwi³ I AcÖvmw½K eqvb n‡Ri Mvw¤¢h©c~Y© I mybœZ c×wZi Avg‡ji Rb¨ A‡bK †¶‡Î Aš—ivq n‡q `uvovq| †m Kvi‡Y m¤¢e n‡j Kv‡djv wbe©vP‡bi Av‡M G welqwUI j¶ Ki“b| gnvb Avjvn Avgv‡`i‡K n‡¾ gvei“‡ii ZvIwdK `vb Ki“b!
cybð :
nR I cweÎ evBZzjvn kwi‡di cÖwZ fv‡jvevmv wb‡q Avjvni AvMÖnx ev›`v‡`i DcKviv‡_© Avgv‡`i mxwgZ AwfÁZvi Av‡jv‡K K‡qKwU civgk© Zz‡j aiv n‡jv| Kj¨vYKvwgZvB G †jLvi D‡Ïk¨| wbeÜKvi †Kv‡bv we‡kl Uªv‡fjm ev †Kv‡bv nR Kv‡djvi mv‡_ RwoZ bq| gnvb
Avjvn Avgv‡`i G kÖgUzKz Keyj Ki“b!
চলমান উপজেলা নির্বাচন :
আমরা কী বার্তা পেলাম?
কামরুল হাসান রাহমানী
এপ্রিল'১৪
২৪.০৩.১৪ ইংরেজি তারিখে লেখাটি যখন লিখছি তখন ৪র্থ দফা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে- এ দফায় এসে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিগত তিনদফায় পেছনে পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আগের দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। আ.লীগের একাধিক মন্ত্রী-এমপি দাবি করেছেন- এ দফার নির্বাচন পেছনের সকল নির্বাচন থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। মন্ত্রী হাসান মাহমুদ খন্দকার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন- নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সাঈদীপুত্র বিজয়ী হতে পারতো না। সরকাল জোর গলায় দাবি করছে সারাদেশে বিপুল উতসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
এদিকে বিএনপিসহ ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ অন্যান্য পক্ষগুলো দাবি করছে- ‘সরকার পেশিশক্তি ব্যবহার করে শুধুমাত্র ভোট কারচুপি বা জালভোটে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তারা রীতিমত ভোট ডাকাতির মহোতসব পালন করেছে। সরকারী দলের ক্যাডার ও গুণ্ডাবাহিনী এবার তাদের অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সরকারি দলে হয়ে কাজ করেছে। এবং প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থাই তারা গ্রহণ করেনি।’
প্রিয় পাঠক! আসলে কী ঘটেছে, বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য আমাদের মিডিয়ার সাহায্য নেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। যেহেতু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কোনো রেকর্ড সর্বসাধারণের কাছে সংরক্ষিত থাকে না- তাই তাদের জন্য প্রিন্ট মিডিয়াই শেষ ভরসা। সে মতে আমরা গত ২৩ ও ২৪ মার্চের প্রিন্ট মিডিয়ার কিছু প্রতিবেদন ও রিপোর্ট তুলে ধরছি।
ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার ‘উতসব’ ছিল নির্বিঘœ
এই ‘উতসব’কে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ৪০টি উপজেলায় সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। চলমান উপজেলা নির্বাচনে গতকাল চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণে এই সহিংসতায় নিহত হন আরও চারজন। আহতের সংখ্যা কমপক্ষে আড়াইশ।
দুপুর গড়ানোর আগেই ভোটের বাক্স ভর্তি! নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনতাই ও আগুন, এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট জালিয়াতি। কাল এ রকম দৃশ্য ছিল অনেক ভোটকেন্দ্রেই।
নিহত চার
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। দ্বিতীয় ধাপে অল্প কিছু এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটে, নিহত হন একজন। তৃতীয় ধাপে মারা যান তিনজন, ভোট জালিয়াতির ঘটনাও বেড়ে যায়। আর চতুর্থ ধাপে সহিংসতা-জালিয়াতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। গতকাল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার বরুড়া ও ঝালকাঠির রাজাপুরে একজন করে চারজন নিহত হয়েছেন।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র দখল ও গণসিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা ১১টার মধ্যে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনেকটাই শেষ পর্যায়ে ছিল। বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় কেন্দ্র দখলের মহোতসব করেছেন সরকারদলীয় সমর্থকদের প্রার্থীরা। (প্রথমআলো ২৪.০২.১৪)
কেন্দ্র দখল জাল ভোট, সহিংসতায় নিহত ৪
সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘাত সহিংসতার মধ্যদিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে চতুর্থ ধাপে ৯১ উপজেলা নির্বাচন। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন চারজন।...নির্বাচনের আগেরদিন সহিংসতা রোধে কমিশনের পক্ষর থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে তেমন কোনো ফল হয়নি। ব্যালট ছিনতাইকারীদের গুলি করার নির্দেশও কার্যকর হয়নি। বরং কোথাও কোথাও প্রশাসনের সহযোগিতায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করছে প্রতিপক্ষ। কিছু স্থানে ভোট গ্রহণের আগেই ব্যালট ভর্তি বাক্স পাওয়া যায়। গত তিন ধাপের চেয়ে এবার সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়েছে।
সোনাগাজীতে রাতেই দখল ভোটকেন্দ্র
গভীর রাতেই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল, প্রার্থীর ওপর হামলা, এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়া, ভোটারদের ভয়ভীতি ও কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।...
