জানাযার নামাজে কেরাত হিসেবে সুরা ফাতেহা পড়া জিজ্ঞাসা : অনেকে বলে থাকেন যে, জানাযার নামাজে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে। আমার জানার বিষয় হলো- জানাযার নামাজে সুরা ফাতেহা পড়া কি জরুরি? না পড়লে নামাজের সমস্যা হবে কি না? এ ব্যাপারে শরিয়তের নির্দেশনা জানতে চাই। জুবায়ের খান চাঁদপুর
জবাব : জানাযার নামাজে কেরাত হিসেবে সুরা ফাতিহা পড়া যাবে না। তবে কেউ দোয়া হিসেবে পড়লে তাতে সমস্যা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/৩১৩)
দাফনের পর দোয়া করা মুস্তাহাব জিজ্ঞাসা : অনেক জায়গায় দেখা যায় জানাযার নামাজের পর এবং দাফন করার পর হাত তুলে সকলে দোয়া করে। আমরা জানি জানাযার নামাজের পর দোয়া করতে হয় না। অনুগ্রহপূর্বক জানাবেন। মিসবাহুদ্দিন কিশোরগঞ্জ
জবাব : জানাযার নামাজ-ই মূলত দোয়া, তাই জানাযার নামাজের পর দোয়া করা যাবে না। তবে দাফন করার পর দোয়া করা শুধু জায়েজই নয় বরং উত্তম। (আবু দাউদ শরিফ : ২/৪৫৯)
নামাজে ‘উহ-আহ’ শব্দ করা জিজ্ঞাসা : জনৈক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে নামাজে হঠাৎ ‘উহ-আহ’ আওয়াজ করে থাকে। এমতাবস্থায় তার নামাজ হবে কি না? আসাদুল্লাহ আল হাসান জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা
জবাব : প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি তার অসুস্থতার কষ্টের কারণে ‘উহ-আহ’ জাতীয় আওয়াজ করে, তাহলে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। (হেদায়া : ১৪/১১৪, আদ দুররুল মুখতার : ১/৬১৯)
জাকাতে বছর শেষের হিসাব ধর্তব্য জিজ্ঞাসা : আমি বছরের শুরুর টাকা হিসাবে ধরবো না শেষের? আমার কাছে সোনা রূপা কোনোটাই নাই। কিন্তু ৭.৫ ভরি স্বর্ণ বা ৫২.৫ ভরি দামের সমপরিমাণ নগদ টাকা আছে। এর ওপর জাকাত দিতে হবে কি না?
মারুফ হুসাইন বরিশাল
জবাব : কারো কাছে স্বর্ণ-রূপা না থাকলেও উভয়ের কোনোটার মূল্য সমপরিমাণ নগদ টাকা থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবে। আর যাকাত আদায় করার সময় বছরের শেষের টাকার হিসাব ধর্তব্য হবে। শুরুর হিসাব নয়। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩/১৭২, ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৬/৭৭)
হজের দম হারামের ভিতরেই করতে হবে জিজ্ঞাসা : একবার আমি ও আমার এক বন্ধু হজ করার জন্য রওয়ানা হলাম। মক্কা শরিফে পৌঁছে হজের সময় হজের কাজ শুর করলাম। ঘটনাক্রমে একদিন আমার বন্ধু এমন একটি কাজ করলো, যার ফলে তার ওপর দম ওয়াজিব হয়। কিন্তু আমার বন্ধু চাচ্ছে যে দমটা অর্থাৎ পশু জবাইটা সেখানে না দিয়ে দেশের বাড়িতে দিবে। এখন আমার জানার বিষয় হলো- তার জন্য কি বাড়িতে এসে দম দেয়া সঠিক হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন। মিজানুর রহমান বাগেরহাট
জবাব : দম মক্কার হারামের সীমানার মধ্যে আদায় করা জরুরি। তাই দেশে এসে দম আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। ( হেদায়া : ১/৩০১, ফাতাওয়া আলমগিরি : ২৬১)
অল্প অল্প স্বর্ণ রূপার যাকাত জিজ্ঞাসা : কারো নিকট ৪.৫০ ভরি সোনা, ২০ তোলা রূপা ও ১ লক্ষ নগদ টাকা আছে। এখানে সোনার হিসাব করলে নেসাব পূর্ণ হয় না। কারণ ১ লক্ষ টাকায় ৩ তোলা সোনা পাওয়া যায় না। কিন্তু রূপার হিসাব করলে নেসাব পূর্ণ হয়। কারণ ১ লক্ষ টাকায় ৫২.৫০ তোলার চেয়ে বেশি রূপা পাওয়া যায়। তাহলে কিভাবে হিসাব করা হবে? জাহিদুল আলম সিংগাইর, মানিকগঞ্জ
জবাব : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রূপার নেসাবের হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। তাই স্বর্ণ-রূপার মূল্য ও নগদ অর্থ এক সাথে মিলিয়ে মোট সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। (হেদায়া : ১/১৯৬, আদদুররুল মুখতার : ২/৩০)
মুসাফির ব্যক্তির জুমার ইমামতি জিজ্ঞাসা : আমার নানা বাড়িতে গেলে আমি নামাজ কসর করি। কিন্তু আমাকে মাঝে মাঝে জুমার নামাজের ইমামতি করতে বলা হয়। জানার বিষয় হলো- মুসাফির অবস্থায় কি আমি জুমার নামাজ পড়াতে পারবো? নিয়ামুল ইসলাম বি বাড়িয়া
কবুতর, চড়–ই জাতীয় হালাল পাখির বিষ্টা জিজ্ঞাসা : আমাদের মসজিদের কাতারে দাঁড়াতে গেলে অনেক সময় দেখা যায় সেখানে কাক, কবুতর বা চড়–ই পাখির বিষ্টা পড়ে আছে। জানার বিষয় হলো, এগুলো সত্ত্বেও কি সেখানে নামাজে দাঁড়ানো যাবে? নাকি অন্যত্র গিয়ে দাঁড়াতে হবে? তাছাড়া এজাতীয় পাখির বিষ্টা গাছের নিচ দিয়ে চলার সময় কাপড়ে পড়লে সে কাপড় নিয়ে নামাজ পড়া জায়েয হবে কি না? মুহা. আব্দুল্লাহ, নোয়াখালী
জবাব : কবুতর, চড়ই ও এজাতীয় হালাল পাখির বিষ্ঠা পাক। তাই এর কারণে মসজিদ ও কাপড় কোনটিই নাপাক হবে না। তবে কাকের বিষ্ঠা নাপাক। তাই নামাজ পড়ার সময় হাত, পা, হাটু ও কপাল রাখার স্থানে এর বিষ্ঠা থাকলে তা পাক করা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না। এবং কাপড়ের এক চতুর্থাংশের বেশি অংশে তা লাগলে এই কাপড় নিয়েও নামাজ জায়েজ হবে না। (আলবাহরুর রায়েক : ১/৪০০, আদদুররুল মুখতার : ১/৫২৫)
খাদ্যে তেলাপোকা পড়ে মারা গেলে জিজ্ঞাসা : আমার ভায়ের ম্যাংগো জুস তৈরির কারখানা আছে। একদিন সকালে ম্যাংগো পাল্পের ড্রামে দেখলাম একটি ব্যাঙ পড়ে আছে। অন্যটাতে দেখলাম বেশ কিছু তেলাপোকা পড়ে আছে। জানার বিষয় হলো- এ পাল্প দিয়ে জুস বানিয়ে খাওয়া কি জায়েয হবে? না জায়েজ হলে তা পাক করার কোনো উপায় থাকলে বলবেন। ইমাদ উদ্দিন ঠিকানাবিহীন
জবাব : যে ড্্রামে তেলাপোকা পড়ে ছিল তার পাল্প নাপাক হয়নি। বিধায় তা দিয়ে জুস তৈরি করে পান করা বৈধ। আর অপর যে ড্্রামটিতে ব্যাঙ মরেছিল যদি ব্যাঙটি স্থলের হয় জলের না হয় (আর এমনটাই স্বাভাবিক) তাহলে ঐ ড্্রামের পাল্প নাপাক হয়ে গেছে। তাই তা পবিত্র করা ছাড়া তার দ্বারা জুস বানানো এবং তা খাওয়া বৈধ হবে না। আর তা পবিত্র করার পদ্ধতি হলো, মৃত ব্যাঙটি ড্রাম থেকে ফেলে দেয়ার পর উক্ত ড্রামের পাল্পে পাল্প সমপরিমাণ পানি ঢেলে এমনভাবে জ্বাল দিতে হবে যেন পানিগুলো নিঃশেষ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার পানি ঢেলে জ্বাল দেয়ার দ্বারা আপনার পাল্প পাক হয়ে যাবে। (হেদায়া : ১/২০, ফাতহুল কাদির :১/৮৪)
