বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী গোপন সংগঠনসমূহ
মাওলানা লিয়াকত আলী জুন'১৪ গত সংখ্যার আলোচনা : কয়েক শতাব্দী ধরে একটি বিশেষ গোষ্ঠী নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এজেন্ডা পুরো বিশ্বে কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ দেশ তা মেনেও নিয়েছে। এ ব্যাপারে শীর্ষে রয়েছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো ও তাদের গোপন সংস্থাসমূহ। এ সকল গোপন সংস্থাসমূহ ও সমাজের কিছুটা পরিচয় তুলে ধরা প্রয়োজন।... এ সংখ্যার আলোচনা : ০১. বিল্ডারবার্গ গ্রুপ (ইরষফবনবৎম এৎড়ঁঢ়) বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী গোপন সংস্থা। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে সংস্থাটির সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি প্রসঙ্গে অসাধারণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গত সংখ্যয় উল্লেখিত হয়েছে। ০২. দ্য কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (ঞযব ঈড়ঁহপরষ ড়হ ঋড়ৎবরমহ জবষধঃরড়হং)-এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ১৯২১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠানটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম শুরু করে। দৃশ্যত প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করে। কিন্তু এটির পিছনে প্রকৃত চালক বিল্ডারবার্গ গ্রুপ। এ কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে রকফেলার, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিকসন ও ডীন রাস্কের নাম (উবধহ জঁংশ) উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার মিডিয়া মালিকরা, রাজনীতিকরা, পুঁজিপতি ও ব্যাংক কর্মকর্তারা এ গ্রুপের সদস্য। এরাও সারা বিশ্বে মার্কিন প্রশাসনের স্বপ্নদ্রষ্টা। অথচ তারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার ও ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টের জন্য দিন রাত কাজ করছে। ০৩. দ্য ট্রাইল্টারাল কমিশন (ঞযব ঞৎরষধুবৎধষ ঈড়সসরংংরড়হ)-মার্কিন নীতি নির্ধারক ও পুঁজিপতি ব্রজনেস্কি ১৯৭৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি প্রতিষ্ঠায় তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মৌলিক ভূমিকা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যেন সারা বিশ্বে একক শাসক হিসেবে আর্বিভূত হতে পারে এজন্য এ কমিশন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিপতি ও ব্যাংকাররা আর্থিক সহায়তা করেন। ০৪. দি ইলুমিন্য াটি (ঞযব ওষষঁসরহধঃর)-এই গোপন সংস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো নিয়ে গঠিত। ভাবধারার দিক দিয়ে এ সংগঠনটির উদ্দেশ্য দাজ্জালের আগমনের জন্য পথ সুগম করা এবং পুরো বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্ব পল্লীতে রূপান্তরিত করা। এ সংগঠনের পরিবারগুলো পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দখল করে রেখেছে। পাঠকরা জেনে অবাক হবেন অথচ এটাই বাস্তবতা যে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের মালিকানা বেসরকারি। এ সংগঠনের পরিবারই ব্যাংকটির মালিক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান ব্যাংক যেমন সিটি, মরগ্যান ইত্যাদির মালিকানাও তাদের। ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটনকে প্রেসিডেন্ট করার ব্যাপারে এই গোপন সংস্থাটি মৌলিক ভূমিকা পালন করেছিল। দি ইলুমিন্যাটি গঠিত হয়েছে বিশ্বের ১৩টি সবচেয়ে ধনী পরিবার নিয়ে। পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তাদের দখলে। এই গোপন সংগঠনটির ইঙ্গিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য পরিচালিত হয়। (ক) অ্যাস্টর পরিবার (অংঃড়ৎ ঋধসরষু)-এ পরিবারের প্রধান ছিলেন জার্মান মার্কিন জন জ্যাকব অ্যাস্টর। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিলিয়নেয়ার। যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই প্রথমে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এ পরিবার এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৪১ টি গোপন ক্লাব পরিচালনা করছে। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী অ্যাস্টর পরিবারের কাছে এখন দুই ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী। (খ) বোন্ডি পরিবার (ইড়ঁহফর ঋধসরষু)-বোন্ডি পরিবারকে অপরাধের দিক দিয়ে বিশ্বের সম্রাট মনে করা হয়। ১৯৮০ এ সিরিয়াল কিলার (ঝবৎরধষ শরষষবৎ) টেড আর বোন্ডি (ঞবফ জ ইড়ঁহফর) দৃশ্যপটে আসেন। মার্কিন জনসাধারণ তাকে চিনত না। ফ্লোরিডা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেন। তিনি তার মেয়েবন্ধু এলিজাবেথ কে-াল (ঊষরুধনবঃয কবহফধষষ) এর সামনে অপরাধ স্বীকার করে বলেন, তিনি মানসিক রোগী নন। বরং তিনি সচেতনভাবে এসব হত্যা করেছেন। তাকে এ হত্যার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল এক দেব শক্তি, যাতে দাজ্জালের শাসন তাড়াতাড়ি আসতে পারে। (গ) কলিন পরিবার (ঈড়ষষরহং ঋধসরষু)-কলিন পরিবারও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি। ইলুমিন্যাটি গ্রুপে কলিন পরিবারের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। ব্রিটেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এ পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে। (ঘ) ডু পন্ট পরিবার (উঁ চড়হঃ ঋধসরষু)-এ পরিবারটিকে বলা হয় রসায়ন শিল্পের সম্রাট। যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিবারটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রের রসায়নশিল্প দখল করে রেখেছে এ পরিবার এবং নিজেদের ইচ্ছা মতো তারা তা চালায়। এ পরিবারের ক্ষমতা অনুমানের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সারা বিশ্বের রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্য নির্ধারণ এ পরিবারের সম্মতি ছাড়া হয় না। ইলুমিন্যাটি গ্রুপে এ পরিবারের মর্যাদা বিনিয়োগকারীর মতো। (ঙ) ফ্রিম্যান পরিবার (ঋৎববসধহ ঋধসরষু)-এ পরিবার যুক্তরাষ্ট্র ও পুরো বিশ্বে মানবাধিকারের জন্য সোচ্চার। এ পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা করে ইলুমিন্যাটি গ্রুপের ড্রাগ মাফিয়া। পুরো বিশ্বের সিভিল সোসাইটি এ অর্থেই পরিচালিত হয়। (চ) কেনেডি পরিবার (কবহহবফু ঋধসরষু)-যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এ পরিবারের ভূমিকা ও অবদান কারো অজানা নয়। জন এফ কেনেডিকে মেরে ফেলা হয়েছিল এ জন্য যে, তিনি ইলুমিন্যাটি গ্রুপের মৌলিক কর্মসূচি থেকে সরে গিয়ে ছিলেন এবং ইহুদি আধিপত্য মেনে নিতে রাজি হননি। (ছ) লি পরিবার (খবব ঋধসরষু) চীনের লি পরিবারও এই গোপন দাজ্জালি সংগঠনের অংশ। চীনের অর্থনীতিতে লি পরিবারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। চীনের লি পরিবার ও হংকংয়ের প্রভাবশালী লি পরিবার ইলুমিন্যাটি সংগঠনের গোপন পরিবারগুলোর অন্তর্ভুক্ত। চীনের অর্থনীতিতে লি পরিবারের ভূমিকা ও অবদান সবার জানা। (জ) ওনাসিস পরিবার (ঙহধংরং ঋধসরষু) এ পরিবারে রয়েছে দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীরা। তারা তাদের শয়তানি জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে বিশ্বকে অস্থির করে রাখেন। কিছু সংখ্যক গবেষকের মতে ওনাসিস পবিবারের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ব বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। কেননা তাকে এখনো দর্শন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয় এবং তার বক্তব্যের ওপর পিএইচডি করানো হয় যাতে বিশ্ব ধর্ম থেকে বি"িছন্ন হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিতে সীমাবদ্ধ থাকে এবং দাজ্জালের আগমন হলে বুদ্ধিবৃত্তির সিদ্ধান্তে তার কাছে বায়আত হয়। বর্তমানে এ পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী পরিবার। এটি মূলত গ্রীক পরিবার এবং এ পরিবারের সদস্যদের নাম রাখা হয় প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লাটো ও অ্যারিস্টেটলের নামে। (ঝ) রকফেলার পরিবার (জড়পশভবষষবৎ ঋধসরষু)-ইলুমিন্যাটি গ্রুপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবার এটি। বর্তমানে এ পরিবারের প্রায় ১৯০ জন সদস্য দাজ্জালি পরিকল্পনার সমর্থনে কাজ করছে। রকফেলার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারক। উপরে উল্লিখিত গোপন সংস্থারও অংশ এ পরিবার। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে যে যুদ্ধ চালা"েছ, তাও রকফেলারের পরিকল্পনার অংশ। (ঞ) রোথশিল্ড পরিবার (জড়ঃযপযরষফ ঋধসরষু)-সারা বিশ্বে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তক মনে করা হয় রোথশিল্ড পরিবারকে। দাজ্জালি পরিকল্পনা জোরদার করতে ও ইসরাইলকে গ্লোবাল ভিলেজের কাউন্সিলর করার ব্যাপারে এ পরিবারের অবদান ঐতিহাসিক। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। (ট) রাসেল পরিবার (জঁংংবষ ঋধসরষু) জাদুটোনার জন্য প্রসিদ্ধ এ পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রের কালো জাদু ও দাজ্জালের আগমনের জন্য প্রস্তুতির ব্যাপারে রাসেল পরিবার মৌলিক ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রে এ কাজ করা হয় গোপনে। (ঠ) ভ্যান ডিয়ুন পরিবার (ঠধহ উুঁহ ঋধসরষু)-গোপন পরিবারগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্পদশালী পরিবার হিসেবে পরিচিত। এ পরিবারের পূর্বপুরুষরা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন এ পরিবারের শতাধিক প্রকল্প সচল রয়েছে। চকলেট শিল্পের ওপর এ পরিবারের এক"ছত্র আধিপত্য। ইউরোপের রাজ পরিবারের সাথে এ পরিবারের গোপন ও জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। (ড) মেরোভিনজিয়ান পরিবার (গবৎড়ারহমরধহ ঋধসরষু)-ইউরোপের পুরো রাজপরিবার এই পরিবারের আওতাভুক্ত। খৃস্টপূর্ব পাঁচশ বছর থেকে এ পরিবার চলে আসছে এবং বিভিন্ন নাম ও পদ্ধতিতে ইউরোপ শাসন করে আসছে। এটি ইলুমিন্যাটি গ্রুপের রাজপরিবার এবং সেজন্য পরিবারটিকে সম্মানে নজরে দেখা হয়। এখানে ইলুমিন্যাটি গ্রুপের ১৩ টি পরিবারের কিছুটা পরিচয় তুলে ধরা হলো। তারা আধ্যাত্মিক ও ভাবধারাগত ভিত্তির ওপর কাজ করছে। আর এসব পরিবারেরই গঠন করা বিল্ডারবার্গ বা সিএফসি বা টিএলসি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। ০৫. স্কাল অ্যান্ড বোনস (ঝশঁষষ ইড়হবং)-গোপন এই সংস্থাটি সারা বিশ্বকে একই সমাজে পরিণত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে। এ সংস্থার নেতৃত্বে রয়েছে বুশ পরিবার। ১৯৬৩ সালে স্কাল অ্যান্ড বোনস ও সিআইএ একত্রিত হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডিকে হত্যা করিয়েছিল। কারণ জনএফ কেনেডি নতুন বিশ্বব্যবস্থা কর্মসূচি থেকে সরে গিয়েছিলেন। ০৬. ফ্রিম্যাসন (ঋৎববসধংড়হ) ইন্টারনেটে ফ্রিম্যাসন সম্পর্কে অনেক কিছুই রয়েছে। ফ্রিম্যাসন একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন হিসেবে পরিচিতি। বিশ্বের সব এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনের নামে সক্রিয় দাজ্জালি সংগঠনগুলোর পিছনে কাজ করছে ফ্রিম্যাসন। এ সংগঠনের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্ট ও ইহুদি পুঁজিপতি। তারা দাজ্জালি ভাবধারা এনজিওগুলোর মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে বিস্তার ০৭. ফেডারেল রিজার্ভ (ঋবফবৎধষ জবংবৎাব)-এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্দয় ও বিপদজনক সংস্থা। এখানকার সিদ্ধান্তগুলো জানেন শুধু ব্যাংকার, কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক ও আন্তর্জাতিক পুঁজিপতিরা। মার্কিন নাগরিকদের ওপর নীতি আকারে চাপিয়ে দেয়া হয় এই এলিট শ্রেণির নির্দেশ। ০৮. বোহেমিয়ান (ইড়যবসরধহ)-এই গোপন ক্লাবের ভিত্তি স্থাপিত হয় ১৮৭২ সালে। মার্কিন সাংবাদিকরা এ সংগঠনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এখন এ সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের বড় বড় পুঁজিপতি, সঙ্গীতশিল্পী ও মিডিয়া আইকন। এ সংগঠনের গোপন কার্যক্রমও রয়েছে, তা হলো পেচার উপাসনা। সব সদস্য মাঝরাতে উঠে পেচার উপাসনা করে এবং দাজ্জালি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থনা করে। বোহেমিয়ান ক্লাব যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি গোপন সংগঠন। ০৯. ব্লাক নবিলিটি (ইষধপশ ঘড়নরষরঃু)-এটি ইউরোপ ও আমেরিকার অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি সংগঠন। তারা বলেন, প্রকৃত সত্য কেবল তারাই জানে এবং তা রক্ষার দায়িত্বও তাদেরই। এই পরিবার ও সংগঠনে রয়েছে ইউরোপের ধর্মীয় পরিবারগুলো। ১০. ভ্যাটিকান (ঠধঃরপধহ)-খৃস্টানদের ধর্মীয় কেন্দ্র এখন গোপন সংস্থাগুলোর দখলে। পোপ তাÑই বিবৃতি দেন যা গোপন সংগঠনগুলো বলে দেয়। কেননা দ্য ব্লাক নবিলিটির আশীর্বাদ ছাড়া ভ্যাটিক্যানে কেউ পোপ হতে পারেন না। ১১. উইকা (ডরপপধ)-এটি একটি অত্যন্ত রহস্যময় সংগঠন। শুধু সদস্যদের দ্বারাই এ সংগঠনের পরিচয় পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে এনজিও, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ইন্টারনেট ওয়েবসাইট ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা কার্যক্রম চালায়। তারা স্রষ্টার বিশ্বাস করে না, বুদ্ধিবৃত্তিকে চূড়ান্ত বিচারক মনে করে। ১২. দ্যা রাউন্ডটেবল ( ঞযব জড়ঁহফঃধনষব)-এ গোপন সংগঠনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এদের উদ্দেশ্য বিশ্বে অস্থিরতার নীতি চালু করা। বিশ্বকে অস্থিতিশীল করা তারপর নিজেরাই তার সমাধান বলে দেয়া তাদের কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে প্রথমে অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করা তারপর ঋণের মাধ্যমে তা সমাধান করা তাদের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ১৩. ম্যানেস্টিক টুয়েলভ (গধলবংঃরপ ঞবিষাব)-বিজ্ঞানী, সেনা কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি গোপন সংগঠনের সাঙ্কেতিক নাম এটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান সংগঠনটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখন এটির অস্থিত্ব নেই। দাজ্জালি ব্যবস্থা বা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকসমূহ চিহ্ণিত করা এ সংগঠনের কাজ ছিল। এ সব বড় বড় গোপন সংগঠন ছাড়াও আরো অনেক গোপন সংগঠন রয়েছে, যারা বিশ্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সেগুলোর নামও এখানে উল্লেখ করা হলো। ০১. ক্লাব অব রোম ( ঈষঁন ড়ভ জড়সব) ০২. দ্য কমিটি অব থ্রি হানড্রেড ( ঞযব ঈড়সসরঃঃবব ড়ভ ৩০০) এ কমিটির কাজ অর্থ, বীমা, মাদক ব্যবসা, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্প ও ধর্ম নিয়ন্ত্রণে রাখা। ০৩. ফিলোসফারস অব ফিয়ার (চযরষড়ংড়ঢ়যবৎং ড়ভ ঋবধৎ) ০৪. দ্য গ্রুপ অব এইচ (ঞযব এৎড়ঁঢ় ড়ভ ঐ).০৫. রোডস স্কলার প্রগ্রাম (জযড়ফড়ং ঝপযড়ষধৎং চৎড়মৎধসসব) ০৬. ব্লাক লজ (ইষধপশ খড়ফমব)০৭. অ্যাসপিন ইনস্টিটিউট (অংঢ়রহ ওহংঃরঃঁঃব) ০৮. নাইটস অব মাল্টা (ঘরমযঃং ড়ভ গধষঃধ) ০৯. ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্টস (ডড়ৎষফ ঋবফবৎধষরংঃং) ১০. দ্য সার্কেল অব ইনিশিয়েটস (ঞযব ঈরৎপষব ড়ভ ওহরঃরধঃবং) ১১. নাইন আননোন ম্যান (ঘরহব ঁহশহড়হি সধহ) ১২. লুসিস ট্রাস্ট (খঁপরং ঞৎঁংঃ) ১৩. টেভিস্টিক ইনস্টিটিউট (ঞধারংঃরপ ওহংঃরঃঁঃব) ১৪. ব্রিটিশ কোয়ার্টার করোনাটি (ইৎরঃরংয ছঁধৎঃবৎ ঈড়ৎড়হধঃর) ১৫. মুমা গ্রুপ (গঁসসধ এৎড়ঁঢ়) ১৬. নাসি প্রিন্সেসা (ঘধংর চৎরহপবংং) ১৭. মিলনার গ্রুপ ( গরষহবৎ ৎড়ঁঢ়) ১৮. ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডড়ৎষফ ঊপড়হড়সরপ ঋড়ৎঁস) ১৯. ঔপেস ডি (ঙঢ়বং উবর) ২০. হেরামিটিক অর্ডার অব গোল্ডেন ডাউন (ঐবৎধসরঃরপ ঙৎফবৎ ড়ভ এড়ষফবহ উড়হি) ২১. রোজিক্রুশিয়ানস (জড়ংরপৎঁপরধহং) ২২. নাইটস অব দ্য গার্টার (ঘরমযঃং ড়ভ ঃযব এধৎঃবৎ) ২৩. দ্য প্রায়োরি জায়ন (ঞযব চৎরড়ৎু তরড়হ) ২৪. প্রিন্স চার্লস অ্যান্ড দ্যা ব্লাক নোবিলিটি অব ইউরোপ (চৎরহপব ঈযধৎষবং ধহফ ঃযব ইষধপশ ঘড়নরষরঃু ড়ভ ঊঁৎড়ঢ়ব) ২৫. দ্য থুলি সোসাইটি (ঞযব ঞযঁষর ঝড়পরবঃু) ২৬. থিয়োসফিকাল সোসাইটি (ঞযবড়ংড়ঢ়যরপধষ ঝড়পরবঃু) ২৭. দ্য উইথেজ লিগ যার পাবলিক অ্যাবেয়ারনেস (ঞযব ডরঃযবং খবধমঁব ভড়ৎ চঁনষরপ অধিৎবহবংং) ২৮. দ্য গার্ডিয়ান্স (ঞযব এঁধৎফরধহং) ২৯. কী ফার্টারনিটি (কবু ঋবৎঃবৎহরঃু) ৩০. ব্রাদারহুড অব øেক (ইৎড়ঃযবযড়ড়ফ ড়ভ ঝহধশব) সব গোপন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করলে এবং তাদের অশুভ পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য জানলে পাঠকদের পশম খাড়া হয়ে উঠবে। সারা বিশ্ব গ্রাস করে রেখেছে এসব গোপন সংগঠন। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা সাত শ কোটি পার হয়ে গেছে। ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, সাত শ কোটি মানুষের ওপর কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের ইচ্ছামত আইন ও নিয়ম চাপিয়ে দিচ্ছে। এসব আইন কার্যকর করার জন্য ফ্রন্টম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের শোচনীয় অবস্থা হওয়ার পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। দাজ্জালি ব্যবস্থা চালুর পথে খৃস্টধর্ম ও অন্যান্য ধর্ম বালুর বাধের মতো প্রমাণিত হয়েছে। কেননা ইউরোপ আইন কানুন ও দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের প্রভাব দূর করেছে। মানবতাবাদের ব্যবস্থা চালু করেছে। মানবতাবাদের স্লোগান দিয়ে নেপথ্যে কী খেলা চলছে তা অনুমান করাও কঠিন। পরিহাসের বিষয় এই যে, মানবতাবাদ যেকোনো ধর্মের একটি ক্ষুদ্র দিক। এটিকে ধর্মের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানো হ"েছ, যা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়। তৃতীয় বিশ্বের জনগণের ওপর মিডিয়ার সাহায্যে প্রতিদিন হামলা চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণায় জনসাধারণের মনমস্তিষ্ক দখল করে রাখা হয়েছে। মিডিয়ার উদ্দেশ্য পুরো বিশ্বে অনাচার ও বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ধর্ম থাকলে নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য মিডিয়া ও তথাকথিত মাবনাধিকার সংগঠনগুলো দাজ্জালি দর্শনকে সফলতার ভিত্তি আর ধর্মকে সেকেলে ও অকেজো প্রমাণ করার জন্য প্রচারণা চালায়। ইবলিসি ও দাজ্জালি ব্যবস্থার মৌলিক চিন্তাধারা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। এজন্য বিশ্বের বড় বড় গোপন সংগঠন মাবনাধিকারের নামে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এই দাজ্জালি ব্যবস্থার সামনে একমাত্র প্রতিবন্ধক রয়েছে ইসলাম ধর্ম। এ জন্যই মুসলিম দেশগুলোতে এখন এত অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। মুসলমানদেরকে ভিতর থেকে দুর্বল করে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন অনেক আগেই দেখা হয়েছে। এখন তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী গোপন সংগঠনসমূহ
মাওলানা লিয়াকত আলী
মে'১৪