অশান্ত রূপসা ও তেরখাদা
৫ উপজেলায় আজ বিএনপির হরতাল। ব্যালট ছিনতাইকালে গুলিতে আহত ১১।
খুলনার রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা রোববার নির্বাচনের দিন ছিল অশান্ত। ভোটারদের মনে ছিল আতঙ্ক। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই দখল করে নেয় আওয়ামীলীগ...। (সমকাল : ২৪.০৩.১৪)
জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আ. লীগ প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপেও নজিরবিহীন কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলায় জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। এই নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয় ভোট জালিয়াতির। কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতিতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। ভোটারকে কুপিয়ে হত্যা, ভোটকেন্দ্র দখল, প্রিজাইডিং অফিসারদের জিম্মি করে জালভোট দেয়া, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও সরকারবিরোধীদের ওপর পুলিশের গুলিসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটে।
চতুর্থ ধাপের ৯১টি উপজেলার এই নির্বাচনে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে ৩২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। (নয়াদিগন্ত : ২৪.০৩.১৪)
আধাঘণ্টায় ১৮০০ ভোট
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় আজ রোববার সকালে উপজেলা সদরের বিএইচপি একাডেমি কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে আওয়ামীলীগ- সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মর্তুজা খানের কর্মীরা ব্যালট পেপারে সিল মেরে তা বাক্সে ভরছেন। এ সময় পুলিং অফিসাররা অসহায় হয়ে বসে রয়েছেন। এ ব্যাপারে ওই কেন্দ্রে প্রিজাডিং অফিসার বকতিয়ার উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রের ৯টি বুথের প্রত্যেকটিতে ২০০টি করে ব্যালট পেপার পোলিং অফিসারদের সরবরাহ করা হয়েছে। ভোট শুরু হওয়ার পর ৩০ মিনিটে সব ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোট ২হাজার ৮৭৮টি। ৩০মিনিটে ব্যালট বাক্সে ভোট ঢুকেছে ১হাজার ৮০০টি।
বরুড়ায় রাতের আঁধারেই ভোট গ্রহণ শেষ
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় প্রিজাইডিং অফিসারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৮০০ ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার শেষ রাতে শিলামুড়ী উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের (আনারস) সমর্থকরা প্রিজাইডিং অফিসার ফখরুদ্দিনকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকায় দ্রুত ভোট গ্রহণ শুরু করার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা।
তেরখাদা উপজেলায় ১১ টায় ভোট গ্রহণ শেষ
তেরখাদা উপজেলায় প্রায় সব কেন্দ্রে সকাল ১১ টার মধ্যে দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোট গ্রহণ শেষ করে ফেলেছে বলে অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন। সকালে ভোট গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে কেন্দ্রে দখল ও জাল ভোটের মহোতসব শুরু হয়। বিরোধী পক্ষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে জাল ভোট দেয়া হয়। এদিকে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করা হয়। (ইনকিলাব : ২৩.০৩.১৪)
১০ বছরের কিশোর একাই ১৩টি ভোট দিয়েছে
চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বেড়েছে সহিংসতা ও অনিয়ম। জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল আর ভোটের আগেই ব্যালট বোঝাইয়ের নজিরবিহীন এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা, অবস্থান এবং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে। শক্তির মহড়ায় কেন্দ্র দখলের উতসবের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেমন প্রাধান্য বিস্তার করেছেন তেমনি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা বেশি জয়ী হয়েছেন। ব্যবধান কমানোর সহিংসতাপূর্ণ এ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ ফল ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে। গতকাল পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্র্কিং গ্রুপ জানিয়েছে, চতুর্থ ধাপের নির্বাচন ছিল অধিক সহিংসতাপূর্ণ। এ নির্বাচনে তাদের পাঠানো প্রতিনিধিকে অনেক স্থানে ভোকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি পর্যবেক্ষককে কেন্দ্রে আটকে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাপক জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে এ সংস্থাটি। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পিরোজপুরের একটি কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের সামনেই ১০ বছরের কিশোর একাই ১৩টি ভোট দিয়েছে। এদিকে নির্বাচনে ক্রমে সহিংসতা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৃটেন।... (মানবজমিন : ২৩.০৩.১৪)
সহিংসতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ধাপে ধাপে সহিংসতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা। এ পর্যন্ত চার দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোটসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে সংঘর্ষ, হানাহানি, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগের মতো সহিংসতা যেমন এক ধাপ থেকে পরের ধাপে বেড়েছে, তেমনি বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। কম অনিয়ম ও সহিংসতার প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বেশি জয়ী হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে তাঁদের অতিক্রম করে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। (কালেরকণ্ঠ:২৩.০৩.১৪)
ভোট দিতে পারেনি সংখ্যাগুরুরাও
ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে না পারার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। সকাল আটটায় ভোট শুরু হতে না হতেই কেন্দ্র দখল করে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সভর্তি করেছে দলীয় ক্যাডাররা। ফলে এ উপজেলার নির্বাচনে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নন, ভোট দিতে পারেননি সংখ্যাগুরু সাধারণ ভোটাররা।
সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। এ প্রতিবেদক সকাল পৌনে আটটা থেকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সদরের আগৈলঝাড়া বিএইচপি একাডেমি কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে ৫০ গজের মধ্যেই আগৈলঝাড়া থানা। কেন্দ্রের ঠিক ১০০ গজ পেছনেই সেনা ক্যাম্প। সকাল আটটার আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে মানুষের জটলা। ভোট কেন্দ্রের বুথগুলোর সামনে বেশ দীর্ঘ সারি। হঠাত করেই আটটা সাত মিনিটে কেন্দ্রটির নয়টি বুথে প্রবেশ করেন পাঁচ-ছয়জনের একেকটি দল। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মর্তুজা খানের আনারস প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভরে তারা। এ সময় পোলিং অফিসারদের অনেকটা অসহায়ের মতো ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়।...
সাড়ে আটটার দিকে পোলিং বুথ গুলোতে গিয়ে দেখা যায় সবগুলো ব্যালটই বাক্সে ভরা হয়েছে। অর্থাত ভোট শুরু হওয়ার পর প্রথম আধা ঘণ্টায় সরবরাহ করা সব ব্যালটই শেষ হয়ে গেছে। প্রথম আধা ঘণ্টায় ব্যালট বাক্সে ভোট ঢুকেছে এক হাজার ৮০০টি। কেন্দ্রটির মোট ভোট দুই হাজার ৮৭৮টি। দিন শেষে এ কেন্দ্রে দুই হাজার ৩৪২ ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।.
(কালেরকণ্ঠ ২৩.০৩.১৪)
এই লেখাটি পড়ে অনলাইন পাঠকদের করা কিছু মন্তব্য নিুে তুলে ধরা হলে। একজন পাঠক লিখেছেন- আওয়ামীলীগ প্রমাণ করে দিলো ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ না করে সঠিক কাজটাই করেছিল। আরেকজন পাঠক লিখেছেনÑ কেমন করে দিবে? ভোট তো গতকাল (২২/০৩/২০১৪) রাতেই হয়ে গেছে ! আজ (২৩/০৩/২০১৪) রাত্রে আ.লীগের পক্ষে শুধু ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে !
এব্যাপারে আওয়ামীলীগ নির্বাচন পরিচালনা সেল প্রধানের বক্তব্য হলো- আগের তিনটির চেয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে- এইচ টি ইমাম। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, আগের তিনটির চেয়ে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত কঠোর ও শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ জন্য তাদের অভিনন্দন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এবার খুব একটা ঘটনাবহুল কিছু হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগে আপনারা বলেছিলেন, তৃতীয় দফায় অনেক সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু দেখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) না থাকা সত্ত্বেও কত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে জটলা দেখেছে, হাঙ্গামা দেখেছে, সেখানে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবদুল মোবারকের বক্তব্যÑ
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবদুল মোবারক বলেছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ দফা ভোট গ্রহণ সন্তোষজনক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ইসি সন্তুষ্ট কি না সাংবাদিকেরা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর মেহেরবাণী। যথাযথভাবে নির্বাচন হয়েছে।’
সিইসির বক্তবের পরিপেক্ষিতে কয়েকজন অনলাইন পাঠকের মতামত নিুে তুলে ধরা হলে-
সহিংসতায় চার চারটি তাজা প্রাণ ঝরে গেলো অথচ ওনার কি স্বস্তি! আলহামদুল্লিহ!