হায়েজের দিন পূর্ণ না হলে তার হুকুম জিজ্ঞাসা : একজন মেয়ে লোকের বিগত দিনে ৮ দিন করে হায়েজ হয়েছিল। এ মাসে তার চার দিন হওয়ার পর দুই দিন হয়নি। এরপর আবার হয়েছে। জানার বিষয় হলো ৫ম ও ৬ষ্ট দিন তার কী করণীয় ছিল, সে কি অপেক্ষা করবে নাকি গোসল করে নামাজ পড়া শুরু করবে? কারিমা আক্তার ঠিকানাবিহীন
জাবাব : প্রশ্নোক্ত মহিলার যেহেতু পূর্ব থেকে আট দিন হায়েযের অভ্যাস রয়েছে, তাই এ মাসে তার ৫ম দিনের যে ওয়াক্তে রক্ত বন্ধ হয়েছে ওই ওয়াক্তের মুস্তাহাব সময়ের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর গোসল করে নামায রোযা আদায় করতে থাকবে। তবে অভ্যাসের দিনগুলো পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সে স্বামীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না। এবং এই দুই দিন যদি সে রোজা রেখে থাকে তাহলে তা শুদ্ধ হয়নি। তাই পরবর্তিতে তা কাজা করতে হবে। (ফতাওয়া আলমগিরি : ১/৩৯)
নামাজের মাঝে চুকা ঢেকুর আসলে জিজ্ঞাসা : বহুদিন যাবত আমি একটি সন্দেহের মধ্যে আছি যে, নামাজের মধ্যে যদি চুকা ঢেকুর আসে তাহলে কী করণীয়? মুহা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ফরিদপুর
জবাব : নামাজের মধ্যে অল্প ঢেকুর এলে তার সাথে যে, খাদ্য কণা ও সামান্য পানি আসে তা ফেলে দেয়া সম্ভব হলে ফেলে দিবে। তবে গিলে ফেললেও নামাজ নষ্ট হবে না। (ফতাওয়া আলমগিরি :১/১০২)
দাড়িবিহীন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ইমামতি জিজ্ঞাসা : একজন ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক। সে মাদরাসায় কাফিয়া জামাতে পড়ে। কিন্তু তার দাড়ি-মোচ গজায়নি। এমতাবস্থায় তার ইমামতির হুকুম কী? এনায়েতুল্লাহ খাদেম বি বাড়িয়া
জাবাব : দাড়ি-মোচ গজায়নি এমন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ইমামতি করতে পারবে। তবে ইমামতির যোগ্য দাড়িবিশিষ্ট অন্য ব্যক্তি থাকলে তার ইমামতি না করাটাই উত্তম। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৬/৩১৫)
খুতবার সময় টাকা কালেকশন করা জিজ্ঞাসা : আমাদের এলাকায় মসজিদে জুমার খুতবা চলাকলীন কালেকশনের জন্য দান বাক্স চালানো হয়। আমি মুয়াজ্জিনকে একদিন বলেছি যে খুতবা শোনা তো ওয়াজিব। তাই অন্যসময় কালেকশন করেন। তিনি বললেন খুতবার সময় কালেকশন করলে টাকা বেশি ওঠে। জানার বিষয় হলো- বেশি টাকা ওঠে বলে খুতবার সময় দান বাক্স চালিয়ে কালেকশন করা জায়েজ আছে কি না? আবরারুল হক সিলেট সদর
জবাব : জুমার খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা ওয়াজিব। জুমার খুতবা চলাকালীন কোনো কাজ করা বা কথাবার্তা বলা বৈধ নয়। তাই খুতবার মাঝে দান বাক্স চালিয়ে কালেকশন করা সম্পূর্ণ না জায়েজ। বেশি টাকা ওঠানোর জন্য কোনো না জায়েজ কাজ করা যাবে না। মসজিদের বেশি টাকা প্রয়োজন হলে তার জন্য বৈধ কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে। (আদদুররুল মুখতার : ২/১৫৯, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৮/২৯১)
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ মে'১৪ জব্দকৃত মাছ খাওয়া জিজ্ঞাসা : সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে প্রায় ১০০ মন জাটকা ইলিশ জব্দ করে আশপাশের বিভিন্ন মাদরাসার ইয়াতিমখানায় বিরতণ করে। জানার বিষয় হলো, এ মাছ খাওয়া জায়েয হবে কি? মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান ঢাকা
জবাব : প্রশ্নোক্ত মাছ এতিমখানার শুধু দরিদ্র ছাত্ররা খেতে পারবে। মাদরাসার অন্য কেউ খেতে পারবে না। কারণ মাছগুলো ধরা অন্যায় হলেও যারা ধরেছে তারা মাছের মালিক। আর যেহেতু এখন মাছগুলো মূল মালিকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়, তাই সে মাছ শুধু গরিব-মিসকিন ছাত্রদের খাওয়ানো যেতে পারে। (ফতাওয়া আলমগিরি : ৫/৪১৭)
কোরআন স্পর্শ করে কসম খাওয়া জিজ্ঞাসা : আমরা জানি গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে কসম খাওয়া জায়েয নেই। কিন্তু অনেক মানুষকে দেখি কুরআন স্পর্শ করে কসম খায়। এমনকি কিছু আলেমদেরকেও এমনটি করতে দেখেছি। তাই আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, কোরআনের কসম খাওয়া বা কোরাআন স্পর্শ করে কসম খাওয়া জায়েয আছে কি না? খালেদ সাইফুল্লাহ বায়তুল ফালাহ মাদরাসা, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
জবাব : কুরআন স্পর্শ করে কসম শব্দ উচ্চারণ করে কসম খেলে কসম হয়ে যাবে। তবে শুধু কুরআন স্পর্শ করে কোনো কিছু করা বা না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলে কসম হবে না। (আল বাহরুর রায়েক : ৪/৩১১, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৮/১৪৮)
নতুন দোকান উপলক্ষে মিষ্টি বিতরণ করা জিজ্ঞাসা : আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি দোকান করেছি। এ উপলক্ষ্যে বরকত লাভের জন্য মিলাদ না পড়িয়ে শুধু মিষ্টি বিতরণ করেছি। শরিয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো সমস্যা আছে কিনা? দয়া করে জানাবেন। জুনাইদ হাসান সাতমসজিদ সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
জবাব : আবশ্যক মনে না করে শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে মিষ্টি খাওয়ালে তা বৈধ হবে। (আদ দুররুল মুখতার : ২/১২০)
নামাজ রোজার কাফফারা আদায় প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : আমার মা কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। তার ইন্তেকালের পূর্বে ৮ মাস ৪ দিনের নামাজ এবং ১ মাসের রোজা কাজা হয়েছে। আর তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি রয়েছে ১০ শতাংশ। তিনি জীবদ্দশায় এগুলোর কাফফারা আদায়ের জন্য অসিয়ত করে যাননি। এমতাবস্থায় আমার প্রশ্ন হলো, ১. মোট কত টাকার কাফফারা আদায় করতে হবে? ২. তার কাফফারা আদায় করা আমাদের জন্য ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নাকি নফল? ৩. আদায় করলে কিভাবে আদায় করবো? ৪. কতদিনের মধ্যে আদায় করতে হবে? ৫. তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে আদায় করতে পারবো কি না? উল্লেখ্য, ওয়ারিসদের এই পরিমাণ সামর্থ্য নেই যে, ব্যক্তিগতভাবে তার কাফফারা আদায় করে দিবে। হাফেজ মুহিব্বুল্লাহ কুমুরুয়া, চাঁদপুর