মানব ইতিহাসের বিস্তৃত স্রোতের নিচে প্রবাহিত হয় গোপন সমাজগুলোর গোপন স্রোত, যা মানব ইতিহাসের সমুদ্রের উপরে ঘটমান পরিবর্তনসমূহের সিদ্ধান্ত করে গভীরে প্রবাহমান লাগাতার স্রোতের মাধ্যমে। অর্থাৎ সমুদ্রের উপরে যে স্রোত ও ঢেউ দৃষ্টিগোচর হয়, তাছাড়াও রয়েছে অত্যন্ত গভীরে প্রবাহ স্রোতসমূহ। সমুদ্রের গভীরে প্রবাহমান স্রোতগুলোর কারণেই সমুদ্রের উপরের ঢেউ দেখা যায়। সুতরাং মানব ইতিহাসের জোয়ার ভাটার প্রকৃত কারণ সেইসব গোপন সমাজ, যারা নেপথ্যে থেকে সিদ্ধান্ত নেয় এবং পুরো মানবতাকে সেইসব সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়। জনগণের নাড়ি ও হৃদয়ের কম্পন নিয়ন্ত্রণ করে এমন একদল ব্যক্তি, যারা অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান এবং তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসে আছেন। তারা বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির নীতি নির্ধারক, পুঁজিপতি, রাজনীতিবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তারা অত্যন্ত সফলতার সাথে একটি সর্বসম্মত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন, যা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নতুন বিশ্বব্যবস্থা নামে পরিচিত। আমরা এটিকে শয়তানি ব্যবস্থা নাম দিতে পারি। কয়েক শতাব্দী ধরে একটি বিশেষ গোষ্ঠী নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এজেন্ডা পুরো বিশ্বে কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ দেশ তা মেনেও নিয়েছে। এ ব্যাপারে শীর্ষে রয়েছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো। এসব দেশের ওপর পুরো প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে এই গোপন সমাজ। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরা যাক। মার্কিন সংবিধানে যেসব সংশোধনী আনা হয়, সেগুলোর পিছনে কাজ করে এই প্রভাবশালী লবি। তাদের নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বে বিস্তৃত। তারা প্রথমে সংবিধান রচনা করে। তারপর সময় অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ত্র“টি খুঁজে বের করে এবং সেগুলোর সংশোধনী আনে। এতে জনগণের আস্থা নষ্ট হয় না। সংবাদ, সাহিত্য, চলচিত্র, গবেষণাপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে মার্কিন জনগণকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়। তারপর যখন নতুন আইন পাস করা হয়, তখন তারা তা সহজে মেনে নেয়। এ জন্য মনে হয় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নতুন বিল আনেন। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশ তৈরি করে সেই বিশেষ গোষ্ঠী। কিন্তু তাদের সেই চক্রান্ত বা পরিকল্পনা প্রকাশ পায় না। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষক এই নেপথ্য শক্তি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন এবং তাদের পরিচয় ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যেসব গোষ্ঠী সংগঠন ও পরিবার বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ওপর গবেষণা করছেন দেশপ্রেমী ও মানবপ্রেমী হিসেবে পরিগণিত বুদ্ধিজীবীদের এই শ্রেণীটি। তারা বলছেনÑ এই দাজ্জাল গোষ্ঠীটি আমাদের অর্থনীতি, আমাদের সংস্কৃতি এমনকি আমাদের দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে দখল করে রেখেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি সংগঠন ও কয়েকটি পরিবারেরই তৈরি করা ব্যবস্থা সারা বিশ্বে চালু রাখা হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বলা হচ্ছে প্রত্যেক দেশের নীতি ও ব্যবস্থা নিজস্ব। যেমন ব্রিটেনের অর্থনৈতিক কৌশল ও পরিকল্পনা ব্রিটেনেরই। এভাবে অন্যান্য দেশের ব্যাপারেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। কিন্তু ইউরোপের সব দেশের জন্যই একই নিয়ম ও ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী। শুধু ইউরোপের নয় পুরো বিশ্বের সব দেশের জন্য তাদের রয়েছে একক এজেন্ডা। আর তা বাস্তবায়নের জন্য তারা সব ধরনের পরিকল্পনা করতে থাকে। এরা পরিকল্পনার মাস্টার। তারপর তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্ব। ইতিহাসে এ ব্যাপারে প্রচুর নজির রয়েছে। যেমন রকফেলরের নাম উল্লেখ করা যায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। তিনি কোন পরিবার ও কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত, তা সবাই জানে। তিনি যখন কোন কথা বলেন বা কোন পরিকল্পনা পেশ করেন, তখন পুরো মার্কিন প্রশাসন তা পালনে ও বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানকালে এই দাজ্জাল গোষ্ঠী যে হাতিয়ার ব্যবহার করছে, তা হলো সংবাদ মাধ্যম ও গোপন সমাজ। মিডিয়ার বর্ণিত ও প্রদর্শিত বিষয়কে বর্তমানে সত্য বলে মনে করা হয়। মিডিয়া সরকার গঠন করে, সরকারের পতনও ঘটায়। কারা মিডিয়াকে এত শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে উপস্থাপন করল। যারা মিডিয়া তত্ত্বাবধান করে, তারাও গোপন সমাজের সাথে জড়িত। যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে ইন্টারনেটে শুধু একটি গোপন সংস্থা বিল্ডারবার্গ গ্র“প সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। তাহলে জানতে পারবেন আজকের মিডিয়া কী করছে এবং কাদের ইঙ্গিতে চলছে। সংবাদ বিশ্লেষণ, লোগো, গল্প, কবিতা, চলচ্চিত্র, ছবি সবকিছুতে কয়েক শতাব্দী ধরে এক বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও চিন্তার প্রতিফলন ঘটছে। এগুলোর অধিকাংশের সম্পর্ক একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সাথে। তাদের চাল-চলন ও বেশভূষাকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানানো হয়েছে। তাদের বর্তমানের সব পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে অতীতের কয়েক শতাব্দীর চিন্তাভাবনা। বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার লোগো বা মনোগ্রাম এমনিতেই হয় না। বরং তার পিছনে থাকে বিশেষ তাৎপর্য। সত্যমিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে এবং সভ্যতার আবরণ গায়ে জড়ানোর কারণে রণাঙ্গন ও বাহিনীর পরিবর্তন হয়। কিন্তু এগুলোর পিছনে সক্রিয় থাকে একই চিন্তা ও মনোভাব। গোপন প্রতিষ্ঠান ও সমাজগুলো ধর্মহীনতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। আর ধার্মিক ও ধর্মপ্রচারকদের প্রতি বিদ্রƒপ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মিডিয়ার ভূমিকা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। এখানে একটি বিষয় বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। যখন মিডিয়া এত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী ছিল না, তখন কয়েক জন বিখ্যাত দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিক এমন সাহিত্য ও দর্শন আবিষ্কার করেছিলেন, যা এখন মিডিয়ার কল্যাণে সারা বিশ্বে বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। ইতিহাস সাক্ষী, এসব সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী ধর্মের ওপর অভিযোগ ও আপত্তি তোলা ছাড়া কিছুই করেননি। এই নতুন দর্শনকে কখনো সোসালিজম আবার কখনো কম্যুনিজম নাম দেয়া হয়। কিন্তু ধর্মের সাথে লড়াই সব দর্শনেই রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই লড়াইয়ে মিডিয়া সবসময় দাজ্জালী দর্শনের পক্ষ নিয়েছে। আধুনিক যুগের আবিষ্কারসমূহ ও প্রযুক্তির পাশাপাশি ইতিহাসের পাতায় পড়ে থাকা গোষ্ঠীটিও নেমেছে। এ থেকে জানা যায়, অধিকাংশ নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী কবি, সাহিত্যিক ও রাজনীতিক এই গোপন সমাজের সক্রিয় ও তৎপর সদস্য। বর্তমানে বিশ্বে যত গোপন সমাজ বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যদের ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। এখানে তাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা গেল। ০১. অহঙ্কার ও গর্ব এসব সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা অহমিকাবোধের শিকার। তাদের মধ্যে অহঙ্কার ও গর্ব থাকে। তারা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তারা মনে করে তাদেরকেই শাসক হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, জনসাধারণ তাদের গোলামি করবে। এ জন্য যে গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা তৎপর থাকে, তা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অন্যরা জানে বলে তারা মনে করে না। গোপন পরিকল্পনার কারণেই তাদের মধ্যে অহঙ্কার ও গর্ব থাকে। ০২. দ্বিমুখী চরিত্র গোপন সমাজের সদস্যরা দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের লোকদের সাথে তাদের আচরণ ও জনসাধারণের সাথে তাদের আচরণে অনেক ব্যবধান হয়ে থাকে। ০৩. কৌশলী কর্মপন্থা তারা প্রথমে নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পেশ করে এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে। তারপর সেসব প্রতিক্রিয়ার আলোকে পরিকল্পনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বই পুস্তক বা সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে প্রচার করা হয়। ০৪. জন্মগত সাধু গোপন সমাজের লোকেরা নিজেদেরকে জন্মগতভাবে সাধু বলে মনে করে। কেননা তাদের ধারণা অনুযায়ী যে উদ্দেশ্যে তারা কাজ করে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ০৫. ত্রাণকর্তার আগমনে বিশ্বাস বিভিন্ন ধর্মে ত্রাণকর্তা আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। ইসলামে ইমাম মাহদির আগমন সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। খৃস্টধর্মেও হযরত ঈসা আলায়হিস সালামের আবার আগমনের কথা রয়েছে। কিন্তু গোপন সংস্থাগুলোর সাহিত্যে দাজ্জাল বা অহঃর পযৎরংঃকে ত্রাণকর্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে, যার আগমনের পথ সুগম করার জন্য এসব সংস্থা কাজ করছে। গোপন সংস্থাগুলো সাধারণভাবে দৃশ্যপটে আসে না। কিন্তু সব যুগেই সব সরকারে তাদের শিকড় থাকে। এখন তাদের পুরো নজর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। কেননা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র পরাশক্তি রয়েছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য একক পরাশক্তির প্রয়োজন ছিল। কারণ দুটি পরাশক্তি থাকলে শক্তির ভারসাম্য থাকে। অথচ দাজ্জালি পরিকল্পনা অনুযায়ী শক্তির ভারসাম্যহীনতা প্রয়োজন। দীর্ঘ ভূমিকার পর এখন গোপন সংস্থাসমূহ ও সমাজের কিছুটা পরিচয় তুলে ধরা প্রয়োজন। তাদের অতীত ও বর্তমান বিশ্বের সামনে নিয়ে আসা জরুরী বলে মনে হচ্ছে। ০১. বিল্ডারবার্গ গ্র“প (ইরষফবনবৎম এৎড়ঁঢ়) বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী গোপন সংস্থা। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে সংস্থাটির সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি প্রসঙ্গে অসাধারণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গত সংখ্যয় উল্লেখিত হয়েছে। ০২. দ্য কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (ঞযব ঈড়ঁহপরষ ড়হ ঋড়ৎবরমহ জবষধঃরড়হং)-এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ১৯২১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠানটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম শুরু করে। দৃশ্যতঃ প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করে। কিন্তু এটির পিছনে প্রকৃত চালক বিল্ডারবার্গ দ্রুপ। এ কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে রকফেলার, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিকসন ও ডীন রাস্কের নাম(উবধহ জঁংশ) উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার মিডিয়া মালিকরা, রাজনীতিকরা, পুঁজিপতি ও ব্যাংক কর্মকর্তারা এ গ্র“পের সদস্য। এরাও সারা বিশ্বে মার্কিন প্রশাসনের স্বপ্নদ্রষ্টা। অথচ তারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার ও ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টের জন্য দিন রাত কাজ করছে। ০৩. দ্য ট্রাইল্টারাল কমিশন (ঞযব ঞৎরষধুবৎধষ ঈড়সসরংংরড়হ)-মার্কিন নীতি নির্ধারক ও পুঁজিপতি ব্রজনেস্কি ১৯৭৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি প্রতিষ্ঠায় তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মৌলিক ভূমিকা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যেন সারা বিশ্বে একক শাসক হিসেবে আর্বিভূত হতে পারে এজন্য এ কমিশন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিপতি ও ব্যাংকাররা আর্থিক সহায়তা করেন। ০৪. দি ইলুমিন্যাটি (ঞযব ওষষঁসরহধঃর)-এই গোপন সংস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো নিয়ে গঠিত। ভাবধারার দিক দিয়ে এ সংগঠনটির উদ্দেশ্য দাজ্জালের আগমনের জন্য পথ সুগম করা এবং পুরো বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্ব পল্লীতে রূপান্তরিত করা। এ সংগঠনের পরিবারগুলো পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দখল করে রেখেছে। পাঠকরা জেনে অবাক হবেন অথচ এটাই বাস্তবতা যে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের মালিকানা বেসরকারি। এ সংগঠনের পরিবারই ব্যাংকটির মালিক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান ব্যাংক যেমন সিটি, মরগ্যান ইত্যাদির মালিকানাও তাদের। ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটনকে প্রেসিডেন্ট করার ব্যাপারে এই গোপন সংস্থাটি মৌলিক ভূমিকা পালন করেছিল। দি ইলুমিন্যাটি গঠিত হয়েছে বিশ্বের ১৩টি সবচেয়ে ধনী পরিবার নিয়ে। পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তাদের দখলে। এই গোপন সংগঠনটির ইঙ্গিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য পরিচালিত হয়। (ক) অ্যাস্টর পরিবার (অংঃড়ৎ ঋধসরষু)-এ পরিবারের প্রধান ছিলেন জার্মান মার্কিন জন জ্যাকব অ্যাস্টর। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিলিয়নেয়ার। যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই প্রথমে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এ পরিবার এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৪১ টি গোপন ক্লাব পরিচালনা করছে। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী অ্যাস্টর পরিবারের কাছে এখন দুই ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী। (খ) বোন্ডি পরিবার (ইড়ঁহফর ঋধসরষু)-বোন্ডি পরিবারকে অপরাধের দিক দিয়ে বিশ্বের সম্রাট মনে করা হয়। ১৯৮০ এ সিরিয়াল কিলার (ঝবৎরধষ শরষষবৎ) টেড আর বোন্ডি (ঞবফ জ ইড়ঁহফর) দৃশ্যপটে আসেন। মার্কিন জনসাধারণ তাকে চিনত না। ফ্লোরিডা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেন। তিনি তার মেয়েবন্ধু এলিজাবেথ কেণ্ডাল (ঊষরুধনবঃয কবহফধষষ) এর সামনে অপরাধ স্বীকার করে বলেন, তিনি মানসিক রোগী নন। বরং তিনি সচেতনভাবে এসব হত্যা করেছেন। তাকে এ হত্যার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল এক দেব শক্তি, যাতে দাজ্জালের শাসন তাড়াতাড়ি আসতে পারে। (গ) কলিন পরিবার (ঈড়ষষরহং ঋধসরষু)-কলিন পরিবারও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি। ইলুমিন্যাটি গ্র“পে কলিন পরিবারের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। ব্রিটেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এ পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে। (ঘ) ডু পন্ট পরিবার (উঁ চড়হঃ ঋধসরষু)-এ পরিবারটিকে বলা হয় রসায়ন শিল্পের সম্রাট। যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিবারটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রের রসায়নশিল্প দখল করে রেখেছে এ পরিবার এবং নিজেদের ইচ্ছা মতো তারা তা চালায়। এ পরিবারের ক্ষমতা অনুমানের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সারা বিশ্বের রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্য নির্ধারণ এ পরিবারের সম্মতি ছাড়া হয় না। ইলুমিন্যাটি গ্র“পে এ পরিবারের মর্যাদা বিনিয়োগকারীর মতো। (ঙ) ফ্রিম্যান পরিবার (ঋৎববসধহ ঋধসরষু)-এ পরিবার যুক্তরাষ্ট্র ও পুরো বিশ্বে মানবাধিকারের জন্য সোচ্চার। এ পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা করে ইলুমিন্যাটি গ্র“পের ড্রাগ মাফিয়া। পুরো বিশ্বের সিভিল সোসাইটি এ অর্থেই পরিচালিত হয়। (চ) কেনেডি পরিবার (কবহহবফু ঋধসরষু)-যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এ পরিবারের ভূমিকা ও অবদান কারো অজানা নয়। জন এফ কেনেডিকে মেরে ফেলা হয়েছিল এ জন্য যে, তিনি ইলুমিন্যাটি গ্র“পের মৌলিক কর্মসূচি থেকে সরে গিয়ে ছিলেন এবং ইহুদি আধিপত্য মেনে নিতে রাজি হননি। (ছ) লি পরিবার (খবব ঋধসরষু) চীনের লি পরিবারও এই গোপন দাজ্জালি সংগঠনের অংশ। চীনের অর্থনীতিতে লি পরিবারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। চীনের লি পরিবার ও হংকংয়ের প্রভাবশালী লি পরিবার ইলুমিন্যাটি সংগঠনের গোপন পরিবারগুলোর অন্তর্ভুক্ত। চীনের অর্থনীতিতে লি পরিবারের ভূমিকা ও অবদান সবার জানা। (জ) ওনাসিস পরিবার (ঙহধংরং ঋধসরষু) এ পরিবারে রয়েছে দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীরা। তারা তাদের শয়তানি জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে বিশ্বকে অস্থির করে রাখেন। কিছু সংখ্যক গবেষকের মতে ওনাসিস পবিবারের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ব বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। কেননা তাকে এখনো দর্শন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয় এবং তার বক্তব্যের ওপর পিএইচডি করানো হয় যাতে বিশ্ব ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিতে সীমাবদ্ধ থাকে এবং দাজ্জালের আগমন হলে বুদ্ধিবৃত্তির সিদ্ধান্তে তার কাছে বায়আত হয়। বর্তমানে এ পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী পরিবার। এটি মূলতঃ গ্রীক পরিবার এবং এ পরিবারের সদস্যদের নাম রাখা হয় প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লাটো ও অ্যারিস্টেটলের নামে। (ঝ) রকফেলার পরিবার (জড়পশভবষষবৎ ঋধসরষু)-ইলুমিন্যাটি গ্র“পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবার এটি। বর্তমানে এ পরিবারের প্রায় ১৯০ জন সদস্য দাজ্জালি পরিকল্পনার সমর্থনে কাজ করছে। রকফেলার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারক। উপরে উল্লিখিত গোপন সংস্থারও অংশ এ পরিবার। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে যে যুদ্ধ চালাচ্ছে, তাও রকফেলারের পরিকল্পনার অংশ। (ঞ) রোথশিল্ড পরিবার (জড়ঃযপযরষফ ঋধসরষু)-সারা বিশ্বে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তক মনে করা হয় রোথশিল্ড পরিবারকে। দাজ্জালি পরিকল্পনা জোরদার করতে ও ইসরাইলকে গ্লোবাল ভিলেজের কাউন্সিলর করার ব্যাপারে এ পরিবারের অবদান ঐতিহাসিক। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। (ট) রাসেল পরিবার (জঁংংবষ ঋধসরষু) জাদুটোনার জন্য প্রসিদ্ধ এ পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রের কালো জাদু ও দাজ্জালের আগমনের জন্য প্রস্তুতির ব্যাপারে রাসেল পরিবার মৌলিক ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রে এ কাজ করা হয় গোপনে। (ঠ) ভ্যান ডিয়ুন পরিবার (ঠধহ উুঁহ ঋধসরষু)-গোপন পরিবারগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্পদশালী পরিবার হিসেবে পরিচিত। এ পরিবারের পূর্বপুরুষরা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন এ পরিবারের শতাধিক প্রকল্প সচল রয়েছে। চকলেট শিল্পের ওপর এ পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্য। ইউরোপের রাজ পরিবারের সাথে এ পরিবারের গোপন ও জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। (ড) মেরোভিনজিয়ান পরিবার (গবৎড়ারহমরধহ ঋধসরষু)-ইউরোপের পুরো রাজপরিবার এই পরিবারের আওতাভুক্ত। খৃস্টপূর্ব পাঁচশ বছর থেকে এ পরিবার চলে আসছে এবং বিভিন্ন নাম ও পদ্ধতিতে ইউরোপ শাসন করে আসছে। এটি ইলুমিন্যাটি গ্র“পের রাজপরিবার এবং সেজন্য পরিবারটিকে সম্মানে নজরে দেখা হয়। এখানে ইলুমিন্যাটি গ্র“পের ১৩ টি পরিবারের কিছুটা পরিচয় তুলে ধরা হলো। তারা আধ্যাত্মিক ও ভাবধারাগত ভিত্তির ওপর কাজ করছে। আর এসব পরিবারেরই গঠন করা বিল্ডারবার্গ বা সিএফসি বা টিএলসি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। ০৫. স্কাল অ্যান্ড বোনস (ঝশঁষষ ইড়হবং)-গোপন এই সংস্থাটি সারা বিশ্বকে একই সমাজে পরিণত করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে। এ সংস্থার নেতৃত্বে রয়েছে বুশ পরিবার। ১৯৬৩ সালে স্কাল অ্যান্ড বোনস ও সিআইএ একত্রিত হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডিকে হত্যা করিয়েছিল। কারণ জনএফ কেনেডি নতুন বিশ্বব্যবস্থা কর্মসূচি থেকে সরে গিয়েছিলেন। ০৬. ফ্রিম্যাসন (ঋৎববসধংড়হ) ইন্টারনেটে ফ্রিম্যাসন সম্পর্কে অনেক কিছুই রয়েছে। ফ্রিম্যাসন একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন হিসেবে পরিচিতি। বিশ্বের সব এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনের নামে সক্রিয় দাজ্জালি সংগঠনগুলোর পিছনে কাজ করছে ফ্রিম্যাসন। এ সংগঠনের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্ট ও ইহুদি পুঁজিপতি। তারা দাজ্জালি ভাবধারা এনজিওগুলোর মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে বিস্তার ঘটাচ্ছে। ০৭. ফেডারেল রিজার্ভ (ঋবফবৎধষ জবংবৎাব)-এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্দয় ও বিপদজনক সংস্থা। এখানকার সিদ্ধান্তগুলো জানেন শুধু ব্যাংকার, কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক ও আন্তর্জাতিক পুঁজিপতিরা। মার্কিন নাগরিকদের ওপর নীতি আকারে চাপিয়ে দেয়া হয় এই এলিট শ্রেণির নির্দেশ। ০৮. বোহেমিয়ান (ইড়যবসরধহ)-এই গোপন ক্লাবের ভিত্তি স্থাপিত হয় ১৮৭২ সালে। মার্কিন সাংবাদিকরা এ সংগঠনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এখন এ সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের বড় বড় পুঁজিপতি, সঙ্গীতশিল্পী ও মিডিয়া আইকন। এ সংগঠনের গোপন কার্যক্রমও রয়েছে, তা হলো পেচার উপাসনা। সব সদস্য মাঝরাতে উঠে পেচার উপাসনা করে এবং দাজ্জালি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থনা করে। বোহেমিয়ান ক্লাব যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি গোপন সংগঠন। ০৯. ব্লাক নবিলিটি (ইষধপশ ঘড়নরষরঃু)-এটি ইউরোপ ও আমেরিকার অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি সংগঠন। তারা বলেন, প্রকৃত সত্য কেবল তারাই জানে এবং তা রক্ষার দায়িত্বও তাদেরই। এই পরিবার ও সংগঠনে রয়েছে ইউরোপের ধর্মীয় পরিবারগুলো। ১০. ভ্যাটিকান (ঠধঃরপধহ)-খৃস্টানদের ধর্মীয় কেন্দ্র এখন গোপন সংস্থাগুলোর দখলে। পোপ তাÑই বিবৃতি দেন যা গোপন সংগঠনগুলো বলে দেয়। কেননা দ্য ব্লাক নবিলিটির আশীর্বাদ ছাড়া ভ্যাটিক্যানে কেউ পোপ হতে পারেন না। ১১. উইকা (ডরপপধ)-এটি একটি অত্যন্ত রহস্যময় সংগঠন। শুধু সদস্যদের দ্বারাই এ সংগঠনের পরিচয় পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে এনজিও, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ইন্টারনেট ওয়েবসাইট ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা কার্যক্রম চালায়। তারা স্রষ্টার বিশ্বাস করে না, বুদ্ধিবৃত্তিকে চূড়ান্ত বিচারক মনে করে। ১২. দ্যা রাউন্ডটেবল ( ঞযব জড়ঁহফঃধনষব)-এ গোপন সংগঠনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এদের উদ্দেশ্য বিশ্বে অস্থিরতার নীতি চালু করা। বিশ্বকে অস্থিতিশীল করা তারপর নিজেরাই তার সমাধান বলে দেয়া তাদের কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে প্রথমে অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করা তারপর ঋণের মাধ্যমে তা সমাধান করা তাদের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ১৩. ম্যানেস্টিক টুয়েলভ (গধলবংঃরপ ঞবিষাব)-বিজ্ঞানী, সেনা কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি গোপন সংগঠনের সাঙ্কেতিক নাম এটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান সংগঠনটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখন এটির অস্থিত্ব নেই। দাজ্জালি ব্যবস্থা বা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকসমূহ চি˝িত করা এ সংগঠনের কাজ ছিল। এ সব বড় বড় গোপন সংগঠন ছাড়াও আরো অনেক গোপন সংগঠন রয়েছে, যারা বিশ্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সেগুলোর নামও এখানে উল্লেখ করা হলো। ০১. ক্লাব অব রোম ( ঈষঁন ড়ভ জড়সব) ০২. দ্য কমিটি অব থ্রি হানড্রেড ( ঞযব ঈড়সসরঃঃবব ড়ভ ৩০০) এ কমিটির কাজ অর্থ, বীমা, মাদক ব্যবসা, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্প ও ধর্ম নিয়ন্ত্রণে রাখা। ০৩. ফিলোসফারস অব ফিয়ার (চযরষড়ংড়ঢ়যবৎং ড়ভ ঋবধৎ) ০৪. দ্য গ্র“প অব এইচ (ঞযব এৎড়ঁঢ় ড়ভ ঐ). ০৫. রোডস স্কলার প্রগ্রাম (জযড়ফড়ং ঝপযড়ষধৎং চৎড়মৎধসসব) ০৬. ব্লাক লজ (ইষধপশ খড়ফমব) ০৭. অ্যাসপিন ইনস্টিটিউট (অংঢ়রহ ওহংঃরঃঁঃব) ০৮. নাইটস অব মাল্টা (ঘরমযঃং ড়ভ গধষঃধ) ০৯. ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্টস (ডড়ৎষফ ঋবফবৎধষরংঃং) ১০. দ্য সার্কেল অব ইনিশিয়েটস (ঞযব ঈরৎপষব ড়ভ ওহরঃরধঃবং) ১১. নাইন আননোন ম্যান (ঘরহব ঁহশহড়হি সধহ) ১২. লুসিস ট্রাস্ট (খঁপরং ঞৎঁংঃ) ১৩. টেভিস্টিক ইনস্টিটিউট (ঞধারংঃরপ ওহংঃরঃঁঃব) ১৪. ব্রিটিশ কোয়ার্টার করোনাটি (ইৎরঃরংয ছঁধৎঃবৎ ঈড়ৎড়হধঃর) ১৫. মুমা গ্র“প (গঁসসধ এৎড়ঁঢ়) ১৬. নাসি প্রিন্সেসা (ঘধংর চৎরহপবংং) ১৭. মিলনার গ্র“প ( গরষহবৎ এৎড়ঁঢ়) ১৮. ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডড়ৎষফ ঊপড়হড়সরপ ঋড়ৎঁস) ১৯. ঔপেস ডি (ঙঢ়বং উবর) ২০. হেরামিটিক অর্ডার অব গোল্ডেন ডাউন (ঐবৎধসরঃরপ ঙৎফবৎ ড়ভ এড়ষফবহ উড়হি) ২১. রোজিক্রুশিয়ানস (জড়ংরপৎঁপরধহং) ২২. নাইটস অব দ্য গার্টার (ঘরমযঃং ড়ভ ঃযব এধৎঃবৎ) ২৩. দ্য প্রায়োরি জায়ন (ঞযব চৎরড়ৎু তরড়হ) ২৪. প্রিন্স চার্লস অ্যান্ড দ্যা ব্লাক নোবিলিটি অব ইউরোপ (চৎরহপব ঈযধৎষবং ধহফ ঃযব ইষধপশ ঘড়নরষরঃু ড়ভ ঊঁৎড়ঢ়ব) ২৫. দ্য থুলি সোসাইটি (ঞযব ঞযঁষর ঝড়পরবঃু) ২৬. থিয়োসফিকাল সোসাইটি (ঞযবড়ংড়ঢ়যরপধষ ঝড়পরবঃু) ২৭. দ্য উইথেজ লিগ যার পাবলিক অ্যাবেয়ারনেস (ঞযব ডরঃযবং খবধমঁব ভড়ৎ চঁনষরপ অধিৎবহবংং) ২৮. দ্য গার্ডিয়ান্স (ঞযব এঁধৎফরধহং) ২৯. কী ফার্টারনিটি (কবু ঋবৎঃবৎহরঃু) ৩০. ব্রাদারহুড অব øেক (ইৎড়ঃযবযড়ড়ফ ড়ভ ঝহধশব) এসব গোপন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করলে এবং তাদের অশুভ পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য জানলে পাঠকদের পশম খাড়া হয়ে উঠবে। সারা বিশ্ব গ্রাস করে রেখেছে এসব গোপন সংগঠন। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা সাত শ কোটি পার হয়ে গেছে। ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, সাত শ কোটি মানুষের ওপর কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের ইচ্ছামত আইন ও নিয়ম চাপিয়ে দিচ্ছে। এসব আইন কার্যকর করার জন্য ফ্রন্টম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের শোচনীয় অবস্থা হওয়ার পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। দাজ্জালি ব্যবস্থা চালুর পথে খৃস্টধর্ম ও অন্যান্য ধর্ম বালুর বাধের মতো প্রমাণিত হয়েছে। কেননা ইউরোপ আইন কানুন ও দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের প্রভাব দূর করেছে। মানবতাবাদের ব্যবস্থা চালু করেছে। মানবতাবাদের শ্লোগান দিয়ে নেপথ্যে কী খেলা চলছে তা অনুমান করাও কঠিন। পরিহাসের বিষয় এই যে, মানবতাবাদ যেকোনো ধর্মের একটি ক্ষুদ্র দিক। এটিকে ধর্মের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানো হচ্ছে, যা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়। তৃতীয় বিশ্বের জনগণের ওপর মিডিয়ার সাহায্যে প্রতিদিন হামলা চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণায় জনসাধারণের মনমস্তিষ্ক দখল করে রাখা হয়েছে। মিডিয়ার উদ্দেশ্য পুরো বিশ্বে অনাচার ও বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ধর্ম থাকলে নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য মিডিয়া ও তথাকথিত মাবনাধিকার সংগঠনগুলো দাজ্জালি দর্শনকে সফলতার ভিত্তি আর ধর্মকে সেকেলে ও অকেজো প্রমাণ করার জন্য প্রচারণা চালায়। ইবলিসি ও দাজ্জালি ব্যবস্থার মৌলিক চিন্তাধারা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। এজন্য বিশ্বের বড় বড় গোপন সংগঠন মাবনাধিকারের নামে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এই দাজ্জালি ব্যবস্থার সামনে একমাত্র প্রতিবন্ধক রয়েছে ইসলাম ধর্ম। এ জন্যই মুসলিম দেশগুলোতে এখন এত অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। মুসলমানদেরকে ভিতর থেকে দুর্বল করে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন অনেক আগেই দেখা হয়েছে। এখন তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
‘বিল্ডারবার্গ’ নেপথ্যের বিশ্ব প্রশাসন
মাওলানা লিয়াকত আলী