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- এই নির্বাচন কমিশন এদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। লজ্জা-শরম, ব্যক্তিত্ব বা মানিবক মূল্যবোধ কোনোটাই এদের নেই। যদি কারো চাপে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে পদত্যাগ করুন।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ?
সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- এই ধরনের মন্তব্য করে আমাদের বুদ্ধি, বিবেচনা, দৃষ্টিশক্তিকে অপমান করার কোনোই দরকার ছিল না।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- ইন্নালিল্লাহ...খুবই কলংকজনক নির্বাচন হচ্ছে...।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- মিথ্যা কথা বলার আগে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয় না !
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- ডিজিটাল বাংলাদেশে বলা যায়। কোনো অসুবিধা নাই।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন-‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর মেহেরবাণী। যথাযথভাবে উপরের আদেশ নিষেধ মানতে পেরেছি। চাকরি সেইফ। আগামীতে কিছু একটা হতে পারবো।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- ভাই উনাকে কেউ একটা ফ্রুটিকা কিনে খাওয়ান।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- উনি মিথ্যা কি বলেছেন! উনি তো এর চেয়ে আরও অনেক বেশি সহিংসতা আশা করেছিলেন।
আরেকজন পাঠক লিখেছেন- এদের কি মৃত্যুর পরের চিন্তা নাই !
জাতিয় দৈনিকের এসকল রিপোর্ট আমাদের সামনে কয়েকটি বিষয়কে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
এক. আওয়ামীলীগের দাবি অনুযায়ী এই নির্বাচন অতীতের সকল নির্বাচন থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এখন চিন্তার বিষয় হলো- সুষ্ঠু ও শান্তিপূণ নির্বাচনের চিত্র যদি এই হয়, তাহলে তার পূর্বেরগুলোর অবস্থা কী ছিল তা সহজেই অনুমেয়।
দুই. যে ভোট ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয় সেই ভোটে এই পরিমাণ সহিংসতা ও ডাকাতির মাধ্যমে প্রমাণিত হলো- শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বিরোধীদলের দাবি শতভাগ সত্য ছিল।
তিন. এই সরকারের অধীনে বিরোধীদলের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা যে সঠিক ছিল তাও প্রমাণিত হয়েছে।
চার. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী এমপিরা এতদিন যে বড় গলায় বলে আসছেন- এ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এই দাবিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছ।
পাঁচ. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া যে এদেশে ভোট ডাকাতি ঠেকানো সম্ভব নয় এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে না তাও প্রমাণিত হয়েছে।
ছয়. মুখে মুখে যতই গণতন্ত্রের কথা বলে নেতা নেত্রীরা খৈ ফুটান না কেন, তা যে আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার শুধুই ছলনা এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধও নেই তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
সাত. আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব যে সীমাহীন নির্লজ্জ এবং মিথ্যাচারে পারদর্শী তাও জাতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছে।
সবশেষে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ভোট ডাকাতি করে অধিক আসনে বিজয়ী দেখানোর পরও শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয় হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে ভোটাধিকার হরণকারী এই গণবিচ্ছিন্ন সরকারকে তারা কত দিন ক্ষমতায় রাখবে।
২৪.৩.১৪ ইং
০০০০০০০০০
স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা হলেও ঈমানদার মানুষের জন্য স্বাধীনতা একটু বেশি প্রয়োজনীয়। কারণ দেশ ও জাতির ওপর অন্যায়-অসত্যের নিয়ন্ত্রণ থাকলে দেশের মানুষের নাগরিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামি জীবন যাত্রাও ব্যহত হয়। অথচ মুসলিম জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামিব্যবস্থা মানার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা এবং আখিরাতের অনন্ত জীবনে মুক্তি ও শান্তি লাভ করা। এ দৃষ্টিকোন থেকেই দেশের স্বাধীনতা মাহান আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। তাই স্বাধীনতা একজন মুসলিমের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা রক্ষা করা তার ঈমানী দায়িত্ব। সে কারণে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধেও সজাগ থাকতে হয়। আধুনিক কালে মুসলিম দেশগুলোর স্বাধীনতার সবচে বড় শত্র“ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদীশক্তি অন্যের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এদের চরিত্রই হচ্ছে প্রভাব ও কর্তৃত্বের অব্যাহত বিস্তার। অবশ্য সাম্রাজ্যবাদ সর্বদা একই রূপ রেখায় কর্তৃৃত্ব বিস্তার করে না। সময় ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রভাব ও প্রভুত্ব বিস্তারের কৌশলগত পথ অবলম্বন করে। আধুনিক কালে সাম্রাজ্যবাদ কোনো দেশ দখল করে তাতে নিজেদের প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠার পুরনো ধাঁচে কাজ করছে না। এখন সাম্রাজ্যবাদ কোনো দেশের ওপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সে দেশেরই একটি ক্ষমতালোভী অংশকে বেছে নেয়। এবং দেশের জাতীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনতার বিরুদ্ধে তাদেরকে নানা উপায়ে ব্যবহার করে। অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করে তাদের অনুগত অংশকে ক্ষমতায় বসিয়ে সংশ্রিষ্ট দেশের উপর কর্তত্বও চালায়। বিভিন্ন চটকদার শিরোনামে বিশ্বকে ধোকা দেয়ার প্রয়াস চালায়। ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার প্রতি লক্ষ করলেই সাম্রাজ্যবাদের এ আধুনিক চেহারাটি সহজে চোখে পড়বে। নতুন প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যবাদের কৌশল ও চেহারা পরিবর্তন হলেও কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব বিস্তারের সেই চরিত্র রয়েছে অভিন্ন। সে কারণে আধুনিক বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও জাতি বাহ্যত স্বাধীন বলে দেখা যায় কিন্তু অন্তর্গত বাস্তবতায় তাদের স্বাধীনতা নেই। আমরা যদি সাম্রাজ্যবাদের এই কৌশলটির কথা মাথায় না রেখে শুধু পুরনো ও জংলী সাম্রাজ্যবাদের রূপটিই মাথায় রাখি তাহলে আমরা বড় রকমের ভুল করবো।
আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ অনেক বেশি কৌশলী এবং শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রলোভনের সাহায্যে কোনো দেশের সেনাবাহিনীকেও ক্রয় করে নেয়, যেমনটি ঘটেছিল ইরাক যুদ্ধের ক্ষেত্রে। সাদ্দামের ষাট হাজার সৈন্যের শক্তিশালী রিপাবলিকান গার্ড প্রয়োজনের মুহূর্তে ছিল নিস্ক্রিয়। এক শ্রেণির জেনারেল আগ্রাসী শক্তির হাতে বিক্রিত হয়ে যাওয়ায় সাদ্দাম হোসেন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদের কাছে বিক্রি হওয়ার সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো মিশরের সেনাবাহিনী। মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা জনাব মুরসি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। তদুপরি তিনি ইসলামি শরীয়ার আইন প্রয়োগের জন্য পৃথক গণভোট নিয়ে তা চালু করতে চেয়ে ছিলেন। এতে মুসলমানদের চির বৈরী পশ্চিমা শক্তির গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায় এবং ওরা ইন্ধন দিয়ে সেনাবাহিনীকে ব্রাদারহুড সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেয় এক শ্রেণির আদর্শচ্যুত ও নীতভ্রষ্ট তরুণ। সেনাবহিনী ও এই তরুণশ্রেণি তাদের স্বেচ্ছাচারী ও অনৈতিক জীবন যাত্রার পথে এই শরিয়া ব্যবস্থাকে প্রতিবন্ধক দেখতে পায়। তাই দেশটির সম্পূর্ণ বৈধ সরকার ও বৈধ প্রেসিডেন্টকে তারা শক্তির মুখে উৎখাত করে এবং বন্দি করে । তারপর সেনাবাহিনী দেশের মুসলিম জনতার ওপর গণহত্যা চালায়। গুলি করে। এভাবেই কৌশলে সাম্্রাজ্যবাদী শক্তি মিশরের স্বাধীনতাকে তছনছ করে দেয়। বর্তমান মিশর বাহ্যত স্বাধীন, কিন্তু প্রকৃতভাবে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির হাতে বন্দি। মিশরের বৈধ সরকার তার দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য যে মূল্যবোধ আশ্রয়ী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, তা প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হলো না। মিশরের এ বাস্তবতায় সাম্রাজ্যবাদের আধুনিক চরিত্রটি খুব সহজেই ধরা পড়ে। মিশরের আদর্শবাদী শক্তির জন্য এখন সম্ভবত জিহাদের আর কোনো বিকল্প নেই। এ পথে হয়ত মিশরের অনেক রক্ত ঝরবে, তবে এক সময় সাম্রাজ্যবাদের অনুচরগোষ্ঠী পরাজিত হবে এবং ইসলামি জনতার বিজয়ের লালসূর্য উদিত হবে। কারণ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জিহাদই হচ্ছে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সমাধান। বিভিন্ন সময়ে তা পৃথিবীর সামনে স্পষ্ট হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সম্প্রতি জনাব মুরসি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নতুন করে বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন।
সাম্রাজ্যবাদের আরেকটি কৌশল হচ্ছে মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি ও শক্তি সঞ্চয়। সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির সহায়তায় দেশে দেশে তাদের দালাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত স্বাধীনতাকামী মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বলে প্রচার করাই এই সাংবাদিকগোষ্ঠীর প্রধান কাজ। কোন দেশে মুসলিম জনতার সংগ্রাম যতই ন্যায়ানুগ ও মানবিক হোক না কেন, সাম্রাজ্যবাদের দালাল সাংবাদিক গোষ্ঠী তাকে চোখবুজে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বলে অভিহিত করে এবং স্বাধীনতাকামী মুসলিম জনতাকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বলে অষ্টপ্রহর প্রচার করে। আফগানিস্তানে আগ্রাসী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামরত মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘তালেবান জঙ্গি’ বলে প্রচার করতে এরা ঢের আনন্দ পান। আগ্রাসী শক্তিকে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বলা হচ্ছে দেশ রক্ষায় নিবেদিত স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সংগ্রামকেও এরা নানা উপায়ে কটাক্ষ করে থাকে এবং জনাব মুরসি দেশের কল্যাণে যে শরিয়া আইনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাকে এরা বলে ক্ষমতার অপব্যবহার। সাংবাদিকগোষ্ঠীর এহেন প্রচারণাকে মদখোর মানুষের কান্ডজ্ঞানহীন বাক-তাণ্ডবের মতোই মনে হয়। বস্তুত এরা সাম্রাজ্যবাদের অন্ধ গোলাম। এদের মগজ পুরোটুকুই সাম্রাজ্যবাদের কছে বিক্রি হয়ে আছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাংবাদিক শ্রেণির অবস্থাও অভিন্ন। বিরল ব্যতিক্রম বাদে প্রায় প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও প্রতিটি দৈনিকে সাম্রাজ্যবাদের এহেন অনুচরদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে পবিত্র কোরআনের নিম্নলিখিত বাণীই মনে পড়ে ‘বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।’
সাম্রাজ্যবাদীরা মুসলিম বিশ্বের ওপর হঠাৎ করেই এতটা আধিপত্য অর্জন করেনি, এজন্য তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে। মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে জাতিয় পর্যায়ে আধুনিক শিক্ষার নামে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে যার ফলে মুসলিম তরুণরা ওদের চিন্তা চেতনায় গড়ে ওঠে। রক্তে মাংসে ওরা যে দেশেরই হোক না কেন মনমগজে ওরা হয় ইংরেজ। কারণ, শিক্ষা হচ্ছে একজন মানুষের চিন্তা-চেতনার ভিত্তিভূমি। এ শিক্ষার মাধ্যমেই মুসলিম বিশ্বের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য ধরে রাখার একটি স্থায়ী বুনিয়াদ তৈরি হয়ে গেছে। পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে মুসলিম তরুণদেরকে মানসিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে। পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আল্লামা ইকবাল যথার্থই বলেছেন-
‘ইঁয়ো কতল ছে বাচ্চুঁ কি ঔহ বদনাম না হোতা
আফসোস কেহ ফেরাউন কো কালেজ কি না সুঝি।
‘শিশু হত্যার পথে ফেরাউন দুর্নামের বোঝা নিতো না কাঁধে অযথা
বোধে থাকত যদি সে হতভাগার এই সব ইংরেজ কলেজের কথা।’
ওসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেও যে সীমিত সংখ্যক তরুণ আপন ধর্মীয় ও জাতীয় মূল্যবোধকে লালন করে থাকে, তারা ভিন্ন কোনো প্রচেষ্টার সংস্পর্শেই তা করতে পারছে।