জবাব : ১.২.৩. প্রশ্নের ক্ষেত্রে আপনার মা যেহেতু তার নামাজ-রোজার কাফফারা আদায় করার জন্য অসিয়ত করে যাননি, বিধায় আপনাদের জন্য তার কাফফারা আদায় করা জরুরী নয়। তথাপি যদি আপনারা তা আদায করে দেন, তাহলে তিনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন বিতিরসহ মোট ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেবে আট মাস চার দিনের জন্য মোট ১৪৬৪ ওয়াক্ত হয়। প্রতি ওয়াক্তের বিনিময়ে ৬৫-৭০ টাকা করে সদকা করে দিতে হবে। এমনিভাবে ৩০ রোযার প্রতিটির বিনিময়ে ৬৫-৭০ টাকা সদকা করে দিতে হবে। ৪. যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে দেওয়া উচিত। ৫. যদি ওয়ারিশদের মধ্যে কোনো নাবালেগ না থাকে এবং সকলে সন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি প্রদান করে, তাহলে আপনার মায়ের ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে কিংবা সকলের মাঝে ত্যাজ্য সম্পত্তি বণ্টন করার পর প্রত্যেক ওয়ারিশ নিজ নিজ অংশ থেকে আদায় করতে পারে। (ফতাওয়া আলমগিরি : ১/ ১২৫)
কাজা রোজা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : জনৈক মহিলা হায়েজ ও নেফাসের কারণে বিগত ৭/৮ বছর কিছু রোজা রাখতে পারেনি। এবং কোন বছর কয়টি রোজা অনাদায় রয়েছে তাও স্মরণ নেই। এখন এরোজাগুলো কিভাবে আদায় করা হবে? আবদুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ
জবাব : প্রশ্নোক্ত মহিলা হায়েয নেফাসের কারণে যে সকল রোজা রাখতে পারেনি, সে রোজাগুলোর সংখ্যা স্মরণ করার চেষ্টা করবে। যদি পুরোপুরি স্মরণ না আসে তাহলে যে ক’টি রোজা কাজা হওয়ার ব্যাপারে তার প্রবল ধারণা হয় সে ক’টি রোজা কাজা করে নিবে। আর নিয়ত এভাবে করবে যে আমার জীবনে কাজা হয়ে যাওয়া প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় রোজা আদায় করছি। (ফতাওয়া আলমগিরি : ১/১৯৬)
নামাজে মাইক ব্যবাহার করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : ক. আমাদের মহল্লার মসজিদের ফজর, মাগরিব ও ইশার নামাজ মাইক দ্বারা পড়ানো হয়। অথচ আমাদের মসজিদটি ছোট। ইমাম সাহেব মাইক ব্যবহার না করলেও মুক্তাদিরা শুনতে পাবেন। এমতাবস্থায় মাইক ব্যবহার করে নামাজ পড়ানো কতটুকু শরিয়তসম্মত? দলিলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো। খ. জনৈক মাওলানা সাহেব বলেছেন মাইক ব্যবহার করে নামাজ পড়ালে নামাজ শুদ্ধ হবে না। এমনকি যে ইমাম সাহেব মাইক ব্যবহার করে নামাজ পড়ান তিনি মাইক ছাড়া নামাজ পড়ালেও তার পেছনে ইকতিদা সহিহ নয়। কথাটি কতটুকু সঠিক, জানতে ইচ্ছুক। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ কুমিল্লা
জবাব : ক. মাইক ব্যবহার করা ছাড়া ও মুসল্লিগণ যদি সুস্পষ্টভাবে ইমামের তাকবির-কেরাত শুনতে পায় তাহলে মাইক ব্যবহার করা অনুত্তম, এতে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। খ. মাইকে নামাজ পড়ানো বৈধ, তাই প্রশ্নোক্ত মাওলানা সাহেবের কথাটি সম্পূর্ণ ভুল, ভিত্তিহীন ও বাড়াবাড়ির শামিল। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ৭/২৯৬, ফাতাওয়া রহিমিয়া : ৫/৭৯
উচু খাটে নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলাচল জিজ্ঞাসা : যদি কোনো ব্যক্তি দুই ফুট উচু খাটের ওপর নামাজ পড়ে তাহলে তার সামনে দিয়ে চলাচল করা যাবে কি? মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ
জবাব : দুই ফুট উচু খাটের উপর নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে ও চলাচল করা যাবে না। তবে খাটের উচ্চতা থেকে নিচ দিয়ে ঝুকে চলাচল করলে অসুবিধা নেই। (ফতাওয়া মাহমুদিয়া : ১১/১৭৭)
নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জিজ্ঞাসা : মুসল্লির সামনে দিয়ে কয় হাত জায়গার ভেতর দিয়ে চলাচল করলে গুনাহ হয়, আর সুতরা কয় হাত সামনে রাখতে হয়? আশরাফুদ্দীন নেত্রকোণা
জবাব : মসজিদ বা ঘর ৪০ বর্গ হাত থেকে কম হলে সুতরা ছাড়া মুসল্লির সামনে দিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই জায়েয হবে না। আর যদি ৪০ বর্গ হাত বা তার চেয়ে বড় হয় কিংবা মসজিদ ছাড়া ভিন্ন কোনো ময়দানে নামাজ পড়ে তাহলে মুসল্লির দৃষ্টি সেজদার স্থানে থাকলে সাধারণত যে স্থান পর্যন্ত নজরে আসে- যার পরিমাণ মোটামুটি মুসল্লির কাতারসহ সামনের আরোও দুই কাতার হয় এর ভেতর দিয়ে যাওয়া জায়েয হবে না। তবে ওই জায়গার বাহির দিয়ে গেলে জায়েয হবে। অর্থাৎ কোনো গুনাহ হবে না। আর সুতরা নামাজির পায়ের স্থান থেকে প্রায় তিন হাত দূরে রাখবে। (আদ দুররুল মুখতার : ১/৬৩৬, হেদায়া : ১/১১৮)
কাপড় ঝুলিয়ে সুতরা বানানো জিজ্ঞাসা : নামাজি ব্যক্তির সামনে লম্বা কাপড় বা রুমাল ঝুলিয়ে অতিক্রম করলে কি গুনাহ হবে? নাকি তা সুতরা বলে গণ্য হবে? আল আমিন নরসিংদী
জবাব : প্রয়োজনের সময় এক হাত বা তার চেয়ে বেশি লম্বা কাপড় বা রুমাল নামাজির সামনে ঝুলিয়ে গেলে কোনো গুনাহ হবে না। (আল বাহরুল রায়েক : ২/১৭, আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/৪১০)
নামাজে কুনুতে নাজেলা পড়া জিজ্ঞাসা : একজন ইমাম সাহেব ইশার নামাজের ২য় রাকাতে সুরার মধ্যে আটকে গিয়ে ভুলে কুনুতে নাজেলা পড়ে ফেলেন। অতঃপর তিনি সাহু সেজদা না করেই নামাজ শেষ করে ফেলেন। আমার জানার বিষয় হলো- এভাবে তার নামাজ পড়া কি সহিহ হয়েছে? উল্লেখ্য, তিনি ২য় রাকাতে ১০/১২ আয়াত পড়ার পর এমন হয়েছে। মোহা. ওয়ালিউল্লাহ, যশোর
জবাব : নামাজে কুনুতে নাযেলা পড়ার কারণে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় না, তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের নামাজ সহিহ হয়েছে। (ফতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/২২১) মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কেবলামুখি করে শোয়ানো উত্তম