মার্চ'১৪ গত এক শতাব্দী ধরে বিশ্বে যেসব অস্বাভাবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তার পিছনে সক্রিয় রয়েছে এক অশুভ চিন্তা। সেই অশুভ চিন্তা হয়ত প্রথমে শয়তানি চরিত্রের কোনো ব্যক্তির উদ্ভাবনা ছিল। কিন্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে একই চিন্তার ব্যক্তিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি দর্শন তৈরি করে। সাহিত্যের ভাষায় এটাকে বলা হয় ঝপযড়ড়ষ ড়ভ ঃযড়ঁমযঃং বা মাকতাবে ফিকির বা চিন্তা গোষ্ঠী। বিশ্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে পৌঁছানোর জন্য অবশ্যই বড় ধরনের পরিকল্পনা করতে হয়েছে। নইলে এটা কিভাবে সম্ভব যে, বিভিন্ন ধর্ম, পৃথক সংস্কৃতি, ভিন্ন ভিন্ন রীতিপ্রথা ও আইন অনুযায়ী পরিচালিত জাতিসমূহ বা রাষ্ট্রসমূহ কোনো বিরোধ ছাড়াই একই এজেন্ডা বাস্তবায়নে ততপর হয়? যদি এসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ অভিন্ন হয়, তাহলে এমনটি বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এ সবের পরিচালনাকারী নেপথ্যের শক্তি অবশ্যই অভিন্ন। সেই শক্তির হাতেই এসবের লাগাম ধরা রয়েছে। বিল্ডারবার্গ গ্র“প এমন এক অশুভ শক্তির নাম, যার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বর্তমানের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অধিনায়ক। এ গোষ্ঠী সম্পর্কে বেশি মানুষ অবহিত নয়। কেননা এ গোষ্ঠীর সম্মেলন ও কার্যক্রমের দলিল সবসময় গোপন রাখা হয়। কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যে কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন-ই ঘটে, তার পিছনে সক্রিয় থাকে এই গোষ্ঠী। এই ক্লাব বা গ্র“প গঠনের চিন্তা প্রথমে এসেছিল জোসেফ রেটিঙ্গার নামে এক ইহুদির মাথায়। তিনি ১৯১১ সালে পোল্যান্ড থেকে বৃটেনে চলে আসেন এবং এখানে তিরিশ বছর ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোসেফ রেটিঙ্গার পুরো ইউরোপকে একটি ব্লক বানানোর ধ্বনি তুললেন। তার মৌলিক চিন্তা এই যে, পুরো ইউরোপে একক প্রশাসন হওয়া উচিত। তার চিন্তা ছিল, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলেও কমপক্ষে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোকে একত্রিত করে একটি ইউনিয়ন গঠন করা যেতে পারে। জোসেফ রেটিঙ্গার ইউরোপকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও আধিপত্য সম্পর্কে সাবধান করতে লাগলেন। তিনি বললেন, সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করতে হলে ইউরোপকে একতাবদ্ধ হতে হবে। ইউরোপে ক্রমবর্ধমান মার্কিনবিরোধী মনোভাব লক্ষ রেখে জোসেফ রেটিঙ্গার ১৯৫২ সালে হল্যান্ডের যুবরাজ বার্নহার্ড ও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী পলওয়ের ডিল্যান্ডকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সাহায্য করা তাদের কর্তব্য। এরপর এ দুই রাষ্ট্রনায়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে ইউরোপের বড় বড় রাজনীতিক ও পুঁজিপতি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও ব্যাংকারদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের জন্য একটি প্লাটফর্মের ব্যবস্থা করা, যেখানে তারা সমবেত হবেন এবং ভবিষ্যতের সমস্যাবলীর ব্যাপারে সম্মিলিত কর্মসূচি বানাতে পারবেন। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ২৯ মে ১৯৫৪ হল্যান্ডের নামকরা হোটেল বিল্ডারবার্গে সমবেত হন। তিন দিন ধরে সম্মেলন চলে। প্রথম সম্মেলনে এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিবছর এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিল্ডারবার্গ হোটেলে অনুষ্ঠিত প্রথম সফল সম্মেলনের প্রতি লক্ষ রেখে এ সংগঠনের নাম রাখা হয় বিল্ডারবার্গ গ্র“প। সম্মলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে এক সঙ্গে বসার সুযোগ করে দেয়া হয়, যাতে তারা ভবিষ্যতের কর্মসূচি একটি এজেন্ডা অনুযায়ী নির্ধারণ করতে পারেন। প্রথম বা দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের পর সিদ্ধান্ত হয়, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় একশ অত্যন্ত প্রভাবশালী পুঁজিপতি, শিল্পপতি, মিডিয়া মালিক, রাজনীতিক, নীতিনির্ধারক ও ব্যাংকারকে আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তাদের বৈঠকের কথা গোপন রাখা হবে। বড় বড় মিডিয়া গ্র“পের মালিককে আমন্ত্রণ জানানো এবং তাদেরকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সদস্য বানানোর উদ্দেশ্য ছিল, এ গ্র“পের সম্মেলনের কার্যক্রম যেন কিছুতেই প্রকাশ না পায়। কোনো মিডিয়া যদি এ ক্লাবের আইন ভঙ্গ করে, তাহলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে এবং দ্বিতীয়বার তাকে কোনো সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। বিশ্লেষকদের মতে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের কার্যক্রম গোপন রাখার উদ্দেশ্য শুধু এই যে, সারা বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যেকোনো পরিকল্পনাই নেয়া হয়, তা বাস্তবায়নের আগে যেন প্রকাশ না পায়। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই গোপন সংস্থার অস্বাভাবিক প্রভাব ও ভূমিকা অনুমান করা যায় কানাডায় অনুষ্ঠিত ৮ জুন ২০০৬ সালের সম্মেলন থেকে। এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কানাডাসহ সারা বিশ্বের বড় বড় পুঁজিপতি ও তেল শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে। ২০০৬ সালের এই সম্মেলনে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ইরাকি রাজনীতিক আহমদ ছালাবি, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, রিচার্ড হলব্র“ক, প্রেসিডেন্ট বুশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রিচার্ড পার্ল, হল্যান্ডের রানী বীট্রিক্স ও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পুঁিজপতি ডেভিড রকফেলার। এই গোপন সম্মলনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানী সঙ্কট সৃষ্টির পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সঙ্কট সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সম্মেলনের কার্যক্রম গোপন ছিল। প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক জেমস থাকার কয়েক দশক ধরে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সমালোচক। তিনিই এ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ফাঁস করে দেন। জেমস থাকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৬ এ বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলন শেষ হওয়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই বিস্ময়কর গতিতে তেলের দাম বাড়তে থাকে। অর্থাত প্রতি ব্যারেল চল্লিশ ডলার থেকে অল্প দিনের মধ্যে ৭০ ডলার হয়ে যায়। তেলের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল, যেসব দেশ বিল্ডারবার্গ গ্র“পের এজেন্ডার পরিপন্থী কাজ করত, সেসব দেশে সরকারের পতন ঘটানো। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের শক্তি ও প্রভাব এ থেকে অনুমান করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কোনো সরকার প্রধান এ গ্র“পের অনুমোদন ছাড়া হতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটেনের প্রায় সব প্রধানমন্ত্রী বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক থিরি মেইসানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী বিল্ডারবার্গ গ্র“প গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি পুঁজিপতি ও নীতি নির্ধারকরা। এই গোপন সংস্থা গঠনের ব্যাপারটি যেমন দীর্ঘদিন গোপন ছিল, তেমনি ছিল এটার কার্যক্রম। থিরি মেইসানের মতে বিল্ডারবার্গ গ্র“প প্রকৃতপক্ষে ন্যাটোর সৃষ্টি। এ গ্র“পের যেসব গোপন সিদ্ধান্ত হয়, তা হুবহু বাস্তবায়ন করে ন্যাটো। যেন নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এটাই ছিল উদ্দেশ্য। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু করে প্রতি বছর সারা বিশ্বের শতাধিক অত্যন্ত ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গোপনে সমবেত করে বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নীতি প্রণয়ন করা হয়। এ গ্র“পের কার্যক্রমের দলিলপত্র কখনোই প্রকাশ করা হয় না। বিল্ডারবার্গ সর্ম্পকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আগ্রহী হতে শুরু করেন। কেননা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার নেপথ্যে বাস্তবতাসমূহ জানার জন্য সাংবাদিকরা যখন গবেষণা শুরু করেন, তখন তার সূত্রপরম্পরা গিয়ে ঠেকে বিল্ডারবার্গ পর্যন্ত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরই সারা বিশ্বের বিশ্লেষকরা এটাকে বিল্ডারবার্গের সাফল্য ও নতুন বিশ্বব্যবস্থার দিকে প্রথম সফল পদক্ষেপ সাব্যস্ত করেন। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের অপকর্ম সম্পর্কে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো কয়েকবার সোচ্চার হয়েছিলেন। কিন্তু মিডিয়ার মালিকরা যেহেতু এ গ্র“পের সক্রিয় সদস্য, এ জন্য তারা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কথা কখনো জনসাধারণকে জানতে দেননি। থিরি মেইসান একমাত্র সাংবাদিক, যিনি বিল্ডারবার্গ গ্র“পের গোপন কার্যাবলী ও দলিলপত্র অবহিত হন। তার কাছে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত এই ১৩ বছরের কার্যক্রম ও দলিলপত্র রয়েছে। তাছাড়া তিনি এ গ্র“পের কয়েকজন সদস্যের সাক্ষাতকার নেন। এভাবে তিনি বিল্ডারবার্গ গ্র“পের ক্ষমতা ও প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারেন এবং বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত অসাধারণ পরিবর্তনের পিছনে আসল কারণ জানা তার পক্ষে সহজ হয়। ১৯৫৪ সালে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, এতে ১২টি দেশের ৭০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি অংশ নেন। ২৯ মে শুরু হয়ে ৩১ মে পর্যন্ত তিন দিন ধরে সম্মেলন চলে। প্রথম সম্মেলনে আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের বাছাইকরা ব্যক্তিবর্গকে দাওয়াত দেয়ার জন্য যে চিঠি লেখা হয়, তাতে হল্যান্ডের যুবরাজ বার্নহার্ডের সই ছিল। তাতে লেখা হয় I earnestly request your presence at the informal international conference to be held in the