এখন যে কথাটি আমরা দেশের বিবেকবান মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলতে চাই তা হলো দেশে ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে পূর্বাহ্নেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা শুরুতেই বলেছিÑ যে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন ঈমানদার মানুষরাই। কারণ একজন ঈমানদারের প্রতিটি কাজ হতে হয় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির বিষয় বিবেচনায় রেখে, হালাল-হারাম ও বৈধ অবৈধের বিবেচনা সর্বোপরি মহান আল্লাহর আনুগত্যই তার আরাধ্য। স্বাধীনতা বিপন্ন হলে তিনি তার মহান স্রষ্টার আনুগত্যের পথে পদে পদে বাধাগ্রস্থ হন। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে ভোগবাদী ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদদের হয়ত তেমন একটা অসুবিধা হয় না। তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার লোভ দেখিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা সহজেই বশ করে ফেলতে পারে। সে কারণে ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতার দুর্গতি দেখতে পান না। দেশের কোনো ভয়াবহ সংকটও তাদের কাছে সংকট বলে মনে হয় না। এই রাজনীতিবিদদের চরিত্র বিশ্লেষণে উপমহাদেশের স্মরণীয় মনীষী হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. এর বর্ণিত একটি ঘটনা এখানে খুবই উপযোগী। ঘটনাটি হলো- এক ডাক্তারের দরবারে এক লোক থাকতো। সে ওষুধের উপকরণ দলন-পেষণের কাজ করতো। একবার সে হাকীম সাহেবের আদেশক্রমে জামালগোটার গুলি তৈরি করেছিলো। ওই গুলি হাসপাতালের সে সব রোগীকে দেয়া হতো, যাদের জোলাপের প্রয়োজন হতো। এই ব্যক্তি দু’চারবার জামাল বড়ি তৈরি করার ফলে ব্যবস্থাটি তার মুখস্থ হয়ে গেছে। এর পর হাকীমের মৃত্যুর পর ডাক্তার সেজে বসলো। এখন যে-ই এসে-কোনো সমস্যা বলে তাকেই সে জামাল বড়ির ব্যবস্থা দেয়। দু’চারজনের বেলায় কাকতালীয়ভাবে তার সঠিক প্রয়োগের ফলে সাফল্য অর্জিত হয়। এ কারণে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। একবার এক অসুস্থ লোক এসে সমস্যা জানালে সে তাকে ব্যবস্থা দিয়ে বলে দেহের ভেতর অস্বাস্থ্যকর উপাদান অনেক বেড়ে গেছে, সে কারণে পেট পরিষ্কার করা দরকার। সুতরাং চালাও জামাল বড়ি। ঘটনাক্রমে ওই বড়ি কিছুটা উদ্দীপক ও তেজস্বীরূপে তৈরি হয়েছিল। আর অসুস্থের পেট ছিলো কিছুটা দুর্বল। ফলে শুরু হয় দাস্ত। রোগী একবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার কাছে খবর এলো হাকীম সাহেব! রোগীর খুব দাস্ত হচ্ছে এবং সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। হাকীম সাহেব উত্তর দিলেন, দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাচ্ছে, বের হতে দাও। কিছুক্ষণ পর সংবাদ এলো রোগীর অবস্থা খুবই শোচনীয়। দাস্ত বন্ধের ব্যবস্থা করুন। হাকীম উত্তর দিলেন, নাহ! দূষিত পদার্থ থেকে গেলে ক্ষতি হবে, বরং বেরিয়ে যেতে দাও। এরপর সংবাদ এলো- জনাব! ওই রোগীর ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে। তখন হাকীম তাকে দেখতে গেলেন এবং গিয়ে বলতে লাগলেন, আল্লাহরে! দুষিত উপাদান বের হয়ে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাহলে তা পেটের মধ্যে যদি থেকে যেতো তাহলে কী উপায় হতো!
বর্তমান সময় দেশে দেশে রাজনীতিবিদদের অবস্থাও অনুরূপ। দেশের বারোটা বেজে গেলেও যতক্ষণ তারা ক্ষমতার মসনদে থাকতে পারেন, বলে যান- ‘নো প্রোবলেম! আমরা সবকিছু দেখছি এবং সমাধান দিচ্ছি’। তারপর দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার মৃত্যু হলে বলেন, আমরা এত কিছু করা সত্ত্বেও এ অবস্থা হলো, তাহলে আমরা তৎপর না থাকলে কী উপায় হতো!
যা হোক সর্বশেষ আমরা যে কথাটি বলতে চাই তা হলো, মুসলিম দেশগুলো যদি তাদের ভৌগলিক ও আদর্শিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে চায় তাহলে মুসলিম জনতাকে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপোস করে চলা ভীরু ক্ষমতালোভীদের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। বরং পূর্ব থেকেই এমন প্রস্তুতি থাকতে হবে যাতে ক্ষমতালোভীরা স্বাধীনতা বিকিয়ে দিয়ে যেন তেন প্রকারে ক্ষমতা চর্চার সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভুলুণ্ঠিত করার পথে এগিয়ে গেলে ঈমানদার মুসলিমজনতা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং প্রয়োজনে দেশের ঈমানদার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে পারেন। যেমনটি ঘটে ছিল একত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। সেই প্রস্তুতি থাকলে অন্তত আরাকানের মুসলমানদের মতো চরম অসহায়তার মধ্যে ধুকে ধুকে মরতে হবে না। মরতে হলেও মাতৃভূমির জন্য জীবন দিয়ে বীরের মতো শাহাদাতের মৃত্যু বরণের সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। দেশ রক্ষার সেই সংগ্রাম জিহাদ বলে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বার বার আমাদেরকে জিহাদের কথা বলেছেন এবং সেই অমোঘ বাণীর আবেদন কখনও রহিত হবার নয়। এ প্রস্তুতি প্রসংঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘তোমরা তাদের (ইসলামের দুশমনদের) মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এরদ্বারা তোমরা তোমাদের শত্র“দেরকে এবং আল্লাহর শত্র“দেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করবে।’ (আনফাল-৬০)
এ আয়াতে পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় সকল যুগে ও সকল প্রেক্ষাপটে সে যুগ ও প্রেক্ষাপটের উপযোগী যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলাম ও দেশ রক্ষায় এটা মুসলমানদের ধর্মীয় ও ঈমানী দায়িত্ব।
বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমেও আমাদের প্রিয়নবী সা. ইসলামি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাযি. হতে বর্ণিত, নবী কারিম সা. ইরশাদ করেন- একদিন ইসলামি সীমান্তে প্রহরা দেয়া সারা পৃথিবী ও তদভ্যন্তরস্ত সব কিছুর চাইতে উত্তম। (বুখারি ও মুসলিম)