জিজ্ঞাসা : আমার বাবা মৃত্যুর মুখে পতিত। জ্ঞানহীন অবস্থায় আছেন। এক ব্যক্তি আমাকে বলল, তাকে খাট থেকে নিচে নামিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ করে রাখতে হবে। কিন্তু আমার মন চাচ্ছে না। কারণ তিনি ঠাণ্ডার রুগি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? মৃত্যুর সময় করণীয় কী? মুহা. রওনক জাহান কাজীপাড়া, মিরপুর
জবাব : মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কেবলামুখী করে শোয়ানো উওম তবে আবশ্যক নয়। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার পিতাকে খাটের উপরই রেখে তার মাথাকে উত্তর দিকে ও পা গুলো দক্ষিণ দিক রেখে কেবলামূখী করা সম্ভব হলে তা করা উচিত। সম্ভব নাহলে ওই অবস্থায় রাখবেন। উল্লেখ্য, মৃত্যুর সময় করণীয় কাজ নিম্নেরূপ : ১.মরণাপন্ন ব্যক্তির পাশে বসে স্বাভাবিক উচ্চস্বরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া, যেন সে তা শুনে পড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। তবে তাকে পড়তে না বলা। ২. মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পড়া। ৩. মুমূর্ষু ব্যক্তিকে মরণোত্তর আল্লাহ পাকের রহমত লাভের সুসংবাদ দেয়া এবং নেককার ব্যক্তিদেরকে তার কাছে আনা এবং তার কোনো প্রিয় ব্যক্তি বা বস্তুকে ওই সময় উপস্থিত না করা। ৪.তার কাছে সুগন্ধি জ্বালানো। ৫.তাকে পানি পান করানো। ৬. মুমূর্ষু ব্যক্তি কোনো খারাপ কথা বলে ফেললে সেটাকে গুরুত্ব না দেয়া কিংবা সেটাকে নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করা। (আবু দাউদ শরিফ : ২/৪৪৪, আদ দুররুল মুখতার : ২/১৮৯)
নিম দাড়ি ও চেহারার পশম প্রসঙ্গে
জিজ্ঞাসা : আমি একজন সাধারণ লোক। আমি দাড়ি রাখি। কিন্তু আমি ঠোঁটের নিচের নিম দাড়ি চেছে ফেলি। এবং চেহারার পশম ও চেছে ফেলি। আমার জানার বিষয় হলো- শরিয়তের দৃষ্টিতে এভাবে নিম দাড়ি ও চেহারার পশম চাছা কি বৈধ? জানিয়ে উপকৃত করবেন। মোহা. মিনহাজ, টাঙ্গাইল
জবাব : নিমদাড়ি কাটা বৈধ হওয়া না হওয়ার বিষয়ে আলেমগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে বিধায় তা না কাটা উচিত। তবে দাড়ির সীমার বাইরের চেহারার পশম কাটতে কোনো সমস্যা নেই। (ফতাওয়া শামি : ৬/৪০৭, এমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/২৩০)
নবী করিম সা. মাটির তৈরি মানুষ জিজ্ঞাসা : আটরশি পীরের একজন মুরিদ আমাদের বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন। সে বলে হুজুর সা. হলেন নুরের তৈরি এবং তিনি হাজির নাজির। তাকে আমাদের মাঝে মৃত ব্যক্তির মতো মৃত বলা যাবে না। তাই আমার জানার বিষয় হলো ১. হুজুর সা. নুরের তৈরি না মাটির তৈরি? ২. তাকে হাজির নাজির মনে করা কেমন? ৩. তিনি রওজা আতহারে জীবিত না মৃত? তাকে মৃত বলা যাবে কি না? মুহা. মাহফুজুর রহমান কিশোরগঞ্জ
জবাব : ১. সৃষ্টিগত দিক থেকে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি রক্ত মাংসে গড়া আমাদের মতোই একজন মানুষ। তিনি নুরের তৈরি নন। তবে মর্যাদায় সকল সৃষ্টিজীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ’ (সূরা কাহাফ: ১১০) অবশ্য গুণগতভাবে তিনি নুরানি ছিলেন। ২. হাজির নাজির অর্থাৎ, যার অস্তিত্ব নির্ধারিত কোনো স্থানে নয়, বরং সর্বত্র বিরাজমান ও সমগ্র জাহানে বিদ্যমান। এবং সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুর আদি-অন্ত যার অগোচরে নয়। আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ এ গুণের অধিকারী নয়। তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাজির নাজির মনে করা শিরক। কোনো মুসলমানের এমন আকীদা হতে পারে না। ৩. হুযুুূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওযা আতহারে জীবিত। এবং তাঁকে বাহ্যিকভাবে আমাদের মতো মৃত বলা যেতে পারে। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ৪/৪০০, ফাইজুল বারি : ২/৬৪)
ডেসটিনি কোম্পানী প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : আমার ছোট খালা ডেসটিনি কোম্পানীর সাথে জড়িত হয়ে সেখানে কাজ করতেন। তিনি সেখান থেকে বেতনও পেতেন। কিছুদিন পর সেখানে সমস্যা হলে তিনি চলে আসেন। জানার বিষয় হলো তার জন্য ডেসটিনি কোম্পানীর সাথে জড়িত হয়ে কাজ করা কি জায়েয হয়েছে? যদি না হয় তাহলে সেখান থেকে যে অর্থ তিনি পেয়েছেন তা কী করবেন? মোছা. শামসুন্নাহার জুরাইন, ঢাকা
জবাব : ডেসটিনিসহ সকল মালটিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিগুলোতে শরিয়াহ পরিপন্থী অনেক বিষয় যেমন- সুদ-ধোঁকা ইত্যাদি বিদ্যমান থাকায় ওই সব কোম্পানিতে চাকুরি করা নাজায়েয। সেমতে আপনার খালার ডেসটিনিতে চাকুরি করা এবং বেতন ভাতা গ্রহণ করা কোনোটাই বৈধ হয়নি। তার কর্তব্য হচ্ছে উক্ত অর্জিত অর্থ সওয়াবের নিয়ত ব্যতিরেকে গরিবদেরকে সদকা করে দেওয়া। (ফাতাওয়া শামি : ৬/৫, ফাতাওয়া উসমানি : ৩৩/১২০)
লন্ড্রীওয়ালা থেকে হারানো কাপড়ের জরিমানা জিজ্ঞাসা : আমি লন্ড্রীতে তিনটি কাপড় দিয়েছি। লন্ড্রীওয়ালা বললেন, কাপড় কালকে নিয়েন। পরের দিন আনতে গেলে সে আমাকে দুটি কাপড় দিয়ে বলে আরেকটি পাচ্ছি না। জানার বিষয় হলো, লন্ড্রীওয়ালা থেকে হারানো কাপড়ের জরিমানা নেয়া যাবে কি? মুহা. মুহিব্বুল্লাহ বাগেরহাট
জবাব : হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য লন্ড্রীওয়ালা থেকে হারানো কাপড়ের জরিমানা নেওয়া জায়েয আছে। (ফাতাওয়া শামি : ২৪/২৮২)
মার্চ'১৪
অমুসলিমদের রান্না খাওয়া জিজ্ঞাসা : বিশেষ একটি প্রয়োজনে এবছর আমাদের বান্দরবন যেতে হয়। সেখানে আমরা হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের বাড়িতে অবস্থান করি। এবং তাদের প্লেটে তাদের রান্না করা খাবার খাই। অবশ্য যে সব জিনিস খাই সেগুলো হালাল ছিলো। জানার বিষয় হলো- অমুসলিমদের বাসন-পত্র ব্যবহার ও তাদের রান্না খাওয়া শরিয়ত সম্মত কিনা? আব্দুল কাদের মোহাম্মদপুর জবাব : অমুসলিমদের ব্যবহৃত পাত্র ধুয়ে ব্যবহার করা জায়েয। তবে পাত্র যদি পূর্ব থেকেই পবিত্র থাকে তাহলে সমস্যা নেই। তাদের রান্না করা হালাল খাবার খাওয়াও বৈধ। তবে তাদের হাতে জবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ১৮/১৬৬, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১৭/১৬)
মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইসলাম প্রচার জিজ্ঞাসা : অনেকে ফেসবুকে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নকল আইডি ব্যবহার করে। অর্থাৎ ছেলে হয়ে মেয়েদের নামে আইডি ব্যবহার করে। তাদের কথা হলো, মেয়েদের লেখা বেশি জনপ্রিয় হয়। অনেকে পড়ে। তাই তারা মেয়েদের নামে আইডি ব্যবহার করে। এভাবে নকল আইডি দিয়ে ফেসবুকে ইসলাম প্রচার করলে কোনো প্রকার গুনাহ হবে কি না? দয়া করে দলিলসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো। শাহাদাত হুসাইন খুলনা জবাব : ইসলাম প্রচার প্রত্যেক মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এবং একই সাথে অনেক সওয়াবেরও কাজ। তবে তা শরিয়তসম্মত পন্থায় হতে হবে। অবৈধ পন্থায় ইসলাম প্রচার করা যাবে না। আর মিথ্যা, শরিয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই ইসলাম প্রচার করার ক্ষেত্রে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নেই। তাই অহেতুক মিথ্যার আশ্রয় নেয়া বৈধ হবে না। (মুসলিম শরিফ:১/৭০)
খুতবায় বিভিন্ন দেশের নাম নিয়ে দোয়া করা জিজ্ঞাসা : আমাদের মসজিদের খতিব সাহেব জুমার দ্বিতীয় খুতবায় বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করে দোয়া করে থাকেন। এভাবে খুতবায় দেশের নাম নিয়ে দোয়া করা শরিয়তের দৃষ্টিতে কেমন? দয়া করে কোরআন হাদিসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন। মুহা. আবু সালেহ মির্জাপুর টাঙ্গাইল জবাব : জুমার নামাজের দ্বিতীয় খুতবায় বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করে মুসলমানদের জন্য দোয়া করা বৈধ। এতে কোনো সমস্যা নেই। (ফাতাওয়া শামি: ৩/২৪)
ইফতার দ্বারা জাকাত আদায় করা জিজ্ঞাসা : আমি ওমান প্রবাসী একজন বাঙালি। আমাদের এখানে ওমানিদেরকে দেখি যে, তারা জাকাত না দিয়ে সে টাকা দিয়ে গরিব বাঙালিদের ইফতার করিয়ে দেয়। জানার বিষয় হলো, এতে তাদের জাকাত আদায় হবে কি না? বেলাল হুসাইন সোহার, ওমান জবাব : না, যাকাতের টাকা দ্বারা রোজাদারকে খাওয়ালে যাকাত আদায় হবে না। (আদ দুররুল মুখতার:২/২৫৭)
নারীদের জামাত জিজ্ঞাসা : ঈদে মহিলাদের জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে শরিয়তের হুকুম কী? মোহা. আতিকুল ইসলাম জবাব : মহিলাদের জন্য ঈদের নামাজের জামাতসহ যে কোনো নামাজের জামাত মাকরুহে তাহরিমি। উপরন্তু মহিলাদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিবই নয়। তাই তাদের জন্য ঈদের নামাজের জামাতের ব্যবস্থা করার বিষয়টি আরো কঠিন। (আদ দুররুল মুখতার: ১/৫৬৫)
নফল নামজ না জুমার বয়ান জিজ্ঞাসা : আমাদের দেশে সাধারণত জুমার আরবি খুতবার আগে ইমাম সাহেব বাংলায় বয়ান করেন। আরবি খুতবার সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া যাবে না এটা পরিস্কার। কিন্তু বাংলা বয়ানের সময় প্রবেশকারী মুসল্লি তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না বয়ান শুনবে? কোনটা উত্তম? সৈয়দ মুহাইমিন আহমদ রুমী জবাব : জুমার দিনে খতিব সাহেবগণ যেহেতু আরবি খুতবা দেয়ার পূর্বে বাংলায় দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েলসহ বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করে থাকেন। এবং বয়ানের পর সুন্নাত পড়ার জন্য সময় দেন। তাই বয়ানের সময় সুন্নাত কিংবা অন্যান্য নফল নামাজ না পড়ে বয়ানে বসা উত্তম। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাতের কিছু সময় দ্বীনের ইলম শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়া সারারাত নফল ইবাদত করা থেকে উত্তম। (মিশকাত শরিফ ১/১১৭, আল বাহরুর রায়েক :২/২৭০)
নাবালেগের আজান-ইকামত জিজ্ঞাসা : আমাদের বাড়ির মসজিদে প্রায় সময় দেখা যায়, নাবালেক বাচ্চারা আজান দিয়ে দেয়। আবার অনেক সময় মসজিদে মুসল্লি কম থাকলে সেই নাবালেকের ইকামত দ্বারাই নামাজ শুরু হয়ে যায়। এমতাবস্থায় এ নামাজের হুকুম কী? নোমান খান মোমেনবাড়ি, চাঁদপুর
জবাব : নাবালেগ বাচ্চা যদি বুঝমান হয় তাহলে তার আজান ও ইকামাত সহিহ হবে। অবুঝ হলে সহিহ হবে না। (আদ দুররুল মুখতার:১/২৯১, আল বাহরুর রায়েক: ১/২৫৪)
স্বর্ণালোঙ্কারের জাকাত জিজ্ঞাসা : আমার নানি গত এক সপ্তাহ আগে মারা গেছেন। তিনি জীবদ্দশায় তার কিছু স্বর্ণালোঙ্কার আমার কোনো খালার কাছে রেখে গেছেন। কিন্তু এ বিষয়টি আমার নানা, মামা এবং অন্যান্য খালারা এমনকি আমার মাও জানেন না। এখন এ স্বর্ণের জাকাত কার উপর আসবে? এবং এর মালিক সেই খালাই থাকবেন, নাকি ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে? ফয়জুল্লাহ সাইফ সেরাজাদাবাদ, টঙ্গিপাড়া, মুন্সিগঞ্জ জবাব : প্রশ্নোক্ত স্বর্ণগুলো যদি আপনার নানি আপনার ওই খালাকে দান না করে শুধু সংরক্ষণের জন্য তার নিকট রেখে যান, তাহলে সে স্বর্ণের মালিক একা আপনার ওই খালা নয়; বরং আপনার নানির ত্যাজ্য সম্পদ হিসেবে তা সকল ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ হবে। ভাগ হওয়ার পর প্রত্যেকে নিজ অংশের জাকাত প্রদান করবে। আর যদি তাকে দান করে মারা যান, তাহলে সে স্বর্ণের মালিক আপনার ওই খালা। সুতরাং তিনি যখন থেকে ওই স্বর্ণের মালিক তখন থেকে তাকে তার জাকাত দিতে হবে। উল্লেখ্য, প্রথম ক্ষেত্রে স্বর্ণের মালিক আপনার নানি ছিল। সুতরাং জীবদ্দশায় যদি তিনি ওই স্বর্ণের জাকাত না দিয়ে থাকেন, তাহলে যে কয় বছরের জাকাত দেননি ওই বছরগুলোর জাকাত এখন ওয়ারিশগণ নিজ সম্পদ থেকে দিয়ে দিতে পারে। (ফাতাওয়া আলমগিরি:১/১৭৫)
জেনে শুনে চুরির মাল ক্রয় করা জিজ্ঞাসা : এক লোক আমার নিকট একটা মোবাইল বিক্রি করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি জানি এটা সে চুরি করে এনেছে। তা জানা সত্ত্বেও আমার জন্য ওই মোবাইল ক্রয় করা বৈধ হবে কী? মোহাম্মদ মারুফ, মালঞ্চ, হবিগঞ্জ জবাব : জেনে শুনে চুরি করে আনা মোবাইল ক্রয় করা বৈধ হবে না। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া:১৬/৪৪, ফাতাওয়া রশিদিয়া:২/১৮৭)