Netherlands in late May. This conference wishes to explore a number of issues of great importance for western civilisation and is intended to stimulate mutual understanding and goodwill through a free exchange of views. অর্থাত আমি মে মাসের শেষ দিকে হল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় অপ্রচলিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আপনার উপস্থিতির অনুরোধ করছি। এই সম্মেলন পশ্চিমা সভ্যতার ব্যাপারে কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ফুটিয়ে তুলতে চায় এবং এ সম্মেলনে স্বাধীন মত বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা ও শুভেচ্ছা জোরদার করা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। দাওয়াত নামায় মূলপাঠ ছিল এই। হল্যান্ডের যুবরাজের দস্তখতে ইউরোপ ও আমেরিকার ১১ টি দেশের ৭০ জন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে তা পাঠানো হয়েছিল। প্রথম সম্মেলনে মোট ছয়টি অধিবেশন হয়। অধিবেশন ছিল তিন ঘণ্টা করে। হল্যান্ডের যুবরাজ যেহেতু আগে নাজি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এ জন্য বিশ্লেষকরা বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনকে কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর বলে মন্তব্য করেন। এই সম্মেলনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমত ইউরোপকে পশ্চিমা বাণিজ্য অঞ্চল করা। দ্বিতীয়ত ইউরোপীয়ান ডিফেন্স কম্যুনিটি গঠন করা। এ সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ব্রিটেনের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বেলজিয়ামের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পল ওয়েন ডিল্যান্ড। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ইউরোপীয়ান ডিফেন্স কম্যুনিটি গঠনের জন্য হল্যান্ড ও ব্রিটেনের রাজ পরিবার অর্থ সহায়তা দেবে। সম্মেলনের পরেই বিশ্লেষকরা বলতে শুরু করেছিলেন, ইউরোপীয় ডিফেন্স কম্যুনিটি গঠনের জন্য নয়, বরং øায়ু যুদ্ধের জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার পুঁজিপতি ও প্রভাবশালীদের ব্যবহার করতেই এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে হল্যান্ডের যুবরাজ বার্নহার্ডকে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়। এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্র্ণ আরেক ব্যক্তি ছিলেন জন এস কোলম্যান । তিনি তখনো মার্কিন চেম্বার অব কমার্স এর চেয়ারম্যান ছিলেন না। কিন্তু তিনি আগে থেকে বা সিসিএনটিপি গঠন করে রেখেছিলেন। কোলম্যানের মতে পুরোপুরি শুল্কমুক্ত বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিশতে সাহায্য করবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে। তাছাড়া ইউরোপীয়ান ডিফেন্স কমিটি গঠন করা হচ্ছে ন্যাটোকে শক্তিশালী করার জন্য। এতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হবে। বিশ্লেষকদের মতে সিসিএনপিটি ছিল নামমাত্র প্রতিষ্ঠান। এটা ছিল হোয়াইট হাউসে যুদ্ধবিষয়ক মনস্তত্ত্বের বিশেষজ্ঞ চার্লস ডি জ্যাকসনের মস্তিষ্কের ফসল। এসব গোপন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক গোয়েন্দা কমান্ডার উইলিয়াম জে। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের প্রথম সম্মেলনেই ন্যাটোকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্ধক রাখা হয়। এ সম্মেলনে পল ওয়েন ডিল্যান্ডকে ইউরোপীয়ান ডিফেন্স কম্যুনিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিল্ডারবার্গ গ্র“প গঠনের পিছনে কাজ করছিল জোসেফ রেটিঙ্গারের পরিকল্পনা। এ সম্মেলন অনুষ্ঠানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ন্যাটো। জোসেফ রেটিঙ্গার, কোলম্যান ও ওয়েন ডিল্যান্ড কাজ করেন ফ্রন্টম্যান হিসেবে। বিল্ডারবার্গ গ্র“প গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ন্যাটোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সারা বিশ্বে একক শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং ন্যাটোকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করা। এ গ্র“পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বের অর্থনীতি গুটিকয়েক মানুষের হাতে দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নেয়ানো। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের কোনো সম্মেলনেরই কার্যক্রমের রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশকে দেয়া হয় না। বরং সম্মেলনের নথিপত্র শুধু ন্যাটোকেই সরবরাহ করা হয়। ১৯৫৪ এর প্রথম সম্মেলনে ১০ জন বক্তৃতা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ফ্রান্স ও ইতালীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী, øায়ু যুদ্ধের মার্শাল প্লানের তিন জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ব্যাংকার। থেরিম্যাসন ও প্রাপ্ত নথিপত্র অনুযায়ী প্রথম অধিবেশনের ৭০ জন সদস্যের মধ্যে ২০ জন পুরো কার্যক্রমের কিছুটা জানতেন। অবশিষ্টরা ১৯৫৪ সালের সম্মেলনের কার্যক্রম সম্পর্কে একদম জানতেন না। মাত্র ১০ জন পুরোপুরি জানতেন। তারাই বক্তৃতা করেছিলেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ৭০ জন সদস্যের সবাই অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাদেরকে শুধু নিজ নিজ দেশের নীতি পাল্টাতে ও ন্যাটোকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথা বলানো হয়, যাতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা চালু করা যায় এবং ন্যাটোকে নতুন বিশ্বব্যবস্থার রক্ষক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের দ্বিতীয় সম্মেলন হয় ১৮ মার্চ ফ্রান্সের বারবিজোনে। ওই সম্মেলনে বিল্ডারবার্গ গ্র“পকে নিয়মতান্ত্রিক সংস্থার রূপ দেয়া হয় এবং হল্যান্ডের যুবরাজের পরিবর্তে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এলেক ডগলাস হোম (অষবপ উড়হমষধং ঐড়সব) কে এ সংস্থার প্রধান বানানো হয়। বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত বিল্ডারবার্গ গ্র“পের কাজ চালাতেন দুজন সেক্রেটারী জেনারেল। একজন ইউরোপ ও কানাডা থেকে। অন্যজন হতেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কিন্তু ১৯৯৯ থেকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পে কাজ করছেন একজন সেক্রেটারী জেনারেল। সংস্থার একটি বিশেষত্ব এই যে, প্রতি বছর সম্মেলন হলেও এবং তাতে বিভিন্ন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সম্মেলনের আয়োজক ও ব্যবস্থাপক থাকেন প্রথম সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। বর্তমানে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনে ১২০ জন করে অতিথিকে দাওয়াত দেয়া হয়। এদের মধ্যে এক তৃতীয়বাংশ থাকে শীর্ষস্থানীয় পদের কর্মকর্তা। প্রভাব ও কর্তৃত্ব অনুযায়ী তাদের নির্বাচন করা হয়। তাদের কোর গ্র“প বা বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো ০১. জোসেফ অ্যাকারম্যান সুইস ব্যাংকার। উবঁঃংপযব ব্যাংকের চেয়ারম্যান। ০২. রজার সি আল্টম্যান মার্কিন ব্যাংকার। হিলারি ক্লিলটন ও জন কেরির উপদেষ্টা ছিলেন। এখন তিনি এর চেয়ারম্যান। ০৩. ফ্রান্সিসকো পিন্টপ পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পর্তুগালের সবচেয়ে বড় মিডিয়া গ্র“প ০৪. ফ্রান বার্নার ইতালীর ব্যাংকার। বর্তমানে এর ডাইরেক্টর। ০৫. হেনরি ডি ক্যাস্ট্রিজ (ঐবহৎর ফব ঈধংঃৎরবং) ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ইন্সুরেন্স কোম্পানী অঢঅ এর প্রধান নির্বাহী। ০৬. জুয়ান লুইস কেবরিয়ান (ঔঁধহ খঁরপং ঈবনৎরধহ) স্পেনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী মিডিয়া গ্র“প চৎরংধর ডাইরেক্টর। ০৭. ডব্লিউ এডমন্ড ক্লার্ক (ড ঊফসড়হফ ঈষধৎশ) কানাডার সুপরিচিত ব্যাংকার এবং ঞড়ৎড়হঃড় উসরহরড়হ ইধহশএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ০৮. কেনেথ ক্লার্ক (কবহহবঃয ঈষধৎশব) ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানীর সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক বিচারমন্ত্রী এবং ইউরোপীয়ান মুভমেন্ড এর ভাইস চেয়ারম্যান। ০৯. জর্জ এ ডেভিড (এবড়ৎমব অ উধারফ) আন্তর্জাতিক বেভারেজ কোম্পানী কোকাকোলার প্রধান নির্বাহী (ঈঊঙ)। ১০. এটিনি ডেভিগনন (ঊঃরবহহব উধারমহড়হ) বেলজিয়ামের নামকরা পুঁজিপতি, ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে ঝঁবু ঞৎধপঃবনবষ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। এমন বিশ্বের অতীব ক্ষমতাধর ৩২ জন সদস্য তাদের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস সদস্য। এঁরা বিল্ডারবার্গ গ্র“পের নিছক ডাইরেক্টর বা পরিচালক, কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন নন। অথচ তারা নিজ নিজ দেশে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদেরকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের কর্মসূচি হুবহু বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের মূল নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীনদের অন্যতম কয়েকজন হলেনÑ ০১. কার্ল বিল্ট (ঈধৎষ ইরষফঃ) সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বাল্টিক দেশগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন। পরে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ০২. অস্কার ব্রনার (ঙংপধৎ ইৎড়হহবৎ) অষ্ট্রিয়ার সবচেয়ে বড় দৈনিক পত্রিকা উধৎ ঝঃধহফধৎফ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ০৩. জন এলকান (ঔড়যহ ঊষশধহহ) ইতালীর অটো ইণ্ডাস্টি ঋরবঃ অঁঃড় এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তার