হযরত ফুজালা ইবনে উবাইদ রা. হতে বর্ণিত হযরত রসুল করিম সা. ইরশাদ করেছেন, মৃত ব্যক্তির সকল আমলের উপর সীল মোহর এঁটে দেয়া হয় [বন্ধ করে দেয়া হয়] মৃত্যুর পরে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারে না, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে ব্যক্তি কোনো ইসলামি সীমান্তের প্রহরায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। বস্তুত তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর হতেও সে ব্যক্তি মুক্ত থাকবে। (তিরমিজি, আবু দাউদ, দারিমি)
এ দু’টি হাদিস থেকেই বুঝা যায় ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব ও মর্যাদা কতখানি। সুতরাং এই স্বাধীনতা কোনোভাবে যাতে হুমকির মুখে না পড়ে সে জন্য সজাগ ও প্রস্তুত থাকা সমগ্র জাতির ঈমানী দায়িত্ব। মাহান আল্লাহ আমাদের সর্বোত্তম আশ্রয়।
ইতিহাসের আয়নায় রক্তাক্ত আমাদের বর্তমান
খন্দকার মনসুর আহমদ
ফেব্রুয়ারি'১৪
আত্মসচেতন জাতি ইতিহাসকে তার পরম শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে এবং ইতিহাসের সত্যকে জীবনচলার পথে আলোকবর্তিকারূপে গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে আত্মভোলা জাতি তাদের ইতিহাস ভুলে যায়। এবং জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে যথাযথ কর্তব্য নির্ধারণে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই আমরা আমাদের বিগত ইতিহাসের একটি দগদগে অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনের বর্তমান সংকটকালকে খানিকটা মূল্যায়নের প্রয়াস পাব।
আমি ইতিহাসের যে অধ্যায়টির প্রতি ইঙ্গিত করতে চাই তা হলো আমাদের ভারত উপমহাদেশে আগ্রাসী ইংরেজদের দখল প্রতিষ্ঠা ও সুদীর্ঘ দুঃশাসন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সাম্রাজ্যবাদী ধুরন্ধর ইংরেজগোষ্ঠী বাণিজ্যের কৌশলগত পথে একদা আমাদের এই উপমহাদেশ দখল করে নিয়েছিলো এবং এদেশকে মানবতার বদ্ধভূমিতে পরিণত করেছিলো। হাজার হাজার আলেম উলামাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছিলো। হাজার হাজার মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছিলো এবং উপমহাদেশকে খ্রিস্টান রাজ্যে পরিণত করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলো। গোটা উপমহাদেশেই নেমে এসেছিলো ভয়াল অন্ধকার। অত্যাচারী সেই আগ্রাসীদের মোকাবেলায় কোনো বিপ্লব গড়ে তোলাও ছিলো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের দখল প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছর পর ওদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি বিপ্লব গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হলে ইংরেজ কমান্ডার মুলারের নির্দেশে চৌদ্দজন বিপ্লবী দেশীয় সৈনিককে কামানের মুখে উড়িয়ে দেয়। তবে বিপ্লবীদের কর্মসূচি চলতে থাকে এবং সময়ের ব্যবধানে তার গতি বাড়তে থাকে। তারপর সুদীর্ঘ ৯৩ বছর পর ১৮৫৭ সালে তা একটি জ্বলন্ত ভিসুবিয়াসের রূপ পরিগ্রহ করে। যা সিপাহীবিপ্লব নামে পরিচিত। কিন্ত নানা কারণে শেষ পর্যন্ত সেই বিপ্লবও ব্যর্থ হলে ইংরেজদের উৎখাত করতে আরও ৯০ বছর লেগে যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে এই আগ্রাসী শক্তিকে বহু রক্তের বিনিময়ে বিতাড়িত করা হয়। এখানে শুধু সে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের দিকে ইশারা করে বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে আমরা আমাদের জাতিকে একটি বার্তা দিতে চাই। এবং সকলকে আমরা সেই অধ্যায়টির প্রতি একটু মনোযোগী হবার আহ্বান জানাই। এতে সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র সম্পর্কে যেমন একটি ধারণা লাভ করা যাবে তেমনি আমাদের মহান পূর্বসূরিদের সীমাহীন ত্যাগের আয়নায় আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিরূপণ করা সহজ হবে।
ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে উলামায়ে দেওবন্দ-এর বিপ্লবের ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। উলামায়ে দেওবন্দ-এর আন্দোলনের একটি বড় হাতিয়ার ছিলো ফতোয়া। মুসলিম জনজীবনে ফতোয়ার প্রভাব অত্যন্ত গভীর। শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ.-এর একটি বিপ্লবী ফতোয়া সাম্রাজ্যবাদীদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। তার সুযোগ্য শিষ্য মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি রহ.-ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ওয়াজিব বলে ফতোয়া প্রচার করেন এবং বিভিন্ন স্থানে অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে জাতিকে জাগিয়ে তোলেন। পরে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী তাকে আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত করে। সীমাহীন নির্যাতন ভোগ করে তিনি এক পর্যায়ে সেই দ্বীপেই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রহ., হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতবি রহ., শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. প্রমুখ মহান ব্যক্তিও ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামে সীমাহীন ত্যাগ শিকার করেন।
আজকে বাংলাদেশে আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও স্বাধীনতা নাস্তিক্যবাদী শক্তির যে-হামলার মুখে পতিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে এই দেশের মুসলমানদের কর্তব্য কী হতে পারে সে সম্পর্কেও বিজ্ঞ আলেম সমাজের সম্মিলিত ফতোয়ার প্রয়োজনীয় বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য আমরা সচেতন মহলের প্রতি আহ্বান জানাই। শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ.-এর বিপ্লবী ফতোয়া প্রমাণ করেছিলো যে ফতোয়া শুধু ইসলাম রক্ষার হাতিয়ার নয়, বরং ফতোয়া দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষারও অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। আজকের প্রেক্ষাপটে কোনো একক ব্যক্তির ফতোয়ার ফলপ্রসূতার ব্যাপারে সংশয় থাকলেও জাতীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত ফতোয়া আগের মতোই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যবহুল বক্তৃতা। আদর্শিক জাগরণের পক্ষে ভাষা ও ভাষণের প্রয়োজনীয়তা এতখানি যে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রেরিত নবী-রসূলগণকেও এর মুখাপেক্ষী করেছেন। বিখ্যাত মুসলিম বীর তারিক বিন যিয়াদের একটি ভাষণ স্পেন জয়ের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিলো। যা আজও সাহিত্য ও ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। আফগানিস্তানের নরশার্দুল মোল্লা মোহাম্মদ উমরের একটি ভাষণ আফগান জাতিকে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে নতুনভাবে জগিয়ে তুলেছিলো। ইংরেজ-বিরোধী সংগ্রামেও উলামায়ে দেওবন্দ-এর ভাষণসমূহ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলো। সে কারণেই দেখা যায় যে ভোগবাদী শক্তি সর্বদা ভাষা ও ভাষণকে ভয় পায়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভাষা ও ভাষণ বন্দি বা গৃহবন্দি রাখতে চায় অথবা নির্বাসনে পাঠায়। অতীত ও বর্তমানে এর অনেক নজির রয়েছে। ভাষা ও ভাষণের এই শক্তির কথা বিবেচনায় রেখে আজকের শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজকেও এই হাতিয়ারটি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত তরুণ আলেম শ্রেণিকে বক্তৃতার শাণিত ও সাবলীল ভাষা এবং কলাকৌশল রপ্ত করতে হবে। বক্তৃতায় অশুদ্ধ বা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার হলে বক্তৃতা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে প্রভাবশালী হতে পারে না। বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখার জন্য আমরা শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বার বার ব্যর্থতা ও পরাজয় বরণের পরও সামনের পথে এগিয়ে চলা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি, কারণ সংগ্রাম ও বিপ্লব সর্বদা একই মাত্রায় গতিশীল থাকে না। বিপর্যয় ও ব্যর্থতা এ-পথের একটি স্বাভাবিক বাস্তবতা। সফলতার সূর্যোদয়ের জন্য ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে সংগ্রামের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক যুগও পার হয়ে যায়। এ-বাস্তবতার আলোকে আমাদের চলমান নাস্তিক্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের সাময়িক বিপর্যয়কে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। একথা তো অস্বীকারের উপায় নেই যে শাপলাচত্বরের বিপর্যয়ের পর আলেমসমাজের নাস্তিক্যবাদবিরোধী সংগ্রাম একটি প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে এবং সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের আয়নায় বিচার করলে এটা তেমন বড়ো কিছু নয়। কারণ সংগ্রামের পথটাই হচ্ছে চড়াই-উৎরাইয়ের পথ। সুতরাং আলেমসমাজ নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে নতুন রূপরেখায় এগিয়ে যাবেন এটাই ইতিহাসের দাবি। উগ্র নাস্তিক্যবাদ এখন শুধু ব্লগ আর মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ছত্রছায়ায় যথেষ্ট পরিপুষ্টি লাভ করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেও অধিষ্ঠিত। ফলে উগ্র-নাস্তিক্যবাদ রাষ্ট্রশক্তিরও যথেষ্ট প্রশ্রয় পাচ্ছে। নাস্তিক্যবাদ যে নোংরা মূর্তিতে ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে এর প্রতিরোধ সফলভাবে করা সম্ভব না হলে এক সময়ে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ উগ্র দাম্ভিক শক্তি নিজেদের দম্ভ ও দাপট রক্ষার জন্য দেশের বহিঃশক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। এটা ইতিহাসের এক নির্মম সত্য। উপমহাদেশে একটি বৃহৎ হিন্দু জনগোষ্ঠী এবং নামধারী এক শ্রেণীর মুনাফিক মুসলমান ইংরেজদেরকে যেভাবে সহায়তা করেছিলো তা আমাদের একথার জ্বলন্ত প্রমাণ। দাম্ভিক শক্তি যখন স্বদেশের জনগণকে আর নিজেদেও পক্ষে ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না তখনই তারা তাদের সতীর্থ শক্তিকে স্বদেশে আমন্ত্রণ জানায় এবং আধিপত্য বিস্তারে প্ররোচনা দেয়। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মুসলিম দেশে তার প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে এবার একটু ভেবে দেখা যাক। একটু ভেবে দেখলে আমাদের দেশে ইংরেজদের দখল প্রতিষ্ঠার পূর্বপ্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটের অনেক মিল পাওয়া যায়। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য এনজিও এবং ইংরেজ সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে দেশের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ। দেশে শীর্ষ রাজনৈতিক মেধাগুলো আধিপত্যকামী শক্তির কাছে বিক্রি হয়ে আছে। কঠিনভাবে জাতীয়তাবোধসম্পন্ন দীনি মাদরাসাসমূহের ওপর চলছে নজরদারি। প্রতিবাদী সাহসী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বড় আকারে কোনো শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিদেশি দখলদারদের মতই শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ঈমানি দাবিসমূহকে পদদলিত করা হচ্ছে। সর্বাত্মকভাবে দেশে একটি আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উত্তরসূরিদের আত্মীয়স্বজনরাও এদেশে সদম্ভে বিচরণশীল। ইংরেজ সভ্যতার অসংখ্য দাস এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এরা ক্ষমতার প্রয়োজনে জনগণকে পাশ কাটিয়ে যেকোনো নিকৃষ্ট পথে পা বাড়াতেও দ্বিধা করবে না বলে দেশের জাতীয়তাবোধসম্পন্ন মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও ঈমানি আবেগকে এরা থোড়াই কেয়ার করে। ইংরেজ সভ্যতায় প্রশিক্ষিত ডিজিটাল দালালরাও মাদরাসা বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। কখনো মাদরাসাকে জঙ্গি তৈরির কারখানা বলে অভিহিত করছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে ইতিহাসের পরীক্ষিত পথে এগোতে হবে। ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেও গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যে দেশে মানবতার হৃদয়ের টুকরো হযরত মুহাম্মদ সা.-কে একের পর এক কটূক্তি করেও বেঁচে থাকা যায় এবং শহীদ বলে মর্যাদা লাভ করা যায় (নাউযুবিল্লাহ), যে দেশে রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে শত শত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সে দেশে ইসলাম ও স্বাধীনতা কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। সম্প্রসারণবাদী কোনো অপশক্তির ইঙ্গিতে স্বজাতির বিরুদ্ধে এহেন নির্মমতা প্রদর্শন করা হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখা দরকার এবং দেশে ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য পূর্বাহ্নেই সদূরপ্রসারী সতর্ক পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায়।
জানুয়ারি'১৪
নববর্ষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা
খন্দকার মনসুর আহমদ
আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর হারিয়ে গেল। আমরা একটি নতুন বছরকে বরণ করলাম। স্বভাবতই আমরা নববর্ষে নতুন স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বুকে নিয়ে সামনের পথে এগিয়ে যেতে চাই। সে হিসেবে একটি নববর্ষ আমাদের জীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা দেখছি যে সময় স্রোতের মতো ধাবমান। আমরা একটি নববর্ষকে গ্রহণ করি, আবার দেখতে না দেখতেই বর্ষটি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যায়। নতুন বর্ষ এসে দুয়ারে করাঘাত করে। অতএব সময়ের এ ধাবমানতার মধ্যেই আমাদেরকে অনন্তের কথা ভাবতে হবে এবং অনন্ত জীবনের পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে। নববর্ষে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে যে, পৃথিবী আখেরাতের শস্যক্ষেত। আখেরাতের ফসল ফলাবার জন্যই মহান আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। যেদিন আর পৃথিবীতে আখেরাতের ফসল ফলানো যাবে না, সেদিন পৃথিবীরও আর কোনো মূল্য থাকবে না। সেদিন মহাপ্রলয়ের দিকে এগিয়ে যাবে পৃথিবী। কিছুকাল পূর্বে আমি এ বিষয়ে ছোট্ট একটি কবিতা লিখেছিলাম। প্রিয় পাঠকদের কাছে কবিতাটি তুলে ধরলাম।
বেঁচে থাকতে চাই আরও কিছুকাল
ফলাতে চাই অনন্তে’র আরও কিছু ফসল,
পৃথিবীইতো আখেরাতের শস্যক্ষেত।
এখানে এখনও আখেরাতের ফসল
ফলানো যায় দিন-রাত।
সওয়াবের সবুজ ফসলে ভরে যায় মাঠ।
যেদিন পৃথিবীতে আর ফলবে না সওয়াবের ফসল
সেদিন বিধাতা ধ্বংস করে দিবেন
পৃথিবী নামের এ গ্রহটিকে।
তাই এসো আমরা এ গ্রহে বাস করে প্রতিনিয়ত
আখেরাতের ফসল ফলাই।
আখেরাতের জীবনে অতুলনীয় সুখ-সমৃদ্ধি লাভের জন্য আমাদেরকে বহুবিধ শুভস্বপ্নের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। শুভস্বপ্ন মহান আল্লাহর বড় প্রিয়। হাদিস শরিফে বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে, ‘মুমিনের নিয়ত তার কর্মের চেয়ে উত্তম’। কর্মের চেয়ে নিয়ত উত্তম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কর্মের একটি সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু নিয়ত বা স্বপ্নের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। স্বপ্ন হতে পারে অসীম ও অনন্তের। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়তো পার্থিব জীবনে নাও ঘটতে পারে, কিন্তু অন্তরের সত্যিকার ভালোবাসা ও আকাক্সক্ষার কারণে, মহান আল্লাহ তার প্রতিদান দিয়ে দিবেন। কারণ তিনি অসীম করুণার অধিকারী। তাঁর করুণার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। বান্দা তাঁর করুণার পরিধি কল্পনাও করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেকে বলেছেন ‘মহান করুণার আধার’। আরও বলেছেন, ‘আমার রহমত সকল কিছুতে পরিব্যাপ্ত’।
স্বপ্ন সকলেই দেখতে পারেন। তবে কৈশোর ও তারুণ্যই স্বপ্ন দেখার সর্বোত্তম সময়। তাই কিশোর ও তরুণ বন্ধুদেরকে আমি নিরন্তর স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানাই। সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ. তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘মানুষ শৈশবে যা কিছু চিন্তা করে ঠিক তাই মহান আল্লাহ কোনো না কোনো অবস্থায় তার জীবনে বাস্তবায়িত করে দেন। অতএব যা কিছু চিন্তা করবে, যা কিছু আকাক্সক্ষা করবে, অনেক ভেবে চিন্তে করবে’। আমাদের কাজ হচ্ছে স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্নের পথে অবিরাম হেঁটে চলা। আমরা দেখবো রেজায়ে এলাহি’র স্বপ্ন, আলোকিত জীবনের স্বপ্ন, শুদ্ধি ও সৎকর্মের স্বপ্ন, জীবনের সর্বত্র সুন্নতে নববীর অনুগামী হবার স্বপ্ন, উত্তম আমলের স্বপ্ন, প্রাণবন্ত নামাজের স্বপ্ন, প্রাণবন্ত রোজার স্বপ্ন, জিহাদের স্বপ্ন, বিজ্ঞ আলিম হবার স্বপ্ন, আলোকিত দেশ-জাতি ও সমাজ গড়ার স্বপ্ন, স্বদেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, মিথ্যাকে পরাভূত করার স্বপ্ন, নবীজির অবমাননা প্রতিরোধের স্বপ্ন, পবিত্র কা’বা জিয়ারতের স্বপ্ন, মদিনা শরিফের স্বপ্ন, রওযা শরিফের স্বপ্ন, বাবার হজের স্বপ্ন, মায়ের হজের স্বপ্ন এবং আরও হাজারো স্বপ্ন। হৃদয়ের গহীনে আরও হাজারো স্বপ্নের বীজ রোপিত হতে পারে আমাদের। আর আমরা স্বপ্ন দেখবো না বিত্তবৈভবের এবং স্বার্থান্ধ ক্ষমতার। দেখবো না কোনো অবৈধ প্রেমের বা অন্য কোনো পাপকর্মের স্বপ্ন। এমন কোনো স্বপ্নের মোহ যদি আমাদের অন্তরে আসে, তাহলে আমরা আমাদের হৃদয়কে অবশ্যই সেই মোহ থেকে মুক্ত করবো।
মহান দয়ালু তাঁর করুণায় বান্দার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত করে দেন। আমি মহান আল্লাহর এক নগণ্য বান্দা। আমি আমার জীবনে যে সকল স্বপ্ন দেখেছিলাম তার অনেকগুলোই মহান আল্লাহ বাস্তবতার পুষ্পোদ্যানে প্রস্ফুটিত করে দিয়েছেন। তিনি দয়া করে সম্প্রতি আমার যে স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করলেন, তা হলো আমার মায়ের হজের স্বপ্ন। আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার বুকে এ স্বপ্ন লালন করে আসছিলাম এবং এর জন্য মহান বিধাতার সাহায্য প্রার্থনা করে আসছিলাম। মহান আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন আমার কল্পনার চেয়েও সুন্দর রূপরেখায় বাস্তবায়িত করলেন। সেই বেহেশতি সফরে মায়ের সহযাত্রী বানালেন এ নগণ্যকেই। মাতৃস্নেহের কোমল পরশে এমন পবিত্র সফরের কী যে আনন্দ ও প্রশান্তি তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করে কোনোদিনই শেষ করা যাবে না। আমার মনে হয় ঈমানের পরে এটিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। সুদীর্ঘ বেদনার পর আমার জীবনে যখন এই সৌভাগ্য এলো, তখন তা আমার সমগ্র সত্তাকেই নতুন ভাবে স্পর্শ করলো। আমি আমার জীবনে এক নতুন আলোর সন্ধান পেলাম। পবিত্র কা’বা ও রওজা শরিফের জিয়ারত আমার হৃদয়ে এনেছে নতুন সজীবতা, জীবনে এনেছে নতুন আনন্দ, বুকে এনেছে নতুন স্বপ্ন এবং সত্তায় এনেছে নতুন উদ্যম। প্রত্যাশী সকল মুমিনের জন্যই আমি এই সৌভাগ্য কামনা করি ।
অবশেষে প্রার্থনা করি নববর্ষে আমাদের জীবন কল্যাণের প্রাচুর্যে ভরে উঠুক। শান্তিময় হয়ে উঠুক আমাদের জীবন ও পৃথিবী। মহান আল্লাহর রহমতে পূর্ণ হোক আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। তিনিই সর্বত্র আমাদের সহায়। আমরা তার কাছেই আমাদের সকল স্বপ্নের শুভ পরিণতি কামনা করি ।