রেকর্ডকৃত আজানের জবাব জিজ্ঞাসা : বর্তমানে রেডিও টেলিভিশনে যে আজান শুনা যায় তার জবাব দিতে হবে কি না? ফাহিম সিদ্দিকী ইসলামাবাদ, মতলব জবাব : রেডিও-টেলিভিশনে সাধারণত রেকর্ডকৃত আজান প্রচার করা হয়ে থাকে। আর রেকর্ডকৃত আজান যেহেতু প্রকৃত আজান নয়, তাই তার জওয়াব দিতে হবে না। তবে যদি কখনো সরাসরি আজান সম্প্রচার করা হয় তাহলে তার জওয়াব দিতে হবে। (ফাতাওয়া রহিমিয়া:৪/৯৯, খাইরুল ফাতাওয়া: ২/২২৫)
বদলি হজ জিজ্ঞাসা : করিম সাহেবের উপর হজ ফরজ। অনেক দিন থেকে তিনি খুব অসুস্থ। যার কারণে তিনি নিজে হজ করতে পারছেন না। তাই তিনি আরেক ব্যক্তিকে নিজের পক্ষ থেকে বদলি হজ করার জন্য পাঠান। তিনি ওই ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, যেন সে ইফরাদ হজ করে। এখন ওই ব্যক্তির জন্য তামাত্তু হজ করার কি অনুমতি আছে? মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জবাব : না, ওই ব্যক্তির জন্য তামাত্তু হজ করার অনুমতি নেই। বরং ইফরাদ হজই করতে হবে। তথাপিও যদি সে তামাত্তু হজ করে, তাহলে এই হজ তার নিজের পক্ষ থেকে আদায় হবে। এবং বদলি হজের আদেশদাতাকে তার দেয়া খরচাদির টাকা ফেরত দিতে হবে। (আদ দুররুল মুখতার:২/৬১১)
ইমামের জন্য ঘর নির্মাণ জিজ্ঞাসা : আমাদের মসজিদটি ভেঙে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। এখন মসজিদের ভেতরে এক কোণায় ইমাম সাহেবের জন্য কামরা বানানো হয়েছে। এটা কি জায়েয হয়েছে? উল্লেখ্য ওই অংশটুকুও মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত। খালেদ বিন বাশার রায়ের বাজার, ঢাকা জবাব : না, মসজিদের কোনো অংশে ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য কামরা বানানো বৈধ নয়। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৬/৪৪৪) ফিতরা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : আমি কোনো কারণে ঈদের দিন বা তার আগের দিন ফিতরা আদায় করিনি। পরবর্তীতে ফিতরা দিয়েছি। জানার বিষয় হলো আমার ফিতরা আদায় হয়েছে কি না? নাসির খান চাঁদপুর জবাব : হ্যাঁ, আপনার ফিতরা আদায় হয়ে গেছে। তবে ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই তা আদায় করা উচিত। (ফাতাওয়া আলমগিরি:১/১৯২) হস্তমৈথুনে রোজা ভাঙ্গে কি না? জিজ্ঞাসা : আমি মাঝে মাঝে প্রচণ্ড উত্তেজনাবশত দিনের বেলা হস্তমৈথুন করি। এতে কি আমার রোজার কোনো ক্ষতি হবে? হাবীবুল্লাহ সিরাজী টেকনাফ জবাব : হ্যাঁ, রোজা অবস্থায় হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এবং তা কাজা করতে হবে। তবে কাফাফারা দিতে হবে না। উল্লেখ্য, হস্তমৈথুন করা সর্বাবস্থায় কবিরা গুনাহ। তাই তা থেকে বিরত থাকা জরুরি। (আদ দুররুল মুখতার:২/৩৯৯)
গোসল ফরজ অবস্থায় নামাজ পড়া জিজ্ঞাসা : আমার ওপর গোসল ফরজ ছিল। কোনো ভালো ব্যবস্থা না থাকায় আমি গোসল করতে পারি নি। এদিকে লজ্জার কারণে মসজিদে যাই এবং ইকামত দেই। এ ব্যাপারে শরিয়তের বিধান কী? আব্দুল্লাহ কিশোরগঞ্জ জবাব : আপনি গোসল ফরয হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র লজ্জার কারণে গোসল না করে মসজিদে গিয়ে নামাজে শরিক হয়ে ইকামত দিয়ে মারাত্মক গুনাহের কাজ করেছেন। যার জন্য আপনাকে আল্লাহ পাকের দরবারে খালেছ অন্তরে তাওবা করতে হবে। এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। অন্য মুসল্লিদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। ওই নামাজ পুনরায় পড়তে হবে না।
গোপনে বিয়ে করা জিজ্ঞাসা : আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি। আমাদের মাঝে পরস্পরে চোখের গোনাহ হয়। আমরা দুজনই ছাত্র। আমার বয়স ষোল আর মেয়ের বয়স সতের। গোনাহ থেকে বাঁচার জন্য আমরা কাজি অফিসে না গিয়ে দুজন সাক্ষীর সামনে বিয়ে পড়িয়ে চলতে চাই। আমরা এখন পরিবারকে জানাবো না। পরবর্তীতে কর্মজীবনে গিয়ে জানাবো। আমাদের এ বিয়েটি সহিহ হবে কি না? এবং এ মুর্হূতে আমাদের করণীয় কী? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়নগঞ্জ।
জবাব : বিয়ের সঠিক সময় এবং সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে উপযুক্ত বয়সে স্ত্রীর ভরণ পোষণের ক্ষমতা অর্জনের পর পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত পাত্রীকে বিয়ে করা। সময়ের পূর্বে পিতা-মাতার অজান্তে বিয়ে করা একেবারেই অনুচিত। কেননা তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনে। এক্ষেত্রে এখন আপনার করণীয় হচ্ছে পরিণত বয়সে পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ে করা এবং সকল প্রকার অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকা। তবে যদি কমপক্ষে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলেন, তাহলে যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবেÑ কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্পূর্ণ অনুচিত হবে। আপনি আখেরাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদের জানিয়ে তাদের পরামর্শক্রমেই বিয়ে করুন। দায় দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়। তাছাড়া মেয়ের অভিভাবকদের না জানিয়ে বিয়ে করা তার জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে। [আদ দুররুল মুখতার ৩/৫৬, আল বাহরুর রায়েক ৩/১৯২]
সদকায়ে ফিতির জিজ্ঞাসা : কিতাবে পড়েছি যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। কিন্তু গ্রামের এক আলেম মসজিদের ওয়াজে বললেন, এই সদকায়ে ফিতর সবারই আদায় করতে হবে। অন্তত না আদায় করতে পারলে একজনেরটি অপরজনকে দিয়ে পরিবর্তন করে খেতে হবে। এ কথাটির কোনো ভিত্তি আছে কি না? আফজাল হুসাইন জামালপুর। জবাব : নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপরই কেবল সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। আর এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই যে, ফিতরা আদায়ের সংগতি না থাকলেও কমপক্ষে একজনেরটা আরেকজনকে দিয়ে পরিবর্তন করতে হবে। [আল বাহরুর রায়েক ১/২৪৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৮৮]
সম্মিলিতভাবে জিকির করা জিজ্ঞাসা : প্রতি সপ্তাহে কোনো একদিন মজলিস বা মসজিদে জামাতবদ্ধ হয়ে মাইক বা মাইক ছাড়া উচ্চ আওয়াজে জিকির করা জায়েয আছে কি? এবং রূহের রোগ দূর করার জন্যে জিকির করার উত্তম পদ্ধতি কি? বিস্তারিত দলিলসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো। সুলতান মাহমুদ যাত্রাবাড়ি