দাদা ছিলেন বিল্ডারবার্গ গ্র“পের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার চাচা ঊফড়ৎফড় নিহত হয়েছিলেন। তদন্তে প্রকাশ পায় তার পরিবার ইসলাম (শিয়া মাজহাব) গ্রহণ করায় তাকে হত্যা করা হয়। এখন তার পরিবার ইহুদিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। ০৪. মার্টিন এস ফেল্ডস্টেন (গধৎঃরহ ঝ ঋবষফংঃবরহ) সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। এখন বারাক ওবামার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা। তাছাড়া তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। ০৫. হেনরি কিসিঞ্জার (ঐবহৎর করংংরহমবৎ) যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশিল্পে একটি পরিচিত নাম। এখন তিনি কিসিঞ্জার এসোসিয়েটসÑএর চেয়ারম্যান। এ জাতীয় প্রভাবশালী ১৫ জন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। উপরে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের গুরুত্ব থেকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রভাব সহজেই অনুমান করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিগত অর্ধ শতাব্দীর কার্যকলাপ ও ন্যাটোর তৎপরতার বিবরণ এবং পাশাপাশি বিল্ডারবার্গ গ্র“পের নথিসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে সন্দেহ থাকবে নাÑ বিল্ডারবার্গ গ্র“পের নির্দেশই পালন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের ক্ষমতা ও প্রভাব অনুমান করার জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিন্টন। প্রাথমিক বাছাইগুলোতে দুজনের মধ্যে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। হঠাৎ ৬ জুন ২০০৮ দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেলেন হিলারি ও ওবামা। মিডিয়ায় খবর প্রকাশ পেলÑ দুপ্রার্থী আলোচনার মাধ্যমে বৈরিতা অবসানের জন্য আড়ালে চলে গেছেন। আসলে তারা দুজনে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের ২০০৮ সালের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সম্মেলনের পরের দিনেই হিলারি প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকরা বলেনÑ প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্র্থিতা প্রত্যাহারের বিনিময়ে হিলারিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। পরে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়, তাদের দুজনকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনে নিয়ে গিয়েছিলেন জেমস এ জনসন। তিনি ছিলেন বারাক ওবামা ও হিলারি উভয়ের নির্বাচনী তহবিলের জোগানদাতা। কেননা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত ব্যাংকার ও পুঁজিপতি। জেমস এ জনসনের পরামর্শে ওবামা ও হিলারি একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হন। কেননা ন্যাটো আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামাকে মনোনীত করেছিল। কারণ ওবামা ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পেন্টাগণ ও সিআইএর পক্ষে কাজ করেছেন। অবশ্য ওবামার নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক তহবিল দিয়েছিল ব্রিটেনের রাজ পরিবার। যার মাধ্যমে ব্রিটেনের রাজ পরিবার ওবামার নির্বাচনী তহবিল দিয়েছিল, তিনি হলেন ব্রিটেনের একজন বিশিষ্ট পুঁজিপতি নাদমি আওচি (ঘধফযসর অঁপযর)। ২০০৯ সালে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলন হয় বেলজিয়ামে। সেখানে বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হারমান ভান অম্পুই (ঐবৎসধহ ঠধহ ঙসঢ়ুঁ) ভাষণ দেন। এ সম্মেলনের ঠিক পাঁচ দিন পরেই তাকে ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০০৯ সালের এ ঘটনার পর বিশ্লেষকরা বিল্ডারবার্গ গ্র“পকে কিংমেকার (করহমসধশবৎ) নামে আখ্যায়িত করতে থাকেন। ২০১০ সালের ৯ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের অতিথিদের তালিকা মিডিয়ায় পৌঁছে যায়। পরে তা প্রকাশ করা হয়। এ সম্মেলনে ইউরোপ ও আমেরিকা ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বেলজিয়ামের ৩, ডেনমার্কের ৩, জার্মানীর ৫, ফিনল্যান্ডের ৪, ফ্রান্সের ৬, ব্রিটেনের ৯, গ্রীসের ৪, বিশ্বের বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানী ৯, আয়ারল্যান্ডের ৩, ইতালীর ৫, কানাডার ৬, হল্যান্ডের ৬, নরওয়ের ৪, অস্ট্রিয়ার ৪, পর্তুগালের ৩, সুইডেনের ৪, সুইজারল্যান্ডের ১০, স্পেনের ৫, তুরস্কের ৪ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি এতে অংশগ্রহণ করেন। এ তালিকায় কিছু নাম উল্লেখ ছিল না। কিন্তু সূত্রগুলো স্বীকার করেছে, তারাও বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ন্যাটোর মহাসচিব রাসমোসেন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যানজেলা মার্কেল, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী জাপাতেরো, বিলগেইট ও তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তান থেকে পর্যায়ক্রমে সৈন্য প্রত্যাহারের যে নীতি ঘোষণা করেছেন, তার সঙ্গে মিল রয়েছে জুন ২০১১Ñএ বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের। বিশ্লেষকদের মতে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ও নীতিমালার অপেক্ষায় ছিলেন ওবামা। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলন শেষ হলেই ওবামা আফগানিস্তান সম্পর্কিত নীতি ঘোষণা করলেন। বিল্ডারবার্গ গ্র“প গঠনকারী জোসেফ রেটিঙ্গার ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনকারীদেরও একজন। এজন্য বিশ্লেষকদের মতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিল্ডারবার্গ গ্র“পের মন্ত্রিপরিষদ এবং ন্যাটো সামরিক বিভাগের মর্যাদা রাখে। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের ২০১১ সালের সম্মেলনে আইএমএফ বা আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিনা লগার্ডকে মনোনীত করা হয়। সুইজারল্যান্ড সম্মেলনে চীন থেকেও অতিথি আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে চীনের বিকাশমান অর্থনীতি বিবেচনায় রেখে বিল্ডারবার্গ গ্র“প চীনের গুরুত্ব স্বীকার করে এবং পাকিস্তান ও আফ্রিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক পর্যালোচনা করে তাকে এ গ্র“পে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭২ সালে জাপানকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন রকফেলর ও ব্রজনেস্কি। কিন্তু তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয়েছিল। তারপর ১৯৭৩ সালে রকফেলর ও ব্রজনেস্কি পশ্চিম ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানকে নিয়ে গঠন করেন ট্রাইলেটেরাল কমিশন। ২০০০ সালে ট্রাইলেটেরাল কমিশনকে সম্প্রসারিত করে গঠন করা হয় চধপরভরপ অংরধহ এৎড়ঁঢ়.এতে শুধু জাপান নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়, যাতে এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রকফেলর ও ব্রজনেস্কির নীতি যখন ব্যর্থ হলো, তখন বিল্ডারবার্গ নিরুপায় হয়ে চীনকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়। জন রনসন ইংল্যান্ডের সুপরিচিতি দৈনিক গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধ লেখেন। তাতে তিনি বিল্ডারবার্গ গ্র“পের স্বরূপ উন্মোচন করেন। জন রনসন বিল্ডারবার্গ গ্র“পের একাধিক প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সাক্ষাৎকার নেন। অনুসন্ধান ও সাক্ষাৎকারের পরে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বিল্ডারবার্গ প্রকৃতপক্ষে একটি নেপথ্য বিশ্বপ্রশাসন। কেননা এ গ্র“পের নীতমালাই সারা বিশ্বে বাস্তবায়িত হয়। এগুলোকে পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো কর্মতৎপর থাকে। উল্লেখ্য, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশগুলোর পদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্বের বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রথমে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সদস্য হন। তারপর তারা সরকারী পদস্থ ব্যক্তি হন। ডেভিড রকফেলর তার ৯৬ তম জন্ম বার্ষিকী পালন করেন ২০১১ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলনে। এখানে তাকে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের পোপ উপাধী দেয়া হয়। কেননা ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি এ গ্র“পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ডেভিড রকফেলার এখন থেকে ৭০ বছর আগে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় ভরার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে বিল্ডারবার্গ গ্র“প। ডেভিড রকফেলার শুধু যুক্তরাষ্ট্রে সুপরিচিত নন। বরং বিশ্বের সব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কেন্দ্রেই তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। বিল্ডারবার্গ গ্র“পই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বকে কবজা করে রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এখন এ নেপথ্য বিশ্বপ্রশাসন কী সিদ্ধান্ত জারি করবে, তা অচিরেই জানা যাবে। বিল্ডারবার্গ গ্র“প প্রতিবছর নিয়মিত সম্মেলন করে। ২০০৫ সালের মে মাসে বিল্ডারবার্গ গ্র“পের সম্মেলন হয় জার্মানীতে, জুন ২০০৬ এ কানাডায়, মে ২০০৭ এ তুরস্কে, জুন ২০০৮ এ যুক্তরাষ্ট্রে, জুন ২০০৯ এ গ্রীসে, জুন ২০১০ এ স্পেনে এবং ২০১১ সালে এ গ্র“পের বার্ষিক সম্মেলন হয়েছে সুইজারল্যান্ডে। বিল্ডারবার্গ গ্র“পের প্রতিষ্ঠাতাদের ও সদস্যদের অতীত ও বর্তমান অত্যন্ত পরিষ্কার। তাদের দেখে এমনটি বলা ভুল হবে না যে, সংগঠনটি ১৯৫৪ থেকেই ইহুদিদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, যাতে বিশ্বে শয়তানি প্রশাসন স্থায়ী রূপ নেয়।