জবাব: জিকির পছন্দনীয় একটি ইবাদত। কুরআনও হাদিসের বহু স্থানে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জিকির সব সময় করাই কাম্য। তবে কোনো কোনো সময় একাকি বা সম্মিলিতভাবে দিন তারিখ নির্ধারণ করেও জিকির করা যেতে পারে এবং পরিচালক কর্তৃক মাইক ব্যবহার করা, মাঝে মাঝে শের বা কবিতা পাঠ করাও বৈধ। তবে এমনভাবে জিকির করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি যথা- ১. এমন আওয়াজে পড়তে হবে যাতে মসজিদে উপস্থিত কারো কিংবা মজলিসের বাইরের কোনো ব্যক্তির সমস্যা না হয়। ২. মজলিসের মাঝে পঠিত শের বা কবিতা ভালো অর্থবোধক হতে হবে। ৩. দিন, তারিখ, জামাতবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়কে আবশ্যক মনে করা যাবে না। অন্যথায় তা বিদাআত বলে পরিগণিত হবে। আর মনে রাখতে হবে যিকিরের মধ্যে সর্বোত্তম জিকির হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে নিুস্বরে অত্যন্ত ধ্যান ও খেয়ালের সাথে জিকির করা। আবু দাউদ শরিফ ১/৪ ফাতাওয়া আলমগিরি ৫/৩১৫] ব্যবসার মালের জাকাত জিজ্ঞাসা: আমরা আট জন মিলে একটা সমিতি করি। আমাদের মূলধন আট লক্ষ টাকা। আমরা মুদারাবা চুক্তিতে বিনিয়োগ করি। শুরু থেকেই এভাবে করে আসছি। প্রায় এক বছর হয়ে গেছে, বর্তমানে টাকাগুলো ব্যবসায় আছে, আমাদের হাতে নেই। এখন এই টাকার জাকাত দিতে হবে কি না? মুহাম্মদ হুসাইন ফারুক মিরপুর-১১, ঢাকা।
জবাব: হ্যাঁ, আপনাদের সমিতির টাকার জাকাত দিতে হবে। প্রত্যেক অংশিদার নিজের বিনিয়োগকৃত মূলধন ও লাভের অনুপাতে অন্য সম্পদের সাথে জাকাত আদায় করবে। [আদ দুররুল মুখতার ৩/২৬৮, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৬৪]
কবরস্থানের জায়গায় মাদরাসা জিজ্ঞাসা: আমরা ২০/২৫ বছর আগে পারিবারিক কবরস্থানের জন্য কিছু জমি ক্রয় করি। উক্ত স্থানে আজ থেকে প্রায় ১৬/১৭ বছর আগে ৩/৪ জন বালেগ-নাবালেগ লোকের কবর দেওয়া হয়েছিল, যা এখন বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই স্থানটি বিরান অবস্থায় বনজঙ্গলে পতিত পড়ে আছে। চারদিকে ঘনবসতি ও অদূরেই একটি বৃহৎ গণকবরস্থান নির্মিত হওয়ায় এখন এই জায়গায় কাউকে দাফন করার প্রয়োজন হয় না। উপরন্ত জায়গাটি বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায়, ঐ স্থানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে মাদরাসা নির্মাণ করা যাবে কি না? মুহাম্মদ দলিল উদ্দিন খান ১৯৫ দক্ষিণখান ঢাকা। জবাব: প্রশ্নোক্ত কবরস্থান ব্যক্তি মালিকানাধীন হলে মালিকের অনুমতি ক্রমে তাতে দ্বীনি মাদরাসা নির্মাণ করা যাবে। আর যদি তা মৌখিক বা লিখিতভাবে ওয়াকফ করা হয়ে থাকে তাতে অন্য কিছু নির্মাণ করা যাবে না। তবে যদি বাস্তবেই এর কোনো প্রয়োজনীয়তা না থাকে এবং তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেখানে দ্বীনি মাদরাসা নির্মাণ করা যেতে পারে। [আদ দুররুল মুখতার ২/২৩৩ ফাতাওয়া আলমগিরি ১/১৬৭] তাবলিগে চিল্লা দেওয়ার হুকুম জিজ্ঞাসা : তাবলিগে এক চিল্লা বা তিন চিল্লা দেওয়ার হুকুম কী? বিশেষত আলেমদের জন্য। মুহাম্মদ হাশমত আলী কলাবাগন, ঢাকা। জবাবা : মূলত দ্বীনের প্রচার প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকা ফরজে কেফায়া। তা যে কোনো পদ্ধতিতে করলেই আদায় হয়ে যাবে। তবে যেহেতু বাস্তবতার আলোকে প্রমাণিত যে, বর্তমানে প্রচলিত তাবলিগ জামাতে চিল্লা বা তিন চিল্লার জন্য বের হওয়া দ্বীনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই সকল মুসলমানের এ কাজে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করা কর্তব্য। তবে চিল্লা বা তিন চিল্লা কারো জন্য ফরজ, ওয়াজিব নয়। সুতরাং যদি কেউ প্রচলিত তাবলিগের কাজের সঙ্গে জড়িত না হয়, তাহলে তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করা কিংবা হেয় প্রতিপন্ন করা ঠিক হবে না। অবশ্য তাবলিগের মূল দায়িত্ব আলেমদের ওপর বিধায় তাদের জন্য উচিত হলো এ কাজে যথাসাধ্য সময় দেওয়া। [আল বাহরুর রায়েক ৮/৫৭, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৪/৪]
মহিলাদের মাথার চুল জিজ্ঞাসা : আমি জানতে চাই যে, শরিয়তে মহিলাদের চুল রাখার সুন্নত পদ্ধতি কী? অর্থাৎ অনেকের চুল কোমর ছাড়িয়ে যায়। তাই তারা কি এখন পুরোটাই রাখবেন, না হয় কী করবে? মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম
জবাব : মেয়েদের চুল মুণ্ডন করা বা কেটে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। আবার এতো বড় রাখা উচিত নয় যে, গোছলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো। সেমতে কোমরের নিচের অংশ কেটে ফেলা জায়েয হবে। অবশ্য না কাটলেও কোনো সমস্যা নেই। [তিরমিজি শরিফ ১/১৮২, মুসলিম শরিফ ১/১৪৮]
টাকা পরিশোধ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : কয়েক বছর পূর্বে আমি একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। ভর্তি হওয়ার কয়েক মাস পরেই কলেজ ছেড়ে চলে আসি। যে কয় মাস কলেজে ছিলাম সে কয় মাসের বেতন পরিশোধ করিনি। যেহেতু এই কয়েক মাস কলেজে ভর্তি হয়ে আমার তেমন কোন লাভ হয়নি এবং টাকা কোনো ব্যক্তি পাবে না তাই উক্ত টাকা পরিশোধ করতে হবে কি না? যদি করতে হয় তাহলে আদায়ে বিলম্ব করার কারণে গুনাহ হবে কি না? মুহা. মমতাজ উদ্দীন জবাব : কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে উক্ত কলেজের নিয়মানুযায়ী যে কয়মাস আপনি উক্ত কলেজের ছাত্র বলে পরিগণিত হয়েছেন সে কয়মাসের বেতন কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট আদায় করা আপনার ওপর ফরজ। সুতরাং অনতিবিলম্বে তা পরিশোধ করা অবশ্য কর্র্তব্য। উল্লেখ্য যে, কলেজের বেতন আদায়ে বিলম্ব করা অন্যায় হয়েছে। কেননা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও পাওনাদারের হক আদায় না করা বা আদায়ে বিলম্ব করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। তাই এ ব্যাপারে আপনার করণীয় হলো কলেজ কর্তৃপক্ষ অথবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে অপরাধ মার্জনা করিয়ে নেওয়া। অত:পর আল্লাহ পাকের নিকট তাওবা ও ইস্তেগফার করা। পীর-মুরিদের কারণে পর্দা জিজ্ঞাসা : আমাদের এলাকায় একজন পীর সাহেব আছেন। তার সবচেয়ে বড় কারামতি হচ্ছে তার নিকট কোন রোগী উপস্থিত হলেই বা রোগের নাম বললেই রোগ ভালো হয়ে যায়। তার ভক্তদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ভক্তদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। মহিলারা তার সাথে অবাধে দেখা সাক্ষাৎ করে। তিনি বলেন, পীর সাহেবের সঙ্গে সকল মহিলাদের দেখা সাক্ষাৎ করা জায়েয। এখন জানার বিষয় হলো ক. পীর সাহেবের সঙ্গে মহিলাদের দেখা সাক্ষাৎ জায়েয কি না? খ. পীর সাহেবের নিকট রোগী উপস্থিত হলেই বা রোগীর নাম বললেই রোগ ভালো হয়ে যায় এর রহস্য কী? মো. রকিবুল হাসান জবাব : ক. কোরআন হাদিসের সুস্পষ্ট ভাষ্য অনুযায়ী কেবল মাত্র মাহরাম আত্মীয়দের পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ জায়েয। বেগানা নারী পুরুষের দেখা সাক্ষাৎ শরিয়তের বিধান মতে নাজায়েয। আর শরিয়ত কর্তৃক যাদেরকে মাহরাম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে তারাই মাহরাম বলে গণ্য। পীর- মুরিদ বা অন্য কোন সম্পর্কের কারণে মাহরাম সাব্যস্ত হয় না। এবং পর্দার বিধান শিথিল হয় না। সুতরাং শরীয়তের দৃষ্টিতে পীরের সাথেও পর্দা করা জরুরি। পর্দার ব্যাপারে উক্ত ভণ্ড পীরের মনগড়া বক্তব্য সম্পূর্ণ কোরআন সুন্নাহ বিরোধী। এধরনের ব্যক্তি আদৌ হাক্কানী পীর হতে পারে না। বরং এরা হচ্ছে পীর নামে শয়তানের দোসর, ভণ্ড ও প্রতারক। এদের নিকট না যাওয়া ও এদের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। খ. বিভিন্ন পীর ও দরবেশ নামধারীদের নিকট রোগী উপস্থিত হলে বা রোগীর নাম বললে যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হয় রোগ ভালো হয়ে গেছে, কিন্তু এটা মূলত শয়তান বা দুষ্ট জীনের কুদৃষ্টি বা কারসাজি। এ সকল ভণ্ড পীররা শয়তান ও দুষ্ট জীনদের বাতলানো পদ্ধতি অনুযায়ী বিভিন্ন তদবির করে থাকে এবং তাতে অনেক সময় কুফুরি কালাম ও যাদু থাকে। যার ফলে বাহ্যত মনে হয় রোগ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বিষয়টি এমন নয়। এ বিষয়টি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর হাদিস দ্বারা আরো সুষ্পষ্ট হয়। তিনি বলেন আমি রাসূলে করিম সা. কে বলতে শুনেছি, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও যাদু হল শিরকি কাজ। তখন তার স্ত্রী বললেন আপনি এ কেমন কথা বলছেন। আল্লাহর কসম আমার চোখ থেকে পানি ঝড়ত, আমি অমুক ইহুদির নিকট ঝাড়-ফুঁকের জন্য গিয়েছি। সে ফু দেওয়ার সাথে সাথে আমার চোখের পানি পড়া রোগ ভালো হয়ে গেছে। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন এটা হলো শয়তানের কাজ। সে নিজের হাতে তোমার চোখে খোঁচা মারে। আর যখন উক্ত শয়তানের নাম নিয়ে শিরকি পন্থায় ইহুদি তোমার চোখে ফুঁক দেয় তখন শয়তান তার হাত গুটিয়ে নেয়। এবং তোমার চোখের পানি পড়া বন্ধ হয়ে যায়। -আবু দাউদ ২/৫৪২। (আদ দুররুল মুখতার ১/৪০৬, শরহুফিকহিল আকবার ১৩৩)
দাঁড়ি রাখার হুকুম জিজ্ঞাসা : পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা কি জরুরি? জান্নাতি পুরুষদের কি দাঁড়ি থাকবে? দাঁড়ি রাখা না রাখার ক্ষতি ও লাভ জানালে ভালো হয়। মুসাম্মাত আমিনা, খাসহাওলা নরসিংদী জবাব : দাড়ি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন বা প্রতীক। শরিয়তের দৃষ্টিতে পুরুষদের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব। সকল মাজহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, দাড়ি মুণ্ডানো বা কাটÑছাট করে এক মুষ্টির কম করা নাজায়েয। এবং এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী কবিরা গুনাহ। রাসুলে পাক সা. নিজে দাড়ি রেখেছেন এবং এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে বলেছেন তোমরা দাড়ি বড় কর এবং মোচ ছোট কর। (বুখারি ২/৮৭৫) দাড়ি মুণ্ডালে পুরুষের প্রাকৃতিক চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। এটা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন সাধনের মতো জঘন্য অপকর্মও বটে। যে ব্যাপারে কোরআন হাদিসে কঠোর বাণী এসেছে। তাই যে ব্যক্তি এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাট ছাট করে বা মুণ্ডিয়ে রাখে সে শরিয়তের দৃষ্টিতে ফাসেক বলে গণ্য। জান্নাতি পুরুষদের দাড়িÑমোচসহ শরীরে কোনো লোম থাকবে না। (বুখারি শরিফ ২/৮৭৫, আদ দুররুল মুখতার ২/৪১৮)
বিবাহ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা : এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়। অতপর ইদ্দত পালনের পর ছোট ভাইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। জানার বিষয় হচ্ছে ছোট ভাইয়ের সাথে বিবাহ হওয়ার কারণে কোনো কাফফারা দিতে হবে কি না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। জবাব : না, এক্ষেত্রে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো রকমের কাফফারা আসবে না এবং এ বিবাহ সম্পূর্ণ শরিয়তসম্মত হয়েছে। (সূরা নিসা, ফাতাওয়া দারুল উলুম ৭/১৯১)
দেয়াল বা শো-কেইসে কোরআনের আয়াত রাখা জিজ্ঞাসা : অনেকের বাসা-বাড়িতে কোরআন শরিফের আয়াত বা সুরা দেয়াল বা শো-কেইস কিংবা ঘরের অন্যান্য স্থানে রাখতে দেখা যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে রাখা জায়েয কি না? মুহা. আবুল হাসানাত, নারায়নগঞ্জ। জবাব : সাধারণত সম্মান ও ভক্তি করে অথবা বরকত লাভের আশায় এটি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেমতে কুরআন শরিফের কোনো সুরা বা আয়াত কাঁচ ও ফ্রেম দিয়ে বাঁধাই করে অথবা প্লাষ্টিক লেমিনেশন করে পূর্ণ আদব- ইহতিরাম ও যতেœর সহিত শোÑকেইস বা অন্য কোনো দর্শনীয় স্থানে রাখা বা স্থাপন করা জায়িয আছে। বি. দ্র. যে ঘরে গুনাহের কাজ হয় যেমন- টিভি ভিডিও বা গানবাদ্য চলে, মানুষ বা কোনো প্রাণীর স্পষ্ট ছবি লটকানো থাকে এরূপ ঘরে পবিত্র কুরআনের সুরা বা আয়াত টাঙ্গানো জায়িয নেই। (আদ দুররুল মুখতার ১/১৭৮, ফাতাওয়া শামি ১/১৭৮, ফাতাওয়া আলমগিরি ৫/৩২৩, আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